দৃশ্য এক: বৃহস্পতি বার, ৮ই মে, ২০২৫:
খবরে প্রকাশ ভারতের প্যাটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেড মার্কস এর কন্ট্রোলার জেনারেল এর অফিসে চার খানা দরখাস্ত জমা পড়েছে এই বুধবার। এরা সবাই এন্টারটেনমেন্ট সংক্রান্ত কাজে ওই অপারেশন সিঁদুর” নামটি ব্যবহার করতে চায়। এই চারজন দরখাস্তকারীর মধ্যে একটি নাম জিও স্টুডিও, আম্বানি গোষ্ঠীর রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির শাখা। এই খবর প্রকাশের পর মিডিয়ার এক অংশে নিন্দার ঝড় বয়ে গেল।
খবরে আরও প্রকাশ যে টুইট করে জানানো হলো যে জিও স্টুডিওর কোন জুনিয়র কর্মী নাকি ওপর ওয়ালাদের অনুমতি ছাড়াই “ভুল করে” ওই দরখাস্ত জমা দিয়েছে।
কাট, দৃশ্য দুই: মুম্বাই, ২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২:
একটা ছোট ঘুপচি ঘর। ২৫০ টাকা আর একটা পেন। একটা সরল ফর্ম ফিল আপ করে জমা দেওয়ার হুড়োহুড়ি চলছে। ২৬শে ফেব্রুয়ারি, গোটা দেশ যখন যুদ্ধ নিয়ে, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, টেলিভিশন এর পর্দায় চ্যানেল সার্ফিং, ফেসবুকে স্ক্রল, তখন ওই লোকগুলি হুমড়ি খেয়ে কিসের ফর্ম ফিল আপ করছে ?
ঘুপচি ছোট ঘরটা পশ্চিম মুম্বাই এর আন্ধেরিতে একটা অফিস। ইন্ডিয়ান মোশন পিকচার প্রডিউসার এসোসিয়েশনের অফিস। ওই ফর্ম ও ২৫০ টাকার বিনিময়ে আমি আপনি, যে কেউ কোনো ছায়াছবির নাম আগাম রেজিস্ট্রি করে ফেলতে পারি, যে নাম আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।
ফর্মে লেখা হচ্ছে বালাকোট, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ২, পুলওয়ামা আরো কত কি। পরে এর সাথে যুক্ত হবে, অভিনন্দন, উইং কম্যান্ডার আরো কত কি। একটা যুৎসই নামের কি কদর সেটা উড়ি নামের ছবিটা প্রমাণ করে দিয়ে গেছে।
দেশের জওয়ানরা প্রাণ দিচ্ছে। ধরা পরে বিদেশিদের হাতে রক্তাক্ত হচ্ছে। তাতে কার কি। বেওসা ইজ বেওসা। এইটে বুজলেন না বলেই তো আপনার এই দশা আজকে।
বড় পর্দায় অভিনেতা আর ছোট পর্দায় রাজনেতাদের গলা কাঁপিয়ে, বুক বাজিয়ে সেই ডায়ালগ এ চিরকাল আমি আপনিই তো তালি বাজিয়ে যাবো। ইনস্ট্যান্ট কফি খেয়ে ইনস্ট্যান্ট এনার্জির মতো সিনেমা হলে আর বাড়িতে টিভির সামনে ইনস্ট্যান্ট দেশপ্রেম।
ভরে উঠছে, আমার আপনার বুক গর্বে ভরে উঠছে সেনানীদের বীরত্ব আর সাহস দেখে। আরও অনেকে কিছুই ভরে উঠছে। বক্স অফিস এর ক্যাশ বাক্স, উরি প্রযোজকের ব্যাংক ব্যালেন্স, আর কোনো রাজনেতার ব্যালট বাক্স।
সিনেমা শেষ। পর্দায় একে একে ভেসে উঠছে টাইটেল ক্রেডিট। দেশপ্রেম এর আগুন বুকে একের পর এক আমরা বেরিয়ে আসছি মাল্টিপ্লেক্স এর প্রেক্ষাগৃহ থেকে। এ এক অন্যরকম স্বাদ। ২৫০টা টাকা খরচা করা সার্থক। এন্টারটেইনমেন্ট বোলে তো এন্টারটেইনমেন্ট। দেশপ্রেম বোলে তো সাচ্চা দেশপ্রেম।
থমকে দাঁড়িয়ে পড়বেন না। দেরী হয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা ঝাড়ু আর ডাস্টবিন হাতে অপেক্ষা করছে। আপনারা হল থেকে বেরোলে ওর কাজ শুরু। ফেলে যাওয়া পপকর্ন এর প্যাকেট সহ উচ্ছিষ্ট পরিষ্কার করার দায়িত্বে আছে সামান্য কটা টাকার বিনিময়ে। হাউজ ফুল হলে ওর কাজ বেড়ে যায়।
মেন্টেনেন্স কম্যান্ড এর টেকনিক্যাল বিভাগের কর্পোরাল ছেলেটিও অপেক্ষা করছে, রেঞ্চ হাতে নিয়ে মিগ বাইসন জেট প্লেনটার তলায়। প্রি ফ্লাইট চেক আপ। খুব সাবধানে, সন্তর্পনে। ভুল চুকে ওই ভারী ইঞ্জিন গায়ে পরে থেঁতলে মারা গেলে ওর বিধবা কিন্তু ক্যাজুয়াটি অফ ওয়ার এর কম্পেনসেসন এর টাকা পাবে না।
তাতে কি, আন্ধেরির ওই ঘুপচি ঘরটাতে ও তো অনেকেই অপেক্ষা করছে। যুৎসই নাম টা হাত ছাড়া হয়ে গেলে মুস্কিল। পাবলিক কে খাওয়াতে হবে না ?
আমরা আম আদমি। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি যে আমাদের যা খাওয়ানো হবে আমরা তাই খাবো, এত ভাবাভাবির সময় নেই। আমরা খেয়ে যাই। চিরকাল খেয়েই যাই।
কোন শালা মাকু সেকুর বাচ্চা বলে, “যুদ্ধ হলে কোনো লাভ নেই, সবটাই লোকসান?” পাকিস্তানে চলে যা।










