নিশিতে যাইও ফুলবনে/ –রে ভোমরা/ নিশিতে যাইও ফুলবনে
বী অর্কিড তথা মৌমাছি অর্কিড। এর ফুলের ডিজাইন এমন যে মৌমাছি তার ওপর বসে। আহা, মৌমাছি ফুলের ওপর বসবে এতে আর অবাক হবার কী আছে? মধু খেতে চিরকাল মৌমাছি ফুলের ওপর বসে এসেছে।
কিন্তু না, বী অর্কিডের ওপর মৌমাছি মধু খেতে বসে না। তারা ফুলের সঙ্গে সঙ্গম করতে বসে। বী অর্কিডের ফুলের একটা অংশ ঠিক স্ত্রী মৌমাছির জননাঙ্গের মত। (চিত্র ১) তার ওপর ‘সঙ্গমে’ বসে পুরুষ মৌমাছিরা।
সঙ্গমের মত করে তারা অঙ্গ সঞ্চালন করে। (চিত্র ২) এবং অর্কিডের পরাগ তার গায়ে লাগে। আবার সেই পুরুষ মৌমাছি অর্কিড ফুলে বসে, এবং ফুলের পরাগ-সংযোগ হয়। ভুল, সবই ভুল/ এই জীবনের পাতায় ফুলেতে যা লেখা, সে ভুল। আহা, বোকা মৌমাছিকে কেউ যদি বলে দিত অর্কিড ফুল তাকে এপ্রিল ফুল করছে!
তবে মৌমাছি একা নয়। মৌমাছি, বোলতা, এমনকি মাকড়সাদেরও প্রেমের জালে জড়িয়ে ফেলে এক-একটি প্রজাতির অর্কিড ফুল। এদের অধিকাংশই ওফ্রিস (Ophrys) গণ-এর অর্কিড। স্মার্ট বলে গাছেদের তেমন খ্যাতি নেই। কিন্তু মিলিসেকেন্ডের মাপে কাজ করা বোলতা মৌমাছি মাকড়সার স্নায়ু মিলিয়ন বছরের মাপে কাজ করা অর্কিড-বিবর্তনের কাছে হেরে যায়।
বড়রা চিরকাল বলে এসেছেন বটে সেক্স অতি বিপজ্জনক জিনিস। তবে যৌবন কথা শোনে না। বহ্নিতে পতঙ্গ যথা জ্বলে মরে। কিন্তু বহ্নি দিয়ে পতঙ্গ সেক্স-সঙ্কেত পাঠায়, সেটা বেশ কুল ব্যাপার। অবশ্য পতঙ্গের বহ্নিও কুল। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কুল কুল জোনাকির আলো। জোনাকিরা সেক্সের হাতছানি দেয় তাদের ‘বহ্নি’ দিয়ে।
জোনাকি কিন্তু একটা মাত্র প্রজাতি নয়, অনেকগুলো প্রজাতি। তাদের একে অপরের সঙ্গে সহবাস নেই। এক একটি প্রজাতির জোনাকির স্ত্রীদের বহ্নি-সঙ্কেতের নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আছে। দপ-দপ-দপ … দপদপ-দপদপ এইরকম কিছু প্যাটার্ন। এক প্রজাতির প্যাটার্নের সঙ্গে অন্য জনের প্যাটার্ন মেলে না। তাই পুরুষ জোনাকি তার নিজের প্রজাতির বাইরে অন্য স্ত্রী জোনাকির ডাক শুনলেও ‘তোমার ডাকে সাড়া দিতে বয়েই গেছে’ বলে গোমড়ামুখে চলে যায়।
কিন্তু ফোটুরিস (Photuris) স্ত্রী-জোনাকিরা ভারি সেয়ানা। তারা নিজেদের পুরুষদের ডাকার জন্য একধরনের বহ্নি-সঙ্কেত ব্যবহার করে, আর ফোটিনাস (Photinus) পুরুষদের ডাকার জন্য আরেক বহ্নি-সঙ্কেত ব্যবহার করে। দ্বিতীয় সঙ্কেত একেবারে ফোটিনাস স্ত্রীদের পাঠানো সঙ্কেতের মত। সে ডাক শুনে ফোটিনাস পুরুষরা সঙ্গমলোভে আসে, এবং ফোটুরিস স্ত্রী-জোনাকিরা তাদের… আজ্ঞে না, তারা অমন চরিত্রহীন নয় যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাতছানি দিয়েছে বলেই যাকে তাকে বেডরুমে তুলবে। তারা ফোটুরিস পুরুষদের স্রেফ খেয়ে ফেলে (চিত্র ৩)।
বহ্নি পতঙ্গের কাহিনী। বা বসন্তের সমাগমে এপ্রিল ফুল বানানোর কাহিনী।
ডিসক্লেইমারঃ চলতি নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি শুনে ভোট দিচ্ছেন যারা, এই লেখা তাঁদের নিয়ে নয়।