২২/১২/২০২২
জানিনা কী লিখবো। অনেককিছু লিখতে চেয়েও, অনেককিছু বলতে চেয়েও, আজ আর কথা সরছে না মুখে। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে ২০১৪,২০১৫,২০১৬.. মেডিক্যাল কলেজের পুরোনো ভোটগুলোর কথা..
সেই আগের রাত থেকে ডিএসএ, টিএমসিপি, এসএফআই সবাই কলেজ যেত, ফেস্টুন টাঙানো হতো নিজের নিজের। পরের দিন সকাল থেকে ক্যাম্পে বসে যাওয়া সবাই মিলে.. সকাল থেকে গান, স্লোগানে ভরে যেত কলেজ ক্যাম্পাস.. টিএমসিপির লোকজন প্রতিবার বলতো আমরা মেডিক্যাল কলেজের টিএমসিপি, আসল টিএমসিপির থেকে আলাদা, তারপর কলেজ জুড়ে টিএমসির ফেস্টুন ঝোলাতো, আর ওদের ক্যাম্পে ভোট শুরু হবার কিছুক্ষণ পর থেকেই মুখ দেখা যেত নির্মল মাজি সহ লোকাল তৃণ নেতাদের.. ওদের জোর ছিল থ্রেটে, স্লোগানের নামে দেওয়া খিস্তিতে আর জোরজুলুমে.. আর আমাদের জোর ছিল লড়াইয়ের গানে, গিটারে আর গলায়..
জীবন বেঁচে নিতে শিখছিলাম আমরা তখন। চোখে চোখ রেখে শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়াতে শিখছিলাম। নির্মল মাজির মুখের ওপর হোস্টেলের দরজা বন্ধ করে দেওয়া থেকে শুরু, তারপর কলেজের দাবী নিয়ে প্রিন্সিপালের দরজায় যাওয়া.. কলেজের অন্যান্য বন্ধুদের যখন লেকচার-এক্সামের বোঝায় পিঠ বেঁকে যাচ্ছিল, তখন আমরা ছোটোবেলা থেকে ভেতরে ঢুকে বসে থাকা বই-সিনেমা-গল্প-চরিত্ররা যে শিরদাঁড়ার পাঠ পড়িয়েছিল, তার থেকে জীবন শিখে নিচ্ছিলাম..
তারপরেও হেরে যেতাম, ভোটের রেজাল্টে। ২০-০ হতো, প্রতিবার। ২০১১ এর পরে প্রত্যেক বছর, নিয়ম করে। চারটে বছরের পাঁচটা করে ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ, একটাও আমরা জিততাম না, এমসিডিএসএ প্রতিবার ভোটের রেজাল্টে শূন্য হয়ে ফিরতো। আর তারও আগের কথা বলতে গেলে, ১৯৮৩ থেকে, মাঝেমধ্যেই টক্কর দিয়ে লড়াই করে সিট হতো, কিন্তু ইউনিয়ন পেতাম না কোনোবারই। ‘জিতে যাওয়া’ লোকজন গোটা বছর ধরে বলতো, ‘তোরা তো জানিস না, ইউনিয়ন রুমের ভেতরের দিকের ছিটকিনিটা কীভাবে বন্ধ করে’! ছিটকিনি বন্ধ করতে না জেনেও, তারপরেও কীভাবে আমরা জিতে যেতাম! জিতে যেতাম ভোটের রেজাল্টের পর তৃণমূলের চোখে চোখ রেখে নিজেদের গলার জোর অটুট রেখে, জিতে যেতাম মাথা উঁচু করে দলবেঁধে হোস্টেলে ফেরায়, জিতে যেতাম যৌথতায় আর আদর্শের প্রশ্নে। বারবার জিতে যেতাম, সমাজের কথা ঘাড় নিচু করে চোখ নামিয়ে মেনে না নেওয়াতে। এভাবেই ডিএসএ জিতে এসেছে মেডিক্যাল কলেজে, ১৯৭৭ থেকে প্রত্যেক বছর, প্রত্যেক বার।
আজ আবার জিতে গেল। মেডিক্যাল কলেজ, আর এমসিডিএসএ। মেডিক্যাল কলেজ জিতে গেল প্রতিবারের মতো, ছাত্রছাত্রীদের গণতান্ত্রিক অধিকার বুকে জাপটে ধরে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষমতায়। হোস্টেল আন্দোলন থেকে ‘আনলক এমসিকে’ থেকে নিজেদের দমে নিজেদের জন্য নিজেরা মিলে ইউনিয়ন ইলেকশন করা, মেডিক্যাল কলেজ আবার দেখিয়ে দিল, ছাত্রছাত্রীদের জন্য, অধিকারের জন্য, আমাদের জান কবুল! আর এমসিডিএসএ এর তো জেতার অভ্যাস আছেই, যতবার মেডিক্যাল কলেজ তার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে জিতে যায় শাসকের বিপরীতে দাঁড়িয়ে, ততবারই সেটা আমাদের জয় হয়ে দাঁড়ায়!
লড়াই চলছে। লড়াই চলবে। আমরা একা নই, আমরা সবাই। আমরা শুধু মেডিক্যাল নই, আমরা সব কলেজ, আমরা সব ছাত্রছাত্রী, আমরা সব মানুষ। এটা যেন কেউ ভুলে না যায়, এটা যেন আমরা না ভুলে যাই।
লং লিভ এমসিডিএসএ।
লং লিভ মেডিক্যাল কলেজ।
মার্চ অন এমসিডিএসএ।
মার্চ অন মেডিক্যাল কলেজ।
অভিনন্দন। লড়াই চালিয়ে যাও।