এই মূহুর্তে সব চ্যানেলে চ্যানেলে যে খবরটি শিরোনামে, তা হলো কোভ্যাক্সিনের চেয়ে কোভিশিল্ডে এন্টিবডি নাকি বেশি পাওয়া যাচ্ছে!
আধুনিক সাংবাদিকতার এ আরেক উৎকৃষ্ট উদাহরণ যার কাজ সম্পূর্ণ গবেষণাপত্রটিকে না পড়ে কিংবা না বুঝে শুধুমাত্র নিজের সুবিধামত অংশটি যেটি চাঞ্চল্যকর হবে, তাকে তুলে ধরা।
আমরা জানি যে, SARS-COV 2 ভাইরাস একটি আণুবীক্ষণিক জীব যা একটি জীবন্ত দেহকোষে নিজের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে। এটির বাইরের স্তরের থেকে স্পাইক প্রোটিন নামে একটি প্রোটিন বাইরের দিকে বেরিয়ে রয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিনটিতে একটি রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইন (RBD) রয়েছে। মানবদেহের কিছু কোষে ACE 2 (angiotensin-converting enzyme 2) রিসেপ্টর রয়েছে। এই কোষগুলি মূলত নাক, গলা, হার্ট, কিডনি, ফুসফুস ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিন আরবিডি ডোমেইনের মাধ্যমে মানব কোষগুলির ACE-2 রিসেপ্টারের সাথে সংযুক্ত হয় এবং সেভাবেই SARS-COV2 ভাইরাসটি মানুষের দেহে প্রবেশ করে। এখন কেবল সেই অ্যান্টিবডিগুলি যারা আরবিডি সম্পর্কিত নির্দিষ্ট তারাই এই মারাত্মক ভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ সুরক্ষা প্রদানে সহায়তা করতে পারে এবং সর্বাধিক কার্যকরী হতে পারে । এই আরবিডি অ্যান্টিবডিগুলি সাধারণ টাইটার স্তর বা স্কোরের মাধ্যমে পরিমাপ করা যায় না, যা আমরা অ্যান্টিবডিগুলির সাধারণ স্তর পরিমাপ করতে ব্যবহার করি। সাধারণ অ্যান্টিবডি টাইটার সব ধরনের অ্যান্টিবডি টাইটার পরিমাপ করে যা আমাদের দেহ যে কোনও একটি অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে তৈরি করে (এই ক্ষেত্রে সেই অ্যান্টিজেনটি করোনা ভাইরাস)।
যখন SARS-COV2 ভাইরাস একটি মানব কোষকে সংক্রমিত করে, ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রথমে অ্যান্টিবডি ইমিউনোগ্লোবুলিন এম (IgM) তৈরি করে। অসুস্থতার ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে, দেহে আরও চারটি অ্যান্টিবডি বিকাশ হয় –
(ক) ইমিউনোগ্লোবুলিন জি বা IgG।
(খ) নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি বা NaB।
(গ) অ্যান্টি-স্পাইক অ্যান্টিবডি।
(ঘ) আরবিডি নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি।
আমাদের বুঝতে হবে যে প্রধান অ্যান্টিবডি যা কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধ করে, তা হ’ল আরবিডি নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি। দ্বিতীয়টি হ’ল নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডিগুলি (NaB) নিরপেক্ষ করা, যা সরাসরি অ্যান্টিজেনগুলি নিরপেক্ষ করে ভাইরাস থেকে আমাদের রক্ষা করে।
তাই, অ্যান্টি-স্পাইক অ্যান্টিবডি এবং নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি টাইটার (NaB) দু’টো এক নয়। এনএবি আদপে অ্যান্টিবডি স্পাইকের একটি অংশমাত্র। একজন কতটা সুরক্ষিত, সেটা কত শতাংশ অ্যান্টি-স্পাইক অ্যান্টিবডি তাঁর মধ্যে রয়েছে, তা নির্ধারণ করার একমাত্র মাপকাঠি নয়।
আর তথ্যের খাতিরে জানিয়ে রাখি, এখনও অবধি, ভারতে পাওয়া যাচ্ছে এমন কোনও টিকা নেই (কোভিশিল্ড বা কোভাক্সিন বা স্পুটনিক ভি), যা গবেষণা দ্বারা প্রমানিত হয়েছে যে তারা আরবিডি নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গবেষকদল বলেছেন যেটা সংবাদমাধ্যম সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গেছে যে, টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন, এমন সংখ্যা কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে ৫.৫ শতাংশ এবং কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে ২.২ শতাংশ।
এবার আপনারাই ঠিক করুন, এরপরেও কোভ্যাক্সিন পাওয়া লোকেরা কি আতংকিত হবেন? কোভিশিল্ডের অপেক্ষায় বসে থাকবেন? এই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যে ভ্যাক্সিন আগে পাচ্ছেন নির্দ্বিধায় নিয়ে নিন, সবকটিই আপনাকে সুরক্ষা দেবে,যা এই মুহূর্তে খুবই প্রয়োজনীয়।