-কী ভাগ্য আপনাদের ডাক্তারবাবু, প্রাইভেট প্র্যাকটিসে রিটায়ারমেন্ট নেই ।বসলেই টাকা।
-ঠিক বলেছেন। আমি যখন ৩২ বছর অবধি বিছানায় বই নিয়ে শুয়েছিলাম, আপনি বউ নিয়ে। আমি অসুস্থ হয়ে চেম্বারে না বসলে, কোনো রোজগার নেই, মাসের শেষে মাইনে নেই,পুজোর বোনাস নেই।
– কিন্তু এখন তো আপনার দায়দায়িত্ব কমে গেছে, ছেলে মেয়ে বড়, স্বাবলম্বী। এখন তো কম ফিস নিয়ে রোগী দেখতে পারেন।
– দেখুন দাদা, বাজার আর বাজারদর বলে একটা কথা আছে। আমি কম টাকায় রোগী দেখলে বাজারটা নষ্ট করে দেবো। যে ছেলেটা পাশ করে প্রাকটিস শুরু করেছে, তার থেকে কম ফিস নিলে লোকে আমার কাছে ভিড় করবে, কিন্তু তার সংসারটা কী করে চলবে বলতে পারেন! আর সবার জন্য স্বাস্থ্য তো সরকারকে ভাবতে হবে,তাই না।
-পুজোয় কী করছেন?
-ঘুরতে যাচ্ছি।
-সে কী, ইমার্জেন্সী হলে লোকে যাবে কোথায়?
-কেন, হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তার থাকবে। আমারও বউ বাচ্চা আছে।
-আচ্ছা, আপনি এমারজেন্সিতে ফোন ধরেননা কেন?
-রাখালের পালে বাঘ পড়ার গল্পটা জানেনতো। আগে সব ফোন ধরতাম। তারপর পটিতে কেন টক টক গন্ধ, নুঙ্কুতে একটা সাবুদানার মতো কী হয়েছে, কন্ডম ফেটে গেছে বলে রাত দুটোয় ফোন। আপনি হলে কী করতেন?
-কমিশনের জন্যে এতো পরীক্ষা করেন,তার বেলা?
– যদি পরীক্ষা না করে ওষুধ দি,রোগ সরলো না, রোগী খারাপ হলো। আপনিই তো বদনাম দিয়ে বলবেন, কেস ধরতে পারলো না, তারপর কেস করবেন, না হলে ভাঙচুর। আপনিই বলুন আমার জায়গায় থাকলে আপনি কী করতেন।
আপনার দাদা, ভাই, বোন, শালা, পাশের বাড়ীর ছেলেটাই ডাক্তার হয়। যে আপনার সাথে খেলতো, যে আপনার সাথে ক্লাস কেটে সিনেমা দেখতো, সেইই আজ ডাক্তার। আপনি যেমন ভাবেন, সেও তেমনি ভাবে, দুজনেই একই সমাজ থেকে উঠে এসেছেন। সামাজিক অবক্ষয় দুজনকে আর দুজনের পেশাকে একই রকম ভাবে ছুঁয়েছে। শুধু একটা কথা মনে করাই, কোভিডের সময়ে যে সকল চিকিৎসকেরা প্রাণ দিলেন তাদের পরিবারের কথা কে ভাবছে, কজন মারা যাবার পর তাদের পরিবার সরকারের ঘোষিত টাকা পেয়েছে কী না কে আর খোঁজ রাখছে।