বাগমারী খাল পাড়ের বস্তিবাসী ২০২টি পরিবারের হাতে আজ অত্যাবশ্যক ত্রাণসামগ্রী তুলে দিল স্বাস্থ্য শিক্ষা নির্মাণ। সহযোগিতায় ছিল বস্তিবাসী শ্রমজীবী অধিকার রক্ষা কমিটি এবং ভাষা ও চেতনা সমিতি।
বাগমারী বস্তিতে সকলে যখন পৌঁছালাম, তখন সকাল দশটা। এসেছেন, ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ, রাতুল, নিবেদিতা, মুনমুন, ঋভু্, পিয়ালিদি এবং আরও কয়েকজন। আছেন ভাষা ও চেতনা সমিতির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ইমানুল হক।
এই বস্তিগুলি যে কতটা নোংরা হতে পারে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। লকডাউন চলছে। কিন্তু বস্তিতে ঢুকলে তা বোঝার কোনও উপায় নেই। ছোটো ছোটো বাচ্চারা দিব্যি খালি পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদেরকে ধমক লাগানো হলো চটি পরে আসার জন্য। কেউ পরে এলো, কেউ এলো না। চটি থাকলে তো পরবে। মাস্ক পরতে বলায় কেউ শাড়ির আঁচলে মুখ লুকালেন, কেউ গামছা বেঁধে এলেন।
এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এখানে এসেছিলেন, কাগজ কলগুলিতেও কাজ করার জন্য। দুটো টাকা আর পেট ভরে খাবারের লোভে খালের পাশে ঝুপড়ি বানিয়ে থাকতে আরম্ভ করেছিলেন। সবুজ ধানক্ষেত, বিস্তীর্ণ আকাশ ছেড়ে এই দূর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলেন। এই কুৎসিত পরিবেশের প্রভাবে তাঁরাও অনেকে পাল্টে গেছেন। পুরুষরা কাজ না থাকলে সকাল থেকে মদ খেতে শুরু করেন। মহিলারা শিশুদের সামনেই কদর্য ভাষায় ঝগড়া করেন।
তবে পাঁকে হামেশাই পদ্ম ফোটে। নুরুদ্দিন সেরকম একটি পদ্ম। এই পরিবেশে থেকেও উচ্চমাধ্যমিকে চোখ ধাঁধানো ফলাফল করে জয়পুরিয়া কলেজে পড়ছে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা তাকে বস্তিবাসীদের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়নি। সে বস্তিবাসীদের আরও আপন হয়ে উঠেছে। আমরা পৌছানোর সাথে সাথে নুরুদ্দিন হাসি মুখে এগিয়ে এল। এগিয়ে এলো আরও কয়েকটি মেয়ে। তাদের ব্যবস্থাপনায় সুশৃঙ্খল ভাবে সকলে লাইনে দাঁড়ালেন।
এভাবে ত্রাণের মাধ্যমে গ্রহীতার আদৌও কোনো দীর্ঘমেয়াদি উপকার হয় কিনা সেটা তর্ক সাপেক্ষ। তবু যদি হাতে হাত রেখে বিপন্ন সময়টুকু পার করা যায়।