প্রেস রিলিজ
২২শে ডিসেম্বর, ২০২২
প্রথমেই, মেডিক্যাল কলেজের যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী এই গণতান্ত্রিক স্বচ্ছ ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করলেন, তাদের সংগ্রামী অভিনন্দন।
প্রথমত, আজকের এই ঐতিহাসিক ছাত্রসংসদ নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে মেডিক্যাল কলেজের আপামর ছাত্রছাত্রী গণতান্ত্রিক ভাবে ছাত্রছাত্রী সংসদ নির্বাচন চায়। চারটে ইয়ার এর মোট ১০০০ জন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ৭৮৮ জন অর্থাৎ ৭৯% ছাত্রছাত্রী এই গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো। অথোরিটির মধ্যে শাসক দলের যে দালালরা বলেছিলেন, এই ইউনিয়ন এর আন্দোলন ‘৫০ জনের আন্দোলন’, তাদের জন্য করুণা ছাড়া আর কিছু বরাদ্দ করতে পারছি না। আশা করি, এর পর তাদের চোখের ঠুলি সরবে এবং সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মতামত যে কতো জোরালো সেটা তাদের ‘ব্রেনওয়াশড’ মস্তিষ্কে ঢুকবে।
দ্বিতীয়ত, আজকের এই ছাত্রছাত্রী সংসদ নির্বাচন এক ঐতিহাসিকতার জন্ম দিল। যে প্রশ্নটা আপনারা সকাল থেকে বারবার করছেন যে এই নির্বাচন ‘বৈধ না অবৈধ’, তাদের বলতে চাই, যেখানে একটি কলেজের ৮০% ছাত্রছাত্রীরা গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করলো এবং গোটা প্রক্রিয়া চলল স্বচ্ছভাবে সর্বসমক্ষে লাইভ ভিডিও করে, নিরপেক্ষ জুরির ও ইলেকশন কমিটির উপস্থিতিতে, যাতে কারচুপির কোনো অবকাশ না থাকে। আমাদের প্রশ্ন হলো, এই ইউনিয়ন যদি বৈধ না হয় তাহলে বৈধ কারা? শাসকদলের সিলেক্ট করে দেওয়া দালালদের নিয়ে ইউনিয়ন গঠন হলে তবে তা বৈধ হতো? আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলছি — এই ইউনিয়ন যদি কোট আনকোট ‘বৈধ’ না হয়, তাহলে বৈধতার সংজ্ঞা বদলানো উচিত আপনাদের।
তৃতীয়ত, আপনারা সকলেই দেখেছেন সকাল থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ছাত্রছাত্রীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কোনোরকম ঝামেলা, মারামারি, উপদ্রব হয় নি, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেনি কোনো উন্নয়ন। অথচ সরকারের বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত কলেজে ছাত্র নির্বাচন নাকি সম্ভব নয় কারণ তাতে ব্যাপক গন্ডগোল হতে পারে। আজকের এই ছাত্রভোট চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো, গন্ডগোল হলে তা আসলে কারা করে??? যারা এই নির্বাচন অগণতান্ত্রিক ভাবে বাতিল করতে চেয়েছিলেন শাসকদলের পেটোয়া সেই দালাল বাহিনীই আসলে কলেজে কলেজে গন্ডগোল, মারামারি করে বেড়ায়, যাতে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মেডিকেল কলেজ আজ এই মডেলকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিল। শাসকদলের প্রভাব বর্জিত, শাসকের রাজনীতির প্রভাব বর্জিত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করে মেডিকেল দেখিয়ে দিল গণতন্ত্রের উৎসব আসলে কেমন হওয়া উচিত।
যে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেও ৬০% -এর ও কম মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, সেখানে এই নির্বাচন বুঝিয়ে দিল ছাত্রছাত্রীরা চাইলে নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে, কোনো শাসক দলের দাদা-দিদি নয়। এবং এই সাহসী পদক্ষেপ ছাত্রছাত্রীরা নিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ ও অগণতান্ত্রিক সরকারের চোখে চোখ রেখেই। আমরা চাইব আজ মেডিকেল কলেজ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল তা ছড়িয়ে পড়ুক সারা রাজ্যে। সমস্ত কলেজে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক ভাবে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হোক অবিলম্বে। অযথা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শাসক দলগুলির দাদাগিরি বন্ধ হোক।
সবশেষে, যে ২০ জন ছাত্রছাত্রী প্রতিনিধি যারা মেডিক্যাল কলেজ Student’s Union Executive Committee হিসাবে নির্বাচিত হলেন, তাঁদের অভিনন্দন।
এবং আবার বারবার বলার এটাই যে, ইউনিয়ন মানে এই ২০ জন ছাত্রছাত্রী নয়, ইউনিয়ন সব্বার। যারা আজ ভোট দিলেন এমনকি যারা দিলেন না, তাদের প্রত্যেকের দাবিদাওয়া নিয়ে এই মেডিক্যাল কলেজ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন আগামীর লড়াই চালিয়ে যাবে।
ফলতঃ এই ইউনিয়ন নির্বাচন আন্দোলনের শেষ নয়, আরও বড় আন্দোলনের শুরু। এবং, মেডিক্যাল কলেজের সমস্ত ছাত্র ছাত্রীদের বৈধ নির্বাচিত গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন এই আন্দোলনকে সামনের দিনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সংগ্রামী অভিনন্দন সহ..
মেডিকেল কলেজের সংগ্রামী ছাত্রছাত্রীরা
নির্বাচিত শ্রেণী প্রতিনিধিবৃন্দ
প্রথম বর্ষ–অয়ন মন্ডল, মানব মালি, অনন্যা মুখোপাধ্যায়, মহম্মদ আলমামুন সেখ, উতকর্ষ ভকত, শৌভিক সরকার।
দ্বিতীয় বর্ষ-রিধ ফিজা, সুজয় মল্লিক, তিথি সরকার, দেবর্ষি সাহা, সৌমিত মুখার্জী।
তৃতীয় বর্ষ-ঋতম মুখার্জী, প্রত্যুষ কিরণ সরকার, আকাশ দে, রীতব্রত রায়, দেবার্ঘ্য দে।
চতুর্থ বর্ষ-প্রভাত কুমার পাটওয়ারী, সাবিত হুসেন, অনিন্দ্যসুন্দর শতপতি, সৌম্য স্বরাজ কুইলা, সায়ন্তন মুখার্জী।