কে বলে মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু! জানেন কি, একজন মহিলার সবচেয়ে দুঃসময় পাশে দাঁড়ান একজন মহিলাই। সন্তানের জন্য আকূল মা যখন শারীরিক অক্ষমতার জন্য স্বাভাবিকভাবে মা হতে পারেন না তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন আরেকজন মহিলা। নিজের শরীরের ডিম্বাণু দিয়ে অন্যের মা হওয়ার পথ তৈরি করে দেন। অনেক সময় একাধিক মহিলাকে সাহায্য করেন তিনি। এই কাজ বেশ কষ্টসাধ্য। ডিম্বাণু তৈরির জন্য ইনজেকশন নিতে হয়, দেওয়ার সময় অজ্ঞান করা হয়। পরবর্তীকালে জটিলতা দেখা দেওয়ার আশংকাও থাকে। অনেক সময়েই যারা এই কাজ করে তাঁরা টাকা রোজগারের জন্যই করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেউ এই কাজটা করে বলেই কোনও নিঃসন্তান মা সন্তানের মুখ দেখতে পান। যদিও এই কাজ করার জন্য কোনও স্বীকৃতি পাননা।
যদিও যিনি সেই ডিম গ্রহণ করেন তার মধ্যে থাকে অনেক দ্বিধা। নিজের ডিম দিয়ে সন্তান হওয়া সম্ভব নয়, একমাত্র পথ দাতার ডিম ব্যবহার করা জানার পরেই ডাক্তারবাবুকে হাজারো প্রশ্নর সামনে পড়তে হয়? ‘ডাক্তারবাবু বাচ্চা ফরসা হবে তো’! ‘আমার স্বামীর মতো নিশ্চয়ই লম্বা হবে’? ‘আমরা দুজনেই যে পি এইচ ডি সে তো আপনি জানেন। বাচ্চা লেখাপড়ায় যাতে ভাল হয় তেমন কারোর ডিম ব্যবহার করবেন, প্লিজ’। ‘ওই মহিলা যাতে অভিজাত পরিবারের হয় মাথায় রাখবেন। না হলে আমাদের সঙ্গে ম্যাচ করবে না’।
যদিও ঘটনা হল, যাঁরা ডোনার হন তাঁদের বেশিরভাগই নিম্ন বিত্ত পরিবারের। টাকার বিনিময়ে নিজেদের ডিম বিক্রি করেন। যা দিয়ে তাঁদের সংসার চলে, ছেলেমেয়ের লেখাপড়া চালান, বাচ্চাকে বড় স্কুলে ভর্তি করার ডোনেশনের টাকা জোগাড় করে। আবার অনেকে এ কাজ করেন শখ মেটানোর জন্য, একটা স্মার্ট ফোন বা টিভি, অথবা ঘুরতে যাওয়া। এঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক ক্ষেত্রেই ফাইভ সিক্স পর্যন্ত। তাঁদের শারীরিক ও মানসিক কষ্টও কম নয়। তার নিজের জিন অন্যের শরীরে বাড়ছে অথচ তার সম্পর্কে কিছুই জানতে পারছে না। যদিও এসব কথা বেশীর ভাগেরই মাথায় আসে না, তাঁদের কাছে টাকাটাই আসল।
যাঁরা শিক্ষিত ডোনার চান তাঁদের মাথায় রাখা দরকার কোনও শিক্ষিত মহিলা অল্প কটা টাকার জন্য এই কষ্ট সহ্য করবে্ন না। যদিও ওঁদের সম্মান দেওয়া দরকার। সুযোগ পেলে ওঁরাও আপনার মতোই শিক্ষিত হতে পা্রতেন। ওঁদের সাহায্য ছাড়া অনেকেই মা হতে পারবেন না।
সরকারি নিয়মের জন্য একে অন্যকে জানতে পারে না। দাতার থেকে দেওয়া ডিম আই ভি এফের মাধ্যমে এমব্রায়ো তৈরির সময় ডিমের সংখ্যা দেখা হয়। কারণ এটা খুব জরুরি। তাছাড়া এইচ আই ভি, হেপাটাইটিস ইনফেকশন আছে কিনা, তাও দেখা হয়। আমরা চেষ্টা করি চোখের রং, গায়ের ,চুলের রং ম্যাচ করার। তবে থ্যালাসেমিয়া ছাড়া খুব বেশি জেনেটিক হিস্ট্রি দেখা হয় না। আই ভি এফ সেন্টার বাড়ার জন্য দিন দিন ডোনারের চাহিদাও বাড়ছে। তাদের কাছে আইভিএফ পদ্ধতির জন্য কাঁচামাল হল ডিম্বাণু। আর তা সরবরাহ করে ডোনাররা। নিয়ম মতে, একজন ডোনারের ২-৩ বারের বেশি ডিম দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু সহজে টাকা রোজগারের জন্য অনেকেই নিয়ম না মেনে ইচ্ছেমতো ডিম দান করছেন। ফলে কারও লাভ হচ্ছে কারও ক্ষতি।
তবুও যে মহিলারা ডিম দিচ্ছেন তাঁরা অনেকেরই স্বপ্নপূরণ করেছেন, অনেক পরিবারকে সুখী রাখছেন। এঁদের সম্মান আর ভালোবাসা প্রাপ্য।