“বিপদ কালেতে মোরা হাত জোড় করি,
বিপদ কাটিলে পুনঃ নিজ মূর্তি ধরি।
অসময়ে চিকিৎসককে বন্ধু বটে কই,
সুসময়ে দেখা হলে মুখ ফিরে লই !” –জসীমউদ্দীন
৪ জুলাই
আমার ডিউটি ছিল দুপুর দুটো থেকে। হ্যান্ডওভার নেওয়ার সময় শুনলাম কিছুক্ষণ আগেই বছর দশেকের একটি ছেলে এসেছে জ্বর আর শ্বাসকষ্ট নিয়ে, মেডিকেল অফিসার বাচ্চাটিকে দেখেন এবং পেডিয়াট্রিশিয়ানকে ডাকেন। পেডিয়াট্রিশিয়ান প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এসে যান, এবং জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু করেন, কিন্তু তাঁর সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বাচ্চাটি মারা যায়।
ভাঙচুর শুরু হয় প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। আমরা প্রায় পালিয়ে চলে যাই দোতলায়। পুলিশ আসে, স্থানীয় বিধায়ক আসেন। ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, পার্টি কমপ্লেন লেটার দেয়, সুপার সেটা গ্রহণ করেন এবং কথা দেন যে তদন্ত হবে। আমরা নিচে নেমে আসি এবং আবার এমার্জেন্সিতে ডিউটি শুরু করি।
মিনিট পাঁচ-দশের মধ্যে আবার প্রচুর লোক ফিরে আসে, এবং পুলিশের সামনেই শুরু হয় হুমকি, তর্কাতর্কি, ধাক্কা ধাক্কি।
এক মহিলা আমাকে দেখিয়ে বলেন, -তুই ছিলি না, তুই দেখছিলি না ছেলেটাকে? খুন করে দিলি?
আমি কোনোরকমে বলার চেষ্টা করলাম, যে আমার ডিউটি শুরু হয়েছে দুটোর পর, কিন্তু তার আগেই আরো দুই মহিলা আমার ওপর চড়াও হলেন, আমার চুল ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন ঘরের কোনে, আমার শাড়ি ধরে টানছিলেন আরো একজন, চোখ থেকে ছিটকে পড়লো আমার চশমা, সব ঝাপসা হয়ে গেলো।.. জ্ঞান হারাবার আগে,আমার ছেলেটার মুখ মনে পড়লো, ওরও বয়েস দশ…
“আমার ডান হাত রড দিয়ে গুঁড়িয়ে দেবে,
আমি বাম হাতে স্টেথো আঁকড়ে থাকবো।
আমার পা দুটি লাঠির আঘাতে পিষে দেবে,
আমি ক্রাচে ভর দিয়ে ও.টি. তে দাঁড়াবো।
আমার বুকে-পেটে অসহ্য পদাঘাত হানবে,
আমি এমার্জেন্সিতে অতন্দ্রপ্রহরী থাকবো।
আমার রক্তে উন্মত্ত হোলি খেলা খেলবে,
আমি ব্যাণ্ডেজ মাথায় তোমাকে রক্ত চালাবো।”
-প্রমোদ রঞ্জন রায়
২ অগাস্ট
হোয়াটস্যাপ আপডেট
(একটি জেলা সদরের মেডিকেল কলেজ থেকে)
রাত এগারোটার একটু পরে একজন chronic renal failure patient emergency তে আসে, urea 140, creatinine 10 with respiratory failure… Emergency Room এ Intern attend করে I
Medicine ward-এ ফোন করে জানা যায় কোন বেড নেই… ইন্টার্ন ছেলেটি patient -কে observation-এ রাখে… বাড়ির লোকজনকে বলে বেড ফাঁকা হলেই admission নিয়ে নেবে…বাড়ির লোক তখন থেকেই ঝামেলা শুরু করে
…অনেক লোকজন ছিল…in the meantime patient খারাপ হয়…Intern ছেলেটি তাড়াতাড়ি ট্রলি বন্দোবস্ত করে রোগীকে ward-এ shift করে…ward-এ যাওয়ার পর patient expire করে…এরপর পার্টি ER এসে ছেলেটির গায়ে হাত তোলে…ছেলেটি কোনমতে পালিয়ে গিয়ে paediatric ward-এর একটা টয়লেটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়…
পার্টি পেছন পেছন ছুটে যায়…ওয়ার্ডের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে…ওয়ার্ডের নার্স, আয়া মাসি আর ভর্তি হওয়া বাচ্চার মায়েরা ভেতর থেকে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে সেটা আটকায়…ওয়ার্ডে কর্মরত মহিলা ডাক্তাররা রোগীর বেডে শুয়ে পড়েন, পেশেন্ট সেজে, প্রাণভয়ে…দরজা ভাঙেনি…ভাঙতে পারলে একজন ডাক্তারের অবধারিত মৃত্যু হতো…যাই হোক ছেলেটি বাঁচার জন্য টয়লেটের ভেতর থেকে হস্টেলে বন্ধুদের ফোন করে…তারপর গোটা হস্টেলের শ’দুয়েক ছেলে ছুটে আসে…একটা খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয় পার্টি আর ছেলেদের…এর মধ্যে মিডিয়া এসে পড়ে… চিকিৎসক এবং সাংবাদিক সহ বেশ কিছু মানুষ আহত হন…