এটা একটা বেসরকারি হাসপাতালের গল্প। কোন হাসপাতাল আমি বলব না অথবা বলতে পারব না। আমি অনেকগুলো হাসপাতালে কাজ করেছি তার কোন একটা। আমাদের ব্র্যাকিথেরাপি নামে একটা প্রসিডিওর করতে হয়। একটা মাইনর অপারেশন টাইপ। প্রোসিডিওরটা করতে মিনিট পনের লাগে কিন্তু তারপর রোগীর স্ক্যান প্ল্যানিং আর ট্রিটমেন্ট দিতে ঘন্টা খানেক থেকে ঘন্টা দেড়েক। এই হাসপাতালে দিনে তিনটে গড়ে প্রসিডিওর করতেই হয়। আমার স্বভাব আমি পরপর সবগুলো শেষ করে তবেই ব্রেক নিই। সব শেষ করতে করতে বেলে আড়াইটে তিনটে।তারপর লাঞ্চ করে বাকি কাজ। আমাকে আসিস্ট করতেন সিস্টার অঞ্জু ( নাম পরিবর্তিত), কেরালার বাসিন্দা। বয়স পঁচিশের নিচেই হবে।
কিছুদিন পর দুটো কেস শেষ হওয়ার পর অঞ্জু বলল “স্যার তিন নম্বরটা লাঞ্চ-এর পর করবেন?”
আমি বললাম “কেন? একেবেরে শেষ করেই না হয় লাঞ্চ করলেন? একঘন্টা খিদে সহ্য করতে পারবেন না?”
স্মিত হেসে কথা না বাড়িয়ে অঞ্জু তিন নম্বর পেশেন্টকে টেবিলে নিলেন।
কিছুদিন পর সকালে কেস শুরুর আগে দেখি অঞ্জুর এক কলিগ সিস্টার আমাকে দেখে একটু তির্যক হেসে অঞ্জুকে মালায়ালামে কিছু বলল। আর অঞ্জু দীর্ঘশ্বাস ফেলে করুণভাবে হাসল।
ওটি-তে ঢুকে অঞ্জুকে হেসে জিজ্ঞেস করলাম “আমাকে দেখে আপনার বন্ধু কি বলল? খুব একটা ভালো কিছু তো মনে হল না।”
বলল- “আজও তোর লাঞ্চ মিস”
আমি বলললাম “কেন? লেট বলুন, মিস কেন?”
“স্যার আমাদের ক্যান্টিন দুটোয় বন্ধ হয়।”
“ও হোঃ। আচ্ছা স্টুডেন্টস ক্যানটিনে খেয়ে নিলেই তো পারেন”
“স্যার রোজ সত্তর টাকা আমার সাধ্যের বাইরে।”
তখনও এদের মাইনে সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিল না। জিজ্ঞেস করলাম–“কিছু মনে করবেন্ না আপনাদের স্যালারি কত?”
“আট হাজার”
আট হাজার মাত্র? আমি আমার বাড়ির কাজের মাসিকে এর থেকে অনেক বেশি টাকা দিই। নিজের মুর্খতায় লজ্জিত হলাম। ধীরে ধীরে জানলাম অঞ্জুর বাবা ছোটবেলায় মারা গেছেন। ওর দুই বোন। মা সেলাই-এর কাজ করেন। ও বোনের পড়াশোনার জন্য টাকা পাঠায়। নার্সেস হোস্টেলে যা টাকা থাকা খাওয়ার জন্য অঞ্জু দেয় তার পর আর কোন টাকাই ওর হাতে থাকে না।
ভীষণ অপ্রস্তুত হলাম। কেস শেষ হওয়ার পর বললাম “চলুন স্টুডেন্টস ক্যান্টিনে যাই লাঞ্চ করতে”
অঞ্জু হেসে বলল–“না স্যার লাঞ্চ চাই না, লাঞ্চ ব্রেকটা দুটোর আগে হলেই হবে।”
বাংলা ছেড়ে চলে যাওয়ার যাঁরা নার্সদের গালি দিচ্ছেন তাঁরা এঁদের ত্যাগ আর বাঙ্গালীর অতি প্রিয় শব্দ “স্ট্রাগল আর এক্সপ্লয়টেশন”-এর ইতিহাস জানেন কি? দয়া করে গালিটা নিজেদের দিন।
ধন্যবাদ। অজানা একটি বিষয়ে আলোকপাত করলেন। এরকম আরও অনেক লেখা চাই। কলমে আগুনে র ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। আরও শান দিন
এটা একমাস আগেই পরেছিলাম, অফিসের কাজের জন্য লিখতে পারিনি। আজকের লেখাটা পরে comment করার সময় মনে হলো, সেদিনের টাও দিয়ে দিই। মনোগ্রাহী লেখা, আরও লিখুন। আমি নিয়মিত পাঠক।