লেখার মত ব্যক্তিগত। একটা প্যান ৪০ খেয়ে নিজের দায়িত্বে পড়বেন, নয়তো এড়িয়ে যান।।
সকলের জ্ঞাতার্থে জানাই, (ইতিমধ্যে সবাই জানেন, কিন্তু জেনেও জানতে চান না) এই মাসের মধ্যে মাত্র তিনটি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে দেশে এবং তিনটি বড় মাপের সর্বভারতীয় পরীক্ষা নীট ইউজি, ইউজিসি নেট এবং নীট পিজি পরীক্ষা মায়ের ভোগে চলে গেছে। আপাত দৃষ্টিতে এই দুটির মধ্যে কোনো লিংক নেই, নাকি আছে? আমরা কি কোনো প্যাটার্ন দেখতে পাচ্ছি, নাকি পাচ্ছিনা? আমার কাছে দু’টো ঘটনা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, হয়তো আমি ভুল হতে পারি এবং আমি ভুল হলে খুশিই হবো; কারণ যদি আমি ঠিকই হই, তাহলে আমাদের আরো খারাপ দিন আসতে চলেছে।
আমি দ্বিতীয় ঘটনা দিয়ে শুরু করবো, কারণ এটা আমার পরিচিত ক্ষেত্র। তিনটি এত বড় পরীক্ষায় গাফিলতির প্রসঙ্গে সবচেয়ে আগে যে প্রশ্নটা ওঠে, সরকার পরীক্ষাটা নিয়ে কতটা সিরিয়াস আর দ্বিতীয় প্রশ্নটা হলো কতদূর অব্দি গেছে এই দুর্নীতির মূল? আগামী দিনে কি এই পরীক্ষায় নম্বর পেতে গেলেও নেতা-মন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে হবে? স্কুলের চাকরির মতোই বিকবে ডাক্তারি সীট? হলে অবাক হবো না।
আমার কোথাও একটা মনে হয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং মডার্ন মেডিসিন বিরোধী এবং তিনি লন্ডনে গিয়ে ডাক্তারদের বাপান্ত করেই ক্ষান্ত নন, এই ডাক্তারী শিক্ষাটাই যাতে চুলোর দুয়ারে যায়, সেই প্রচেষ্টাতেই তিনি আছেন। তারপর ঘটা করে আয়ুষ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেয়ে দেবেন দেশটাকে আর রামদেবকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বানাবেন। মাঝেমধ্যেই এই দুঃস্বপ্নটা দেখি, জানিনা এটাই আমাদের ভবিতব্য কিনা!
মেডিক্যাল কলেজ খুলেই চলেছে শয়ে শয়ে, যার বেশির ভাগ প্রাইভেট। বিশাল টাকার নয়ছয় চলছে সেটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু আমরা এই প্রশ্নটা করছিনা, সরকারি কলেজগুলোতেও এত পড়ানোর লোক নেওয়া হচ্ছে কি? নাকি জাস্ট কয়েকজন রিক্রুট হয়ে বাকি শেয়ালের কুমিরছানা দেখানোর খেলা চলছে? ইতিমধ্যে মেডিক্যাল কলেজে আর কেউ ডাক্তারি পড়তে ঢুকছে না, সেই বারো ক্লাসের রীতি অনুযায়ী তারা পরীক্ষা দিচ্ছে কলেজের ব্যানারে- পড়ছে অনলাইন বিভিন্ন প্লাটফর্মে। আগামী দিনে ভালো ছেলেমেয়েদের এই ধারার প্রতি কোনো আকর্ষণ আদৌ থাকবে কিনা সেই বিষয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান।
এমনিতে কলেজে ছাত্রদের পাশ-ফেল থেকে শুরু করে রোগীর ভর্তি হওয়া-না হওয়া ইত্যাদি সবেতেই সরকারি প্রভাব ক্রমবর্ধমান। সরকারি ডাক্তারেরা নিজেদের বেঁচে থাকা মানসম্মানটুকু নিয়ে চাকরিটা বাঁচিয়ে রাখতে এসব নির্দেশনামা নিয়ে বিশেষ ঘাঁটাতেও চান না। অবিশ্যি স্বয়ং বিধান রায়কে আমাদের পূজনীয় স্যারেরা ফেল করিয়েছিলেন মিথ্যা সাক্ষী দিতে গররাজি হওয়ায়- সেদেশে এসব তো মামুলি কথা। এখন আমরা কুকুরের ডায়ালিসিসের জমানায় বাস করছি, আমাদের সামনের দিকে তাকাতে হবে, নইলে ট্রান্সফার হয়ে যেতে হবে- বড্ড বিড়ম্বনা!
মোদ্দা কথা, আজ থেকে দশ বছর পর আপনি যে ডাক্তারবাবুকে দেখাতে যাবেন, আপনি জানবেন না যে উনি নীট পরীক্ষার প্রশ্ন জেনে ডাক্তারিতে ঢুকেছিলেন, নাকি ডাক্তারি পরীক্ষায় ক্যাচ মেরে পাশ করেছেন, নাকি …. আর কত প্রবাবিলিটির অঙ্ক কষবো!!
এখন এখান থেকে প্রথম ঘটনার দিকে এগোন। না, আমি বলছিনা ট্রেনের ড্রাইভাররা জালি প্রক্রিয়ায় ড্রাইভার হয়েছেন, ওঁদের দোষ দিচ্ছিই না। কিন্তু আগামী দিনে যা ট্রেনিং চলছে তাতে এরকম কিছু হলে অবাক হবেন না যেন!
এখানে প্রশ্নটা আলাদা। সিগন্যালিংয়ে গণ্ডগোল হয়েছে হয়তো বা! কিন্তু মালগাড়ির ড্রাইভার নাকি তিনটে নাইট ডিউটি করার পর আবার নাইট করছিলেন। কেন? না, মোটরম্যানের অভাব। কেন? দেশে নাকি চাকরির অভাব, সব এআই খেয়ে নিয়েছে। তাহলে এত ফাঁকা পোস্ট কেন? শুধু রেলে নয়, পুলিশে, শিক্ষাক্ষেত্রে- সর্বত্র এক চিত্র। এবং এই বিষয়ে আমাদের রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকারের এত গলায়-গলায় বন্ধুত্ব কল্পনাও করা যায়না।
ডাক্তারি ক্ষেত্রে এরাজ্যে জিডিএমও রিক্রুটমেন্ট বন্ধ হয়েছে বহুকাল। খুব অসাধারণ একটা মাস্টার স্ট্রোকে কলকাতার অনেক সরকারি হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজগুলোর ‘অ্যানেক্স’ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলত সেই হাসপাতালগুলো এখন মেডিক্যাল কলেজের লোক দিয়েই চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে, ওর জন্যে আলাদা করে ভাবার দরকার পড়ছে না। রেসিডেন্টদের ধমকে-চমকে কীই না করানো যায়, এতো সামান্য ব্যাপার। কম ডাক্তার লাগবে, সরকারি ফান্ড বাঁচবে, সেই ফান্ডে ক্লাবের পুজো হবে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার হবে, ভোট হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
দুঃখের বিষয় সবই হবে, ট্রেন দুর্ঘটনাও হবে, অন্যান্য অনেক রকম দুর্ঘটনাও হবে। হচ্ছে, আমরা দেখছিনা, যাদের হচ্ছে তারা ভালোই জানছে। এসবের মাঝে নেপোয় ঠিক দই মেরে যাচ্ছে, আমরা বরং ফেলে যাওয়া মালসাটায় এক ফোঁটা ভাতা তুলে নি…