আজকাল বাচ্চাদের স্কুল হয়েছে সব দামী-দামী আর সেখানে বছর জুড়ে বাচ্চাদের নিয়ে নানান activity হয়! এসব জানতে পারি বিভিন্ন মেয়েদের গ্রূপের post থেকে আর কিছু পেশেন্ট দের থেকে। তো activity গুলোর মাধ্যমে বাচ্চাদের নানা কিছু শেখানোর চেষ্টা করা হয়। সেই জন্য বাবা-মা দের অনেক কিছু ready করতে হয় মানে অনেক জিনিসপত্র দিয়ে পাঠাতে হয় আর কি! এই যেমন ধরুন স্কুলে “yellow day” হবে সেই উপলক্ষে বাচ্চারা সব হলুদ জামা পরে ইস্কুলে যাবে গিয়ে হলুদ রঙ চিনতে শিখবে। সবই ছোটো বাচ্চা, ওই দুই-তিন। কখনো বাবা দিবস বা মা দিবসের উৎসব হচ্ছে। সেখানে মা বাবাকে যেতে হবে। এইসব আর কি! ভালো দিক বলতে বাচ্চারা এতে খেলার ছলে কিছু জিনিস শিখবে। সমস্যা কোথায় জানেন? সমস্যা হলো বাচ্চাদের মন বড়ো সংবেদনশীল… এইসব স্কুলে বাচ্চা পাঠানো মানে মোটামুটি বাবা-মা এর টাকা-পয়সা আছে, নেই বলতে সময়….! আর সেই জন্যই তো স্কুলে দেয়া… কিন্তু এইসব event এর ক্ষেত্রে উপলক্ষ যখন লক্ষ্যের চেয়ে বড়ো হয়ে ওঠে বাচ্চাদের সংবেদনশীল মনে কেমন আঘাত করে দেখুন –
একজন মা মেয়েদের গ্ৰুপে post করেছেন, বাচ্চার স্কুলে “Mango day ” ছিলো, উনি আম দিয়ে কিছু টিফিন বানিয়ে দিতে হবে, এটাই ভুলে গিয়েছিলেন… দিদিমনি সেদিন বাচ্চাটি কে টিফিন খেতে দেন নি!
এতে বাচ্চা শুধু ক্ষিদেয় কষ্ট পায়নি, সাথে অপমানিত হয়েছে, হয়তো মনে হয়েছে ওর মা ওকে যথেষ্ট ভালোবাসেনা বা সময় দেয় না…. অথচ মা-বাবা ব্যস্ত বলেই এইসব স্কুলে পাঠানো কিন্তু!
শতাব্দী দাস কিছুদিন আগেই এই বাবা দিবস বা মা দিবস পালনের ক্ষেত্রে খুবই প্রাসঙ্গিক একটা post করেছিলেন… যখন আমরা বাবা দিবস বা মা দিবস কে বাচ্চাদের স্কুলে খুব বড়ো করে পালন করি তখন single parent দের বাচ্চাদের মনে চরম আঘাত করা হয়…. মাসি, পিসি, ভাই, বোন সব পাতানো যায়, মা বাবা পাতানো যায়না!
এই অনুষ্ঠান গুলোর সবটাই কিন্তু বাচ্চাকে শেখানোর জন্য নয়, এর কিছু অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য ও আছে… অধিকাংশ স্কুলে, এসব অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র মা বাবাদের কিনতে হয়!
যাই হোক কাল ওই post পড়ে নিজের স্কুলের কথা আরো একবার মনে পড়ে গেলো…. আমাদের সরকারি স্কুল… সেই সময় সরকারি ভালো স্কুলের আলাদা ঐতিহ্য ছিলো, আজকের মতন “সরকারি স্কুলে আবার পড়াশোনা হয় নাকি ” বলে নাক কুঁচকে কেউ কথা বলতো না…. তো আমাদের দিদিমণিদের সবসময়েই যেটা মাথায় রাখতে হতো সেটা হলো এই স্কুলে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সামাজিক স্তরের মেয়েরা পড়ে…
একটা হাতের কাজের সামান্য জিনিস কিনতে বললেও বারেবারে বলে দিতেন যে, বাবা মা যদি কিনে দিতে না পারেন, চাপ দেবে না! বাবা মা কিনে দিতে পারলে নিশ্চই দিতেন, পারছেন না যখন তোমরা তাঁদের পরিস্থিতি বুঝবে….
আবার আমাদের ইস্কুলে কোনো বিশেষ দামী জিনিস নিয়ে যাওয়া বারণ ছিলো… বলা হতো, দেখো হয়তো তুমি একটা দামী জিনিস নিয়ে এলে, তোমার বান্ধবী সেটা কিনতে পারবেনা, ওর তো কষ্ট হবে। তুমি কি ওকে কষ্ট দিতে চাইবে?? বাইরে তোমরা যা খুশি পরো, যা খুশি করো, স্কুলে আসলে তোমরা সবাই সমান…!
এবার এই কথাগুলো আমার এতো স্পষ্ট মনে আছে কেনো? কারণ এই কথা গুলো কোনো একটি বিশেষ ক্লাসে, কোনো একজন বিশেষ দিদিমণি একবার বলেন নি…. বারেবারে বলেছেন, অনেকে মিলে… কথাগুলো মাথায় বসে যাওয়ার মতন জ্যান্ত! সরকারি স্কুলে বাচ্চাদের সাথে কখনো কোনো অমানবিক আচরণ হয়নি এমন দাবী আমি করছি না, আমি শুধু আমার স্কুলের এই বিশেষ শিক্ষার কথাই বলছি…. কি শিক্ষা? অন্য মানুষের অনুভূতিতে আঘাত না দেয়ার শিক্ষা, কারোর দুর্বলতার সামনে নিজের বিত্ত অশ্লীলভাবে প্রদর্শন না করার শিক্ষা, বাবা মা এর অর্থনৈতিক সমস্যা বোঝার শিক্ষা, অন্য মানুষের অনুভূতি বোঝার শিক্ষা…..
আমি জানিনা নিত্য নতুন উৎসব করে আর ছবি তুলে তুলে আসলেই জীবনের ছোটো ছোটো শিক্ষা আজকের শিশুদের দেয়া হচ্ছে কিনা…. নাকি তাদেরকে বোঝানো হচ্ছে জীবনে খুশি থাকতে বড়ো বেশি জিনিসের প্রয়োজন – yellow day তে হলুদ জামা, mango day তে আমের জিনিস, জন্মদিনে বন্ধুদের জন্য উপহার ইত্যাদি না নিয়ে যেতে পারা লজ্জার….! এর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বোধহয় মানবিক অনুভূতি গুলো শিশুকে শেখানো!