Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

বিবর্তনবাদ ও চার্লস ডারউইন পর্ব -১

IMG-20221125-WA0023
Dr. Jayanta Das

Dr. Jayanta Das

Dermatologist
My Other Posts
  • November 26, 2022
  • 9:09 am
  • No Comments

ডারউইন এবং তাঁর তত্ত্বের বিবর্তন 

চার্লস রবার্ট ডারউইন, জন্ম ১২ ফেব্রুয়ারি ১৮০৯, মৃত্যু ১৯ এপ্রিল ১৮৮২। বিখ্যাততম বই— অন দি অরিজিন অফ স্পেসিস, প্রকাশ দিবস ২৪ নভেম্বর ১৮৫৯।

প্রথম নজরে চার্লস ডারউইনকে কোনোদিক থেকেই এক বিপ্লবীর ভাবমূর্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যায় না। তাঁর চাইতে ন’বছরের ছোট কার্ল মার্ক্সের সঙ্গে তুলনা করলে ডারউইনকে নেহাতই ছাপোষা, তদানীন্তন ইউরোপীয় উচ্চবিত্ত পরিবারের এক সাধারণ সদস্য বলে মনে হবার কথা। যৌবনেও তাঁকে আর পাঁচজনের চাইতে অন্যরকম বা প্রতিভাবান বলেও মনে হয়নি। ডারউইনের বাবা ভাবতেন ছেলেটা কুঁড়ের হদ্দ, তার ওপরে জীবনে কোনও লক্ষ্য নেই। প্রথমে ডাক্তারি পড়ার বৃথা চেষ্টা করার পরে পাদ্রী হবার জন্য কিছুদিন পড়াশুনা করেন ডারউইন, তারপর সে পাঠও ছেড়ে দেন। ছোটবেলা থেকে ডারউইনের প্রকৃতি নিয়ে আগ্রহ ছিল বটে, কিন্তু সেটা তখনকার ইংল্যান্ডের অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলেদের নেশা ছিল।

প্রায় ‘নিষ্কর্মা’ এই মানুষটি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা পড়ার সময় এইচএমএস বিগল জাহাজে বিনা বেতনের প্রকৃতিবিদ হিসাবে কাজ করার সুযোগ পান। বিশ্ব জুড়ে অনুসন্ধানী ভ্রমণে বেরিয়েছিল এইচএমএস বিগল। সমুদ্রের বুকে পাঁচ-পাঁচটা বছর। বিগল ঘুরে বেড়াচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে, অস্ট্রেলিয়ায়, মহাসমুদ্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা নানা দ্বীপে। ডারউইন সর্বত্র উদ্ভিদ এবং প্রাণীর জীবন, ভূতত্ত্ব ও ফসিল পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন, তাদের নমুনা সংগ্রহ রাখছেন জাহাজে। মোটা মোটা নোটের খাতা ভরে উঠেছে হাতের খুদে খুদে অক্ষরে। এরই মধ্যে বারংবার আক্রমণ করেছে সমুদ্রপীড়া, পেটের গোলযোগ এবং চর্মরোগ।

১৮৩৬ সালের অক্টোবরে বিগল ইংল্যান্ডে ফিরল। ডারউইন এতদিন ধরে তার জমানো পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণ শুরু করলেন। পরের দু’বছর ধরে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনতত্ত্বের মূল কাঠামোটি তাঁর মনের মধ্যে রূপ পায়। চেনাশোনা বিজ্ঞানী বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর ধারণাগুলি নিয়ে তিনি আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু জীবনের উৎস এবং বিকাশের বিষয়ে ডারউইন তাঁর মতামত তখন ছাপার অক্ষরে কোথাও প্রকাশ করেননি। তাঁর বিখ্যাততম বই ‘অন অরিজিন অফ স্পিসিস বাই মীনস অফ ন্যাচারাল সিলেকশন’ প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ সালে— ইংল্যান্ডে ফিরে আসার অনেক পরে। আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস পত্রাঘাত না করলে ডারউইন তাঁর গবেষণা তখনও প্রকাশ করতেন কিনা সন্দেহ আছে।

বিবর্তনবাদের তত্ত্ব ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ আর সেই তত্ত্বের অন্য নাম ‘ডারউইনবাদ’। অথচ একা ডারউইন সে তত্ত্ব আবিষ্কার করেননি, ডারউইন এবং ওয়ালেস দুজনে আলাদাভাবে তথ্য জোগাড় করে ও ভেবেচিন্তে একই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন। ১৮৫৮ সালে ডারউইনকে একটি চিঠি লেখেন ওয়ালেস। সেই চিঠিতে ওয়ালেস প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের নিজস্ব তত্ত্বটির রূপরেখার আভাস দিয়ে ডারউইনের মতামত জানতে চেয়েছিলেন। ডারউইন দেখেন, ওয়ালেস যা লিখেছেন সেটাই বিগত কুড়ি বছর ধরে তিনি ভেবেছেন আর আলোচনা করেছেন। তিনি অনুভব করলেন, তাঁর নিজের গবেষণা সেই মুহূর্তে প্রকাশ না করলেই নয়।

১ জুলাই, ১৮৫৮। ডারউইনের পূর্ববর্তী নোটগুলির একটি সংকলন এবং ওয়ালেসের একটি রচনা লন্ডনের লিনিয়ান সোসাইটিতে পঠিত হল। যাকে আমরা সাধারণভাবে ‘বিবর্তনের প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব’ বলে জানি, বিজ্ঞানে তার স্বীকৃত নাম হল ‘ডারউইন ও ওয়ালেসের প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব’। দুজন একই সময়ে এই তত্ত্ব পেশ করেন বলে দুজনেরই নাম আছে। কিন্তু ১৮৮৯ সালে ওয়ালেস স্বয়ং তাঁর বিবর্তনীয় প্রবন্ধসংগ্রহকে ‘ডারউইনবাদ’ আখ্যা দেন।

পরের বছর ডারউইন ‘অন দি ওরিজিন অফ স্পিসিস’ প্রকাশ করলেন। এটি পৃথিবীর বিখ্যাততম বইগুলির একটি। ডারউইন সাক্ষ্যপ্রমাণ সহ তাঁর বিবর্তনীয় তত্ত্ব এই বইটিতে রেখেছিলেন। বইটি প্রকাশ হওয়া মাত্র বেস্টসেলার হয়, আর তা খুব দ্রুত প্রবল বিতর্কের সূত্রপাত করে।

ডারউইন অবশ্য এই বিতর্কই আশা করছিলেন, বা বলা ভাল, ডারউইন নিজের ওপর আরও বেশি আক্রমণের আশঙ্কা করছিলেন। ব্রিটেনের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যে এই বিবর্তন তত্ত্ব শুনে ক্ষেপে যাবে সেটা তিনি জানতেন। এমনকি ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিক্রিয়া যে তাঁর পক্ষে যাবে না, সেটাও তিনি ধরেই নিয়েছিলেন। নিজের পক্ষে নিখুঁতভাবে যুক্তি ও তথ্য সাজাতে সময় চাইছিলেন বলেই কুড়ি বছর ধরে তিনি তত্ত্বটি নিয়ে ছাপার অক্ষরে কিছু বলতে চাননি। অনেকে ভাবেন, প্রজাতির অভিযোজনের ধারণা ও বিবর্তনের ধারণা ডারউইনের অবদান, তাঁর মৌলিক ধারণা। আসলে তা নয়, সেই সময়ে বিবর্তনবাদ অভূতপূর্ব বা একেবারে মৌলিক ধারণা ছিল না। ডারউইন তার তত্ত্ব প্রকাশ করার কয়েক দশক আগে থেকেই জীবজগতে বিবর্তন নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক চলছিল। বিবর্তনের ফলে এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতির উদ্ভব হয়, এই ধারণার সমর্থক অবশ্য সংখ্যায় প্রথমে খুবই কম ছিলেন। ডারউইনের ঠাকুরদা চিকিত্সক ইরাসমাস ডারউইন ছিলেন হাতে গোণা আদি বিবর্তনবাদীদের মধ্যে একজন। এক ফরাসী বিজ্ঞানী জাঁ ব্যাপতিস্তে ল্যামার্ক বিবর্তনের কথা প্রচার করেন ও বিবর্তনের পদ্ধতি নিয়ে কিছু ধারণা দেন। তবে ল্যামার্কের ধারণা পরবর্তীকালে সঠিক বলে প্রমাণিত হয়নি। আবার ফরাসী বিজ্ঞানী জর্জ কুভিয়ার-এর মত বহু বিশিষ্ট প্রকৃতিবিদ এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতির উদ্ভবের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বিবর্তনবিরোধী বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে (ঈশ্বর দ্বারা) প্রজাতিগুলি সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত একই রকম রয়ে গেছে।

চার্লস ডারউইনের কৃতিত্ব হ’ল প্রজাতিগুলি কীভাবে বিবর্তিত হয় তার একটি বিশ্বাসযোগ্য ও অকাট্য ব্যাখ্যা দেওয়া, এবং জীবনের বিকাশের কারণ হিসেবে অতিলৌকিক সমস্ত ব্যাখ্যাকে অন্তঃসারশূন্য প্রমাণ করা। তিনি যুক্তি ও তথ্য দিয়ে দেখালেন, সমস্ত বিদ্যমান জীব কিছু সংখ্যক আদি বা পূর্বসূরি প্রজাতি থেকে বিকাশের ফলে পৃথিবীতে এসেছে। তিনি জীবনের বিবর্তনকে একটি বিশাল বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করলেন। জীবনবৃক্ষের গুঁড়ি কয়েকটি সাধারণ পূর্বসূরির প্রতিনিধিত্ব করে, আর সেই গুঁড়ি থেকে জন্ম নেওয়া অজস্র শাখাপ্রশাখা হল এখনকার পৃথিবীতে বাস করা নানা ধরণের জীব।

এই বিবর্তনের দুটি কারণ আছে।

প্রথম কারণটি হ’ল, প্রতিটি জীব তার পিতামাতার চাইতে আলাদা। এই পার্থক্য সাধারণত সূক্ষ্ম। ডারউইন এই পার্থক্যগুলিকে ‘বৈচিত্র্য’ বা ‘ভেরিয়েশন’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

ডারউইনীয় বিবর্তনের দ্বিতীয় কারণ হল এইরকম। প্রতিটি জীব তার পিতামাতার চাইতে কোনও বিশেষ উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা মাফিক আলাদা, এমন নয়। বৈচিত্র্য বা ভেরিয়েশন হল এলোমেলো বা রান্ডম। কিন্তু এই এলোমেলো বৈচিত্র্য কয়েকটি নতুন প্রজন্মের জীবদের কিছু স্বতন্ত্র সুবিধা দেয়। নতুন প্রজন্মের কারও হয়তো পরিবেশে একটু বেশি লুকিয়ে থাকার মত চেহারা হয় (বিভিন্ন পোকা বা পাখি), হয়তো পরিবেশ থেকে বেশি খাদ্য সংগ্রহ করার ক্ষমতা (জিরাফের লম্বা গলার মত) হয়, হয়তো গতি বাড়ে (আর সে হরিণের মত বাঘের হাত থেকে বাঁচতে পারে)। এক কথায় নতুন বৈশিষ্ট্য হয়তো নতুন প্রজন্মের একটি জীবকে তার পরিবেশে টিকে থাকার জন্য আরও ভালভাবে সজ্জিত করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে এর উলটোটাও হতে পারে—নতুন বৈশিষ্ট্য হয়তো এমন হল যে জীবটি তার পিতামাতার চাইতে পরিবেশে টিকে থাকতে আরও অসুবিধায় পড়ল। সে ক্ষেত্রে সেই জীবটির অকালে মরে যাবার ও বংশধর না রাখার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে, সুবিধাজনক বৈচিত্র্যের অধিকারী নতুন প্রজন্মের জীব গড়ে বেশিদিন বাঁচে আর তাদের বাচ্চাকাচ্চাও বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে। ফলে তার পরের প্রজন্মে আরও বেশি সংখ্যক বংশধর সেই উপকারী বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায়। এইভাবে অপকারী বৈশিষ্ট্যগুলি লুপ্ত হয় আর উপকারী বৈশিষ্ট্যগুলি সময়ের সাথে সাথে একটি প্রজাতি জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। গোটা প্রজাতিটিই এইভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখে। বহু প্রজন্ম জুড়ে সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলি জমা হয়ে অবশেষে বড় আকারের পরিবর্তন দেখা দেয় এবং হয়তো একটি নতুন প্রজাতির জন্ম হয়।

ডারউইনের তত্ত্বের মধ্যে কোনও দুর্বলতা ছিল না, এমন নয়। তিনি প্রজন্মের মধ্যেকার বৈচিত্র্যসমূহ ও তার প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে বিবর্তনের প্রক্রিয়া ও কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানতেন, এই বৈচিত্র্যগুলি বংশানুক্রমিক না হলে তাঁর বিবর্তনের তত্ত্ব মিথ্যা হয়ে যায়। কিন্তু কেমন করে বংশানুক্রমিকভাবে এই বৈচিত্র্যসমূহ পরিবাহিত হয় তা তিনি বোঝেননি। বৈচিত্র্যের আসল কারণ জেনেটিক মিউটেশন। কিন্তু ডারউইন মারা যাবার কুড়ি বছর পরে জেনেটিক্সের বৈজ্ঞানিক ধারণা বিজ্ঞানীমহলে প্রথম যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে চর্চিত হয়। ফলে বৈচিত্র্যের বংশানুক্রমিক সঞ্চার কেমন করে হয়, সে বিষয়ে ডারউইন যা বলেছিলেন তা ভুল ছিল। তাই প্রাথমিক প্রবল ইতিবাচক অভিঘাতের পরে বিজ্ঞানীমহলে ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়ে খানিকটা সংশয় তৈরি হয়।

বিংশ শতকের শেষার্ধে জিন-এর গঠন আবিষ্কৃত হয়। ধীরে ধীরে জানা যায় কীভাবে জিনের নানা বৈচিত্র্য প্রজন্মের পর প্রজন্মে প্রবাহিত হয়, কেমন করে জিনের পরিবর্তনের ফলে নতুন বৈচিত্র্যের জন্ম হয়। পরিবেশ কীভাবে জিনের পরিবর্তনের ওপর ছাপ ফেলে সেটাও ধীরে ধীরে বোঝা যায়। নতুন সমস্ত আবিষ্কার ডারউইনের মতবাদকে আরও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

ডারউইনের ধারণাগুলি বহুযুগের ইউরোপীয় ধর্মীয় বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। এমনকি বিজ্ঞানপ্রতিষ্ঠানগুলিও গোড়ার দিকে ডারউইনের বক্তব্য নিয়ে বেশ সন্দিহান ছিল। অবশ্য ইংরেজিভাষী বিশ্বের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ডারউইনের তত্ত্ব নিয়ে বিরোধিতা ‘অন দ্য অরিজিন অফ স্পেসিস’ প্রকাশের কয়েক দশকের মধ্যে প্রায় ধসে পড়েছিল। তবুও ব্রিটিশ এবং আমেরিকান গীর্জা বিবর্তনকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে চলে। ধর্মীয় নেতারা যুক্তি দেখিয়েছিলেন, তত্ত্বটি খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের মূল শিক্ষার বিরোধিতা করে।

মানুষ সহ বিদ্যমান প্রজাতিগুলি কয়েকটি আদি জীব থেকে ধীরে ধীরে এবং ‘এলোমেলো পরিবর্তন’ ও ‘সুবিধাজনক পরিবর্তনের বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকার অর্জন’-এর দ্বারা বিবর্তিত হয়েছে। এটাই ডারউইনের বিবর্তন ধারণার মূলকথা। এর বিপরীতে ছিল বাইবেল বর্ণিত ‘বিশেষ সৃষ্টিতত্ত্ব’। বাইবেলের ভাষ্য হল, সমস্ত জীবকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন, এবং তাদের মূল ‘প্রকার’ কখনও বদলায়নি। জীবনের উদ্ভব এবং বিকাশের কিছু বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ডারউইনের পূর্বেও ছিল। কিন্তু মূলধারার বিজ্ঞানীরা মোটের ওপর ধরে নিয়েছিলেন যে প্রজাতিগুলি স্থির, তারা কখনই পরিবর্তিত হয়নি। বাইবেলে উল্লিখিত ঈশ্বর কর্তৃক মাছ, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী সৃজনের বিষয়টি অবিকৃত রেখে পরবর্তীকালের যেটুকু পরিবর্তন সম্ভব তা নিয়ে সে সময়কার বিজ্ঞানীরা চর্চা করতেন। এর ব্যাতিক্রম অল্পই ছিল।

ইহুদি-খ্রিস্টান-ইসলাম এই তিন আব্রাহামিক ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্বের কেন্দ্রীয় ধারণা হল যে, বিশ্বে মানুষের একটি বিশেষ ঈশ্বর-প্রদত্ত স্থান আছে। ডারউইনের তত্ত্ব তার বিরোধিতা করে। ডারউইনিয় বিবর্তনের সমর্থকরা মানব অঙ্গসংস্থানবিদ্যায় (অ্যানাটমি) একটি লক্ষণের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, মানুষের সঙ্গে পশুজগতের শারীরিক ধারাবাহিকতা রয়েছে। মানুষের লেজ নেই, কিন্তু তার দেহে লেজ হাড়ের একটি অবশিষ্টাংশ আছে। এই ককিক্স হাড়টি প্রমাণ করে মানুষ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর সঙ্গে একই সাধারণ পূর্বসূরির সন্তান।

ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারণায়, যে সমস্ত জীব পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না তারা বেঁচে থাকতে পারে না। এটা যেন জীবজগতকে এক বর্বর ও নিষ্ঠুর স্থান হিসাবে চিত্রিত করে। একজন ত্রুটিহীন মঙ্গলময় ঈশ্বর জীবজগৎ সৃষ্টি করেছেন ও সযত্নে তাকে পালন করেন। করুণাময় সেই ঈশ্বর প্রার্থনায় সাড়া দেন। তাঁর সৃষ্ট ক্ষমাসুন্দর বিশ্ব থেকে ডারউইনের বিশ্ব মূলগত ভাবে ভিন্ন। অবশ্য ক্ষমাসুন্দর বিশ্বের ধারণাটি এই সময় সাধারণভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছিল। ডারউইনের সমসাময়িক ছিলেন আলফ্রেড লর্ড টেনিসন। ‘অন দ্য অরিজিন অফ স্পেসিস’ বইটি প্রকাশের কয়েক বছর আগেই তিনি প্রকৃতির ভয়াল রূপ বর্ণনা করে লিখেছিলেন, ‘Nature red in tooth and claw’। এই কথাটিকে টেনিসন বিখ্যাত করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু শব্দবন্ধটি তার আগেই চালু ছিল। ডারউইনের তত্ত্ব বিশ্বের অনৈসর্গিক সম্প্রীতির ধারণাকেও অমূলক বলে দেখিয়ে দেয়।

ডারউইন জানতেন, তাঁর তত্ত্ব সনাতন ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করবে। আমেরিকান উদ্ভিদবিজ্ঞানী আসা গ্রে-কে ১৮৬০ সালে একটি চিঠিতে তিনি লেখেন, “নাস্তিকের মত লেখার কোনও ইচ্ছা আমার ছিল না। কিন্তু অন্যরা যেমন আমাদের চারপাশে পরিকল্পনা ও উপকারী-হস্তের প্রমাণ পান … আমি তাদের মতো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি না … বিশ্বে খুব বেশি দুর্দশা রয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে।”

ডারউইনের উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, তাঁর ধারণাগুলি ব্রিটেনের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে তত্ক্ষণাৎ কঠোর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ ক্যাথলিক কর্মকর্তা হেনরি কার্ডিনাল ম্যানিং ডারউইনের মতকে একটি নিষ্ঠুর দর্শন হিসাবে অভিহিত করেন। অক্সফোর্ডের অ্যাংলিকান আর্চবিশপ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় নেতা স্যামুয়েল উইলবারফোর্স ১৮৬০ সালে ‘ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর দি এডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স’-এর সভাতে ডারউইনের তত্ত্বের বৈজ্ঞানিক ঘাটতি দেখানোর প্রচেষ্টায় যে বক্তৃতা দেন তা বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে। খ্যাতির কারণ অবশ্য বক্তৃতা নয়, বরং বক্তৃতার উত্তরে টমাস হেনরি হাক্সলির চোখা প্রত্যুত্তর। বৈঠকের মধ্যে উইলবারফোর্স জীববিজ্ঞানী টমাস হেনরি হাক্সলিকে জিজ্ঞাসা করেন যে, তিনি উত্তরাধিকারের খাতিরে নিজেকে ‘এপ’ (গরিলা শিম্পাঞ্জি ইত্যাদি মহাবানর) বংশজাত বলে মনে করেন—তাঁর ঠাকুমার দিক দিয়ে নাকি দিদিমার দিক দিয়ে? হাক্সলি বলেন, সত্যের সাধকদের সম্পর্কে এরকম মিথ্যা অপযশ দেবার কাজে যিনি তার জ্ঞান এবং বাগ্মীতাকে ব্যবহার করছেন, তাঁদের চাইতে বরং একটি বানরকে তিনি নিজের পূর্বপুরুষ হিসেবে পছন্দ করবেন।

অবশ্য অনেক গবেষক বলেন এইরকম কথাবার্তা সেই সভাতে আদৌ হয়নি। তবে এই সময়েই বিবর্তন নিয়ে বিতর্কে ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক ধারণা ধর্মীয় ডগমাকে জনসমক্ষে পরাজিত করতে শুরু করে। ১৮৬০ দশকের মধ্যেই ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার মধ্যে প্রকাশ্য মতবিরোধের ফয়সালা হয়নি, এবং অল্প সময়ে এমন অবসান ঘটার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু এই সময় থেকেই ধর্মীয় নেতারা বিবর্তনবিজ্ঞান সম্পর্কে আরও সতর্ক হয়ে পড়েছিলেন। অন্য প্রাণী থেকে বিবর্তনের ফলে মানুষ পৃথিবীতে এসেছে, এমন ধারণা উনিশ শতকের শেষ থেকে বিশ শতকের গোড়ার দিকে ইউরোপের শিক্ষিত সমাজে ছড়িয়ে যায়। ফলে ঐশ্বরিক সৃষ্টিতত্ত্ব বা মানুষের আত্মার ধারণা প্রশ্নের মুখে পড়ে। তাই সারা পৃথিবীর প্রায় সমস্ত চার্চের সংগঠিত শক্তি এই ধারণাকে প্রতিরোধ করার দিকে মনোনিবেশ করেছিল। শেষ পর্যন্ত ক্যাথলিক চার্চ ও অন্য কিছু চার্চের কর্তারা মেনে নেন যে, জৈবিক বিকাশের একটি ঈশ্বরনির্দেশিত প্রক্রিয়া হিসাবে বিবর্তন মিথ্যা নয়। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। জীবনের আদি কারণ হিসেবে বা মানুষের একমাত্র স্রষ্টা হিসাবে ঈশ্বরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন কোনও আব্রাহামিক ধর্ম প্রতিষ্ঠান এখনও মেনে নেয়নি।

১৮৮২ সালে ডারউইন মারা যান। তখন তাঁকে সেই সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসাবে বিবেচনা করা হত। তাঁর সপক্ষে জনমত অত্যন্ত জোরালো ছিল। যে চার্চ তাঁর তত্ত্ব কোনোকালে মেনে নেয়নি, সেই চার্চই ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সমাধির কাছে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করে। চার্চ ঠিকই জানত, ডারউইনের ধারণাটি ছিল ‘ধর্মদ্রোহী উস্কানি’! কিন্তু সে সময় ব্রিটেনে তাঁর মতের গ্রহণযোগ্যতা এতই বেশি ছিল যে, এমনকি অ্যাংলিকান ধর্মযাজকদের মধ্যে অনেকেই এই মতের অনুরাগী হয়ে পড়েছিলেন। চার্চ ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে ডারউইনকে সমাহিত করে ব্রিটেনের বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে একটি যুদ্ধের অবসান ঘোষণা করতে চেয়েছিল।

ডারউইন ব্যক্তিজীবনে বা স্বঘোষণায় একজন বিপ্লবী ছিলেন না। কিন্তু তাঁর বৌদ্ধিক অবদান ছিল বৈপ্লবিক। যেমন আড়াই হাজার বছর আগে ভারতের এক মহামানবের বৈপ্লবিক অবদানকে আত্মসাৎ করে তাঁকে ধর্মীয় অবতার বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, ডারউইনের ক্ষেত্রেও চার্চ ঠিক তেমনভাবেই তাকে একজন ‘সন্ত’ বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে শেষ পর্যন্ত ডারউইনের বৈপ্লবিক ধারণা টিকে থাকবে, আর ‘সন্ত’ ডারউইনের ভাবমূর্তি সৃষ্টিকারী ধর্মরক্ষকদের সমস্ত আজগুবি গল্প টিকে থাকবে না।

কে যেন বলেছিলেন না, সারভাইভাল অফ দি ফিটেস্ট!

PrevPreviousআমাদের হয়ে লড়তে আসবেন ক্ল্যারেন্স সুয়ার্ড ডারো
Nextলিগ্যাসিNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

দু’রকমের রেডিওলজিস্ট

September 30, 2023 No Comments

মোটামুটি আমাদের সময় থেকে, বা তার একটু আগে – অর্থাৎ যেসময় সিটি স্ক্যান মেশিন আশেপাশে দেখা যেতে শুরু করল, এবং মূলত সেকারণে রেডিওলজি ব্যাপারটা বেশ

Learning CPR on Restart A Heart Day

September 30, 2023 No Comments

Prepared by CPR Global Team, McMaster University.

অন্য মা

September 30, 2023 No Comments

বুঝলে বউমা দেরি করে ঘর থেকে বেরিও। সকাল সকাল বাঁজা মেয়েমানুষের মুখ দেখলে দিন ভাল যায় না। বছর না ঘুরতেই শাশুড়ির বাঁ দিকটা গেল পড়ে।

The Crazy Pavement: A Cocktail Journey to Poet-Hood

September 29, 2023 No Comments

A Non-sense Novelette Chapter 14 Epilogue Years later, when my boss, the Deputy Director in the Animal Resource department, pronounced his intention of bundling me,

ডাক্তারীর স্নাতকোত্তর প্রবেশিকার যোগ্যতামান কমিয়ে আনার নির্দেশে আপনার বিচলিত হওয়ার মতো কিছু নেই?!

September 29, 2023 No Comments

সদ্য দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের একটি ঘোষণায় কিঞ্চিৎ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ডাক্তারি পঠনপাঠন সংক্রান্ত ঘোষণা – ডাক্তারির ক্ষেত্রে চিকিৎসকের গাফিলতি ও অর্থলিপ্সা, এই দুই ব্যাপার নিয়ে সার্বিক

সাম্প্রতিক পোস্ট

দু’রকমের রেডিওলজিস্ট

Dr. Bishan Basu September 30, 2023

Learning CPR on Restart A Heart Day

Dr. Tapas Kumar Mondal September 30, 2023

অন্য মা

Dr. Indranil Saha September 30, 2023

The Crazy Pavement: A Cocktail Journey to Poet-Hood

Dr. Asish Kumar Kundu September 29, 2023

ডাক্তারীর স্নাতকোত্তর প্রবেশিকার যোগ্যতামান কমিয়ে আনার নির্দেশে আপনার বিচলিত হওয়ার মতো কিছু নেই?!

Dr. Bishan Basu September 29, 2023

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

452549
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]