যুদ্ধ বিরতিতে আমা হেন আদার ব্যাপারির খুব বেশি আসে যায় না। শুধু মেগা সিরিয়াল না দেখে যুদ্ধ-ভিডিও দেখছিলাম। সেটা একটু ব্যাহত হল।
মূল্যবৃদ্ধি? আমি প্রতিদিনের খাবার যোগাড় করার সংস্থান আছে এমন একজন মধ্যবিত্ত। নিজেকে বোঝাই এই তালে ডাক্তারের বলা ওজন কমানোর আদেশটা মানা যাবে আধপেটা খেয়ে।
যুদ্ধে তবে কাদের যায় আসে?
দিন এনে দিন খাওয়া লোকেরা দাম বাড়লে কী করবে ভেবে আকুল। তাদের প্রাণান্তকর যায় আসে। কী ভাবে সামলাবে,নিজেরা ভাবুক।
পাড়ার যে ছেলেটা বিএসএফের চাকরি নিয়ে সীমান্তে, তার পরিবারের যথেষ্ট যায় আসে।
আর একটা পরিবার যাদের জামাই কাশ্মীরের শালওয়ালা, কিম্বা শ্রীনগরে ‘দাদা-বৌদি’র হোটেলে বাঙালি রান্না করা লোকগুলোর যায় আসে।
এই রকমের অসংখ্য মানুষের যায় আসে। সবার নিজস্ব ইন্টারেস্ট আলাদা, বলাই বাহুল্য।
এই সব তথাকথিত ছোটোখাটো ব্যাপারে না ভেবে বরং দেশের রাজনৈতিক দলগুলি কে কী বলছে সেটা অনুধাবন করি।
কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা দলের সমর্থকেরা কেউ কেউ বেশ হতাশ। কেউ কেউ নাচার হয়ে মেনে নেওয়া। সামান্য অংশ যারা সামরিক শক্তি সম্বন্ধে সন্দিহান কিম্বা সন্দিহান না হয়েও উদ্বিগ্ন, তারা স্বস্তি পেয়েছে।
সিপিএম আর কংগ্রেস, আমি যতটা বুঝেছি, সমালোচনামূলক একধরণের স্বস্তিতে রয়েছে। বিরোধী হলে সমালোচনা করতেই হয়। এক্ষেত্রে সেটা হল, ট্রাম্প বলল আর অমনি মেনে নিল? তবে আর কীসের অস্মিতা? তা নইলে যুদ্ধ থেমেছে বেশ হয়েছে গোছের মনোভাব তাদের।
কম-রেডরা দ্বিধায়। এই বাজারে ২০ তারিখের বন্ধ্টা?
বেশি-রেডরা বলছে, চারুবাবু তো সেই কবেই বলেইছিলেন, নয়াউপনিবেশবাদের কথা। অতএব নোভোট্টু-সংগ্রাম চলছে চলবে।
শুধু, হ্যাঁ শুধু ঘেসোরা সোচ্চারে প্রতিবাদ করছে চ্যানেলে চ্যানেলে। কেন যুদ্ধ বন্ধ হবে? অ্যাঁ? কেন, কেন? কেন?
প্রচলিত চুরিগুলো দিব্যি গড়গড়িয়ে চলছিল, যুদ্ধের কভারে। মিডিয়া সত্যিমিথ্যে নতুন পুরোনো ভিডিওর কোলাজ পেশ করছিল। চুরির খবর নিয়ে কেউ উৎসাহিত না। সবাই উত্তেজিত ঝাল ঝাল আভেন ফ্রেশ যুদ্ধ নামের ভিডিও শো দেখে। এর মাঝে আবার চুরির অন্যতর ফ্রন্ট খুলে যাবার চান্স। চোরের মা চোরাকারবারিদের শাসিয়েছে, মানে কায়দা করে জানিয়েছে, সময় এসে গেছে।
এমন সময়ে যুদ্ধ বন্ধ মানে, ফের সেই চুরির খবর সামনে আসা। ক্লান্তিকর একই বকবকানি। হ্যাঁ রে, পার্থ জেলে বলে কি চাকরি বিক্রি বন্ধ? নাকি বালি কয়লা পাথরখাদান সব বুজে গেছে তোদের চেঁচানির চোটে? লিপস অ্যান্ড বাউণ্ডসের সেই ন্যাকা সেনাপতিটা কি শহিদমিনারে ফাঁসি গেছে একবারও? বরং যুদ্ধ শুরু হতেই সেই আজব চোর-সেনাপতি স্বর্ণময় নীরবতা মোডে চলে গেছে।
বাড়ি তৈরির টাকাচুরি, অনুদান চাল-ত্রিপল চুরি কোনটা বন্ধ ছিল কিম্বা বন্ধ আছে এই যুদ্ধ পরিস্থিতির পর্দার আড়ালে? বরং বেড়েছিল। ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ টের পাচ্ছিল না।
সেই যুদ্ধের পর্দা সরে গেলে হবে?
দেশে কি আইনকানুন, চৌর্যাধিকার কমিশন, সভ্যতা বলে কিছুই নেই?
আমাদের চুরির স্বার্থে, যুদ্ধ থামানো চলবে না… না… না!
★
সেকু-মাকু দল যুদ্ধ খারাপ বললেই সেটা খুব খারাপ তো।
তোরা তো জানিস তিনু-খিস্তিতে পাকিস্তানিরা তরাসে কাঁপত।
কমি কুত্তারা যেটা চাইছিল গান্ডু ট্রাম্পটা সেটাই বলল।
গুলি-বন্দুক এখুনি বন্ধ। কেউ বলবি না আগামী কল্য।
এই রাজ্যের রেজিস্ট্রিকৃত চোরদের তাতে ঘোর আপত্তি
কী হবে তাদের চুরি শিল্পর? বার হয়ে যাবে সকল সত্যি।
যুদ্ধ চললে, প্রবল ফুর্তি… পুকুর চুরিতে ভারি আনন্দ।
চাকরি ও চাল, বালি ও কয়লায় খুব ফুরফুরে চুরির গন্ধ।
দেশপ্রেমিক ছদ্মবেশের চোর আনবে না কিছুই গ্রাহ্যে।
যুদ্ধ চললে চুরিটা সহজ নৈরাজ্যের এমন রাজ্যে।
চোরের জননী চেনা কায়দায় কোষাগার খুঁড়ে বানায় গর্ত।
লিপস ও বাউন্ডে চোর সেনাপতি লুকোতে ব্যস্ত চুরির অর্থ।
মানুষ মরছে? ধর্মকেতাব পড়ে দ্যাখ, সেটা শাস্ত্র-শুদ্ধ!
কাজেই আমরা ঘেসোরা চাইছি অনন্তকাল চলুক যুদ্ধ।
👌👌👌 দারুণ, হাস্যরস ভরা প্রাসঙ্গিক লেখা।