বয়স ১৮৮। কলকাতা মেডিকেল কলেজ।
প্রথম পরিচয় যখন আমার বয়স ৭ বছর। বাড়িতে খেলতে গিয়ে কপাল ফেটে গেছিল। মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে গিয়ে সেলাই করা হয়েছিল। মনে আছে, অবশ করার কোন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়নি। দু’জন হাত-পা ধরেছিল আর একজন স্টিচ দিয়েছিল।উদোম চিল্লিয়েছিলাম।
পরেরবার যখন গিয়েছিলাম, তখন বয়স ১১। দাদার পায়ের ওপর দিয়ে বাস চলে গেছিল। মেজো জেঠুর জন্মদিন বলে,ও মিষ্টি আনতে গেছিল। ডাক্তার’রা বলেছিল, ডান পা বাদ দিতে হবে। কিন্তু ওর বয়স তখন ১৩ বছর বলে পা’টা রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। ওকে CB top-এ দেখতে গেছিলাম- দু’তলায় ভর্তি ছিল। সেই প্রথম আমার লিফ্টে চড়া। এখনো মনে আছে, লিফ্ট যেই চলতে শুরু করলো, ঝাঁকুনিতে ভয় পেয়ে ছোটো পিসেমশাইয়ের হাত’টা জাপটে ধরেছিলাম। তখন জানতাম না, এই লিফ্টে আরো কতোবার উঠতে হবে। যে ঘরে আমার সেলাই পড়েছিল, সেখানে আমি একদিন সেলাই করবো। যাই হোক্,মন থেকে এরপর মেডিকেল কলেজ মুছে গেল।
এরপর একদিন তার সাথে দেখা হোল টিভিতে-“কাঁচের স্বর্গ” সিনেমায়- দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না।তখন সবে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা মনে উঁকি দিচ্ছিল। এরপরে মেডিকেল কলেজ গেছিলাম, জয়েন্ট এন্ট্রান্সের রেজাল্ট বেরোনোর দিন।১৯৯১ থেকে ২০০২ অবধি কলেজই হয়ে উঠল ঘরবাড়ি। এখন যাকে নিয়ে ঘর করি,তাকেও পাওয়া এই মেডিকেল কলেজেরই দৌলতে। কলেজে হারিয়েছি অনেক কিছু – জীবনের সেরা সময়টা পার্ট, আইটেম, পরীক্ষা, MCQ নিয়েই কেটে গেলো। কিন্তু হিসেব করতে বসলে দেখা যাবে পেয়েছি অনেক বেশি। কলেজ আমাকে ডাক্তার বানিয়েছে, মানুষ তৈরি করেছে।
প্রায় ২০ বছর হোল কলেজ থেকে বেরিয়ে এসেছি, কিন্তু একদিনের জন্য কলেজকে মন থেকে বের করতে পারিনি। তাই এখনো যদি কোথাও কলেজের অচেনা সিনিয়র বা জুনিয়রের সাথে আলাপ হয়,মনে হয় আমরা একই পরিবারের কেউ – ওঃ তুইও মেডিক্যাল কলেজ, বলেই একগাল হাসি। তাই আজও মন খুলে গাই
শত কলেজ জন্মদাতা,আজব শহর কলিকাতা
তাহার মাঝে কলেজ সে এক সব গোয়ালের সেরা।
অসুখ দিয়ে তৈরী সে যে,ওষুধ দিয়ে মোড়া।
এমন কলেজ কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সব গোয়ালের সেরা সে যে মেডিকোদের ভূমি,
সে যে মাটিয়া গো তুমি।
PC : ডাঃ Ajoy Biswas
মেডিক্যাল কলেজের লাইব্রেরী।
ক্যান্টিন থেকে অনেক দূরে থাকায় ওখানে আমার খুব বেশি যাওয়া হয়ে ওঠেনি।