গত ২২ মার্চ ,২০২৫ ছিল বিশ্ব জল দিবস। সারা দেশের পাশাপাশি আমাদের আনন্দ নগরী কোলকাতাতেও পালন করা হলো এই বিশেষ দিনটি। তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে তিলতিল করে গড়ে উঠেছে এই শহর । বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তার গরিমা। এই সব পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে আজও বয়ে চলেছে গঙ্গা নদী, কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গের প্রাণধারা।
এখন নিয়মকরে কলকাতা ও হাওড়া শহরের বেশ কয়েকটি ঘাটে চলছে সন্ধ্যারতির জমজমাট পর্ব। সেই উপলক্ষে ঘাটে ঘাটে শ্রদ্ধালু মানুষজনের ভিড় বাড়ছে। সমবেত জনতার সম্মিলিত কন্ঠে উচ্চারিত – গঙ্গা মাঈকী জয় ধ্বনিতে কেবলমাত্র তীরের জমিতেই আলোড়ন উঠছে না, নদীর জলও নিশ্চয়ই আনন্দে বিহ্বল হয়ে তরঙ্গের মধ্য দিয়ে তাঁর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। এসবে কোনো অন্যায় বা ভুল নেই। তবে একটা বিনম্র প্রশ্ন আছে। প্রশ্নটা হলো এই যে – এতো সব কাণ্ড করার পর মা গঙ্গার জলের গুণগত মানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে? তার তীরে বসবাসকারী মানুষের নদী সম্পর্কে, তার জলের শুদ্ধতা বজায় রাখার বিষয়ে কোনো গভীর ভাবনার সঞ্চার হয়েছে? এর উত্তর হলো – না।
কোন্ তথ্যের ভিত্তিতে এই কথা বলছি? আন্তর্জাতিক জল দিবস উদযাপন উপলক্ষে কোলকাতার দ্য সী এক্সপ্লোরার’স এসোসিয়েশন, জাতীয় সমরশিক্ষা বাহিনী ও ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের সহযোগিতায় কলকাতার সুন্দরী ঘাটে গঙ্গা পরিচ্ছন্নতা প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে এক প্রতীকী নদী সাফাই কর্মের আয়োজন করে। নদী সাফাই অভিযান – তাই এই কর্মসূচিতে সামিল করা হয়েছিল নদীর বুকে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকা জেলে ভাইরা ; ছিলেন মাঝিমাল্লারা , নদীর তীরে বিভিন্ন জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসা বিক্রেতারা এবং অবশ্যই নদী সাফাইয়ের কাজে যুক্ত সাফাই কর্মীরা।
মাত্র দু ঘন্টার এই অভিযানে ১০০ বর্গ ফুটের মেছো জাল ব্যবহার করে গঙ্গার জল ছেঁকে ১৬২ কিলোগ্রাম আবর্জনা উদ্ধার করা হয়েছে। কী কী রয়েছে এই উদ্ধার করা বর্জ্যের তালিকায়? শীর্ষ স্থানে অবশ্যই প্লাস্টিকের বোতল – জল পান বা ঠাণ্ডা পানি পান করার পরে যাদের অনিবার্য গন্তব্য গঙ্গা মাঈয়ার পানি ; আর রয়েছে ছেঁড়া প্লাস্টিকের টুকরো টাকরা, পলিস্টিরিন উপাদান, রবারের তৈরি ছেঁড়া চপ্পল, ডিসপোজেবল কন্টেনার এবং পার্টিতে মৌতাত জমানোর জন্য ব্যবহৃত নিষিদ্ধ ড্রাগস। পাওয়া গিয়েছে মৃত মাছ ও চিংড়ির শবদেহ। সম্ভবত নদীর জলের দ্রবীভূত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের অনিয়ন্ত্রিত উপস্থিতির কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। পাপীদের পাপ ধুতে ধুতে গঙ্গা নদী আজ সত্যিই ময়লা হয়ে উঠেছে।
সী এক্সপ্লোরার’স এর সম্পাদিকা সুদেষ্ণা চ্যাটার্জি জানিয়েছেন যে আগামী দিনে কলকাতার মোট ২০ টি ঘাটে এই ধরনের সাফাই অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। তবে বিষয়টি যেহেতু অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ সেহেতু সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান শ্রী কল্যাণ রুদ্র – মানুষ ও নদীর সুদীর্ঘ সম্পর্কের কথা নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছেন।
একদিকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে, নদীর উৎস হিসেবে গণ্য হিমবাহের গলন নতুন শঙ্কা জাগাচ্ছে সকলের মনে, বিশ্বজুড়ে ক্রমশই বাড়ছে বৃষ্টিপাতের অনিয়ম , গরম পড়তে না পড়তেই চারিদিকে ধ্বনিত হচ্ছে পানীয় জলের হাহাকার – এমনই এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের পানীয় জলের প্রধানতম উৎসধারাটিকে নির্বিচারে নোংরা, দূষিত করে চলেছি । একবার ভেবেও দেখছিনা যে এমন অপকর্মের বিষময় পরিণতি আমাদের কোন্ বিকাশের পথে নিয়ে যাচ্ছে! বিকাশ আর বিণাশ দুটিই খুব কাছাকাছি গায়ে গা লাগিয়ে থাকা শব্দ। আজ কোনটাকে বেছে নেবো তা খুব গভীর ভাবে ভাবার সময় এসেছে। এসব নিয়ে কবে গণজাগরণ হবে। আপাতত তারই পথ চেয়ে থাকতে হবে আমাদের।
ঋণ স্বীকার – টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন।
মার্চ ২৪, ২০২৫
সমস্যা হলো আমাদের প্রকৃতি রক্ষার কোন ইছেই নেই। যেদেশে নদী কে মা বলা হয় পুজো করা হয় সেদেশে নদীতে যা খুশি ফেলা হয় যেমন খুশি দূষণ করা যায় আর যে দেশে নদী শুধুই নদী হিসেবে বিবেচিত হয় সেদেশে নদী পরিষ্কার থাকে
সুমন! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। মন্তব্যের প্রথম বাক্যটিতেই আপনি সার কথা বলেছেন। আম জনতার মধ্যে পরিবেশ সচেতনতার লেশ মাত্র নজরে পড়েনা। একটা চালু দেশি প্রবাদের কথা মনে পড়লো — আমরা যে পাতে খাই, সেই পাতেই অপকর্ম করি। আমরাও যে পরিবেশের অংশ সেটা যতদিন না উপলব্ধি করতে পারছি ততদিন এমনই চলতে থাকবে।
লেখাটি পড়ে শুধু একটি কথাই বলতে ইচ্ছে করছে গঙ্গা নদীকে– এতো অবমাননা সহ্য করেও ও গঙ্গা বইছো কেন?
ধন্যবাদ জানাই আপনাকে মতামত জানানোর জন্য। গঙ্গাকে সাক্ষী রেখেই আমরা আমাদের পাপের বোঝা বাড়িয়েই চলেছি। গঙ্গা আরতি কোনো সমাধান নয়। যেদিন নদী শুকিয়ে যাবে সেদিন হয়তো নদীর দুঃখ টের পাবো। ততদিনে অনেক অনেক দেরি হয়ে যাবে।
এসব নিয়ে ভাবার লোক কম! উচ্ছল জীবন বয়ে চলেছে।কখন যে নর্দমায় পড়ে যাবে কে জানে!
হাল ছেড়ো না বন্ধু,কন্ঠ ছাড়ো জোরে,
দেখা হবে তোমার সনে, মুক্ত নদীর তীরে।
Oshonkhyo dhanyobad lekhatir jonyo. Dushon protirodher ei procheshta shafol holeyi bhalo. Bhobishyot ghor ondhokar dekhachchey.