হাইপারটেনশন ও হৃদরোগ
হাইপারটেনশনের রোগীদের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হৃদরোগ। রক্তচাপ বেশি থাকার জন্য শরীরে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখার জন্য হৃদপিণ্ডকে বেশি কাজ করতে হয়। অতিরিক্ত চাপের বিরুদ্ধে রক্ত ঠেলে পাঠাতে গিয়ে আমাদের হৃদপিণ্ডের মাংস পেশী আস্তে আস্তে পুরু হয়ে যায় এবং হৃদপিণ্ডের আকার বেড়ে যায়।
যেহেতু আমাদের হৃদপিণ্ডের বাম নিলয় (Left ventricle) সংকুচিত হয়ে সারা দেহে রক্ত ঠেলে পাঠায়, তাই সবার প্রথমে বাম নিলয় বড় হয়ে যায় (লেফট ভেন্ট্রিকুলার হাইপারট্রপি)। আস্তে আস্তে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে করতে হৃদপিণ্ড একসময় দুর্বল হয়ে যায়। একে বলে হার্ট ফেলিওর। যার ফলে রোগী সামান্য পরিশ্রম করলেই হাঁপিয়ে যান।
হাইপারটেনশনের রোগীদের ধমনীর দেওয়ালে কোলেস্টেরল জমা হয়, যাকে অ্যাথেরো-স্ক্লেরোসিস বলে। এর ফলে ধমনী সরু হয়ে যায় এবং তার মধ্যে রক্ত চলাচল হ্রাস পায়। হৃদপিণ্ডের ধমনীকে করোনারি আর্টারি বলে। এই করোনারি আর্টারির অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলে হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা আরও কমে যায়। যা আমাদের কাছে হার্টের ইশ্চেমিয়া নামে বেশি পরিচিত। হঠাৎ করে এই অ্যাথেরোস্ক্লেরোটিক প্লাগ ফেটে গিয়ে সম্পূর্ণ করোনারি আর্টারি ব্লক হয়ে যেতে পারে। যার ফলে হৃদপিণ্ডের কোনো অংশে রক্তচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একে বলে হার্ট অ্যাটাক। সময় মতো চিকিৎসা না হলে এর থেকে মৃত্যুও হতে পারে।
হাইপারটেনশনের সাথে নিম্ন লিখিত রিস্ক ফ্যাক্টরগুলি হৃদরোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দেয়ঃ
- বয়স (পুরুষদের >৫৫ বছর, নারীদের > ৬৫ বছর)।
- পুরুষদের হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- ডায়াবেটিস।
- ধূমপান।
- দৈহিক স্থূলতা।
- রক্তের কোলেস্টেরলের গণ্ডগোল। খারাপ কোলেস্টেরল(LDL ও ট্রাইগ্লিসারাইড) বেশি এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কম।
- পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস।
- কিডনির সমস্যা।
চিকিৎসাঃ
রিস্ক ফ্যাক্টরগুলি এড়িয়ে চলা। যেমন ধূমপান বন্ধ করা, জীবনযাপনে শৃঙ্খলা, পরিমিত ও প্রয়োজনীয় পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত এবং সঠিকভাবে খাদ্য গ্রহণ, লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত ও পরিমিত শারীরিক শ্রম বা ব্যায়াম করা ইত্যাদি।
নিয়মিত ওষুধদের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। সাধারণত হার্টের সমস্যা থাকলে বিটা ব্লকার জাতীয় ওষুধ (যেমন অ্যাটেনলঅল, মেটোপ্রোলঅল ইত্যাদি) এবং আঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম ইনিহিবিটার (যেমন- এনালাপ্রিল) দেওয়া হয়। হার্ট ফেলিওর থাকলে ডাইউরেটিক জাতীয় ওষুধ (যেমন- ফ্রুসেমাইড) দেওয়া হয়। তবে কোন ওষুধ দেওয়া হবে সেটা নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসকের সিদ্ধান্তের উপর। কখনই চিকিৎসকের উপদেশ ছাড়া কারো কথায় কোনো ওষুধ খাওয়া উচিৎ নয়।
এছাড়াও হার্টের অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসক নানারকম ওষুধ দিতে পারেন। হার্টের অবস্থা বোঝার জন্য বিভিন্ন রকম পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন ইসিজি(ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম), ইকোকার্ডিওগ্রাফি, অ্যাঞ্জিওগ্রাফি ইত্যাদি।
তবে এটা মনে রাখতে হবে হৃদরোগ থাকলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। তাছাড়া ডায়াবেটিস বা ডিসলিপিডেমিয়া থাকলে সেগুলিও নিয়ন্ত্রণে রাখা সমান জরুরী। এবং যেকোনো সমস্যায় চিকিৎসকের মতামত নেওয়া জরুরী।
সুন্দর, অনেককিছু জানতে পারছি