পূর্বপ্রকাশিত আমার লেখার পরিপ্রেক্ষিতে সুচিকিৎসা পত্রিকায় নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলি পাঠকদের কাছ থেকে আসে। সেগুলোর উত্তর আমি এবারের সুচিকিৎসা সংখ্যায় লিখেছি।
ডাঃ সায়ন পাল
১. আমার বয়স ৪৩। আপনার লেখা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। সম্প্রতি আমার ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পরেছে। এখন আমার চিকিতসার জন্য কি ভাবে এগোনো উচিত?
ইন্দ্রাণী ধর,হুগলী
ইন্দ্রাণী দেবী, প্রথমেই বলে রাখি ব্রেস্ট ক্যান্সার এর চিকিৎসার ফলাফল খুবই ভালো এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্রেস্ট ক্যান্সার পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব। তাই সাহস হারাবেন না সঠিক চিকিৎসা করান।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাধারণত অনেকগুলি পদ্ধতির চিকিৎসা পরপর করতে হয়। অপারেশন, রেডিয়েশন, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, টারগেটেড থেরাপি প্রয়োজন হতে পারে। ক্যান্সারের স্টেযের ওপর নির্ভর ক’রে কি কি চিকিৎসা লাগবে আর কোনটা আগে কোনটা পরে তা ঠিক করা হয়। একমুহূর্তে আপনার উচিত এমন একটি হাসপাতালে যাওয়া যেখানে এই সবকটি সুবিধা আছে অর্থাৎ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যান্সার ডিপার্টমেন্ট আছে। ক্যান্সার চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতির ডাক্তার বাবুরা সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন আপনার অসুখের স্টেজ ও বিভিন্ন হরমোন রিসেপ্টর পজিটিভিটি স্টেটাসের ওপর ভিত্তি করে কোন চিকিৎসাটা আগে হবে কোনটা পরে। সেই অনুযায়ী আপনার চিকিৎসার পুরো প্রটোকল তৈরি হবে আর চিকিৎসা হবে। কোনভাবেই দেরি না করে যে হাসপাতালে ক্যান্সার ডিপার্টমেন্ট আছে সেখানে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্যান্সার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২. ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে কিনা জানার জন্য কি ধরনের পরীক্ষা প্রয়োজন?
সোমা মাল্লা, শ্যামনগর
ব্রেস্ট ক্যান্সার ডায়াগনোসিসের জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে
প্রথমঃ ব্রেস্ট সেল্ফ এক্সামিনেসন বা নিজে নিজে পরীক্ষা করা ব্রেস্ট-এ কোন লাম্প বা গুটলি হয়েছে কিনা। মাসে একবার এই পরীক্ষা করা উচিত।
দ্বিতীয়ঃ খুব সহজ একটি এক্স-রে পরীক্ষা যার নাম ম্যামোগ্রাম। ৪০ বছরের উর্ধ্বে মহিলারা বছরে একবার এই পরীক্ষা করান।
তৃতীয়ঃ ডাক্তারবাবুকে দিয়ে পরীক্ষা করান। বছরে একবার ডাক্তারবাবুকে দিয়ে পরীক্ষা করান।
উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো হল স্ক্রিনিং টেস্ট।
আর যদি কোন গুটলি ব্রেস্ট বা বগলে তৈরি হয় তাহলে কি করে বুঝবেন তা ব্রেস্ট ক্যান্সার কিনা? এর জন্য কতগুলো সহজ পদ্ধতি আছে। ম্যামোগ্রামের মাধ্যমে সহজেই আইডিয়া করা যায় ব্রেস্ট-এর গুটলিটি ক্যান্সার না বিনাইন মানে ক্যান্সার নয়। ম্যামোগ্রাম যদি ক্যান্সার এর দিকে ইশারা করে তাহলে সহজেই বায়োপসি করে নির্দিষ্ট করে বলা যায় সেটি ক্যান্সার কিনা। অনেকক্ষেত্রে কমবয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট-এর ঘনত্ব বেশি থাকায় ম্যামোগ্রামে ভালো ছবি আসে না সেক্ষেত্রে এম আর আই টেস্ট খুবই কার্যকরী।
৩. ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে কি ব্রেস্ট কেটে বাদ দেওয়া হয়?
তাপসী চ্যাটার্জি, দুর্গাপুর
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রথমেই জানাই না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখন ব্রেস্ট করজার্ভ করে বা ব্রেস্টকে বাঁচিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা সম্ভব। এর পেছনে রয়েছে রেডিয়েশন চিকিৎসা ও কেমোথেরাপি চিকিৎসার অভাবনীয় উন্নতি। এখন একমাত্র খুব এডভান্স স্টেজ ক্যান্সার না হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্রেস্ট পুরো কেটে বাদ দিতে হয় না। শুধু টিউমার (ক্যান্সার)-টি কেটে বাদ দিয়ে রেডিয়েশন চিকিৎসার সাহায্যে বাকি চিকিৎসা করতে হয়। যদি টিউমার খুব বড় হয় সেক্ষেত্রে আগে কেমোথেরাপি দিয়ে তাকে ছোট করেও ব্রেস্ট বাঁচিয়ে অপারেশন সম্ভব তবে সব ক্ষেত্রেই রেডিয়েশন চিকিৎসা দিতেই হবে।
৪. আপনার লেখায় টার্গেটেড থেরাপি পড়লাম এটি কি?
বুলবুল সাহা / নৈহাটি
ব্রেস্ট ক্যান্সার কোষ এর মধ্যে একটা জিনিস আবিষ্কার হয়েছে যা ব্রেস্ট ক্যান্সারের বৃদ্ধি পেতে প্রয়োজন তার নাম হার টু নিউ। বিজ্ঞানীরা এমন একটা ওষুধ আবিষ্কার করেছেন যা এই হার টু নিউ কে নিষ্ক্রিয় করে দেয় ফলে ক্যান্সার কোষ আর বৃদ্ধি পেতে পারে না। এই ওষুধটার নাম ট্রান্সটুযুম্যাব। এইটা যেহেতু একটা স্পেসিফিক টার্গেটের ওপর কাজ করে তাই এর নাম টার্গেটেড থেরাপি।
৫. ব্রেস্ট ক্যান্সার কি ভালো হয়?
ঝুমা দত্ত, আলমপুর,। মুনমুন বারিক মেদিনীপুর
অবশ্যই ভালো হয়। যতগুলো ক্যান্সারের চিকিৎসা সাফল্যের মুখ দেখেছে তার মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সার অন্যতম। ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসার প্রভুত উন্নতি হয়েছে। অপারেশন, কেমোথেরাপি আর রেডিয়েশন চিকিৎসার বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে বিগত দশকে। আর এছাড়াও হরমোন থেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপিও এখন খুবই কার্যকরী চিকিৎসা । তাই আমরা এখন সাধারণত ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ৫ বছর বা ১০ বছর নয় ২০ বছরের ফলাফলের ভিত্তিতে চিকিৎসা পদ্ধতির সিদ্ধান্ত নিই। কাজেই ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে মোটেও ভীত হবেন না সঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।