মাঝে মাঝে হেব্বি রাগ ধরে। আমাদের নিজেদের শরীরের হাড়, যাকে খাইয়ে-দাইয়ে বড় করলাম, রেগুলার পুষ্টি জুগিয়ে গেলাম, সেই হাড় একদিন হঠাৎ করে ভোগাতে শুরু করলে- কার ভালো লাগে? সত্যি বলতে বেশ বিরক্তিকর এই হাড়ের অসুখ গুলো।
চিকিৎসা করাও বেশ কঠিন। তার একটা বড় কারণ হলো – বেশিরভাগ হাড় থাকে চামড়া ও মাংসপেশীর নিচে। সহজে প্যাথলজির জায়গায় চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়া যায় না। পারলেও সময় লাগে বেশি। বিজ্ঞান অবশ্য যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গেই সবকিছু করতে পারছে এখন।
বহু মানুষ ভাবেন – হাড় একটি নিষ্ক্রিয় কলা। কিন্তু সেটি সর্বৈব ভুল ধারণা।
হাড় কিভাবে তৈরি হয়, তার ভেতরে কি কি কোষ থাকে, তাদের কি কি কাজ, কি কি অসুখ হয়, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কি কি পরিবর্তন হয় – এসব নিয়ে বিস্তারিত করার চেষ্টা করবো কোন এক সময়।
একজন জানতে চেয়েছিলেন – হাড় বেড়ে যায় কেন? এর গূঢ় রহস্য এই পোস্টে লিখবো না। সংক্ষেপে বলি – যেসব কোষ হরমোন ও অন্যান্য বিষয় নর্মাল হাড় তৈরি করে বা হাড়ের স্বাস্থ্যকে ব্যালেন্স করে রাখে, তাদেরই অনিয়ন্ত্রিত কুকর্ম এই হাড় বাড়িয়ে দেওয়া/সেরকম কিছু অসুখ তৈরি করা।
এখানে হাড় বেড়ে যাবার কারণ গুলো সংক্ষেপে বলি:
১. হাইপারট্রফিক ওস্টিওআর্থাইটিস – reactive bone formation /ওস্টিওফাইট/সিনডেসমোফাইট ইত্যাদি তৈরি হয় – মেরুদণ্ডে কমন।
২. গাউট-এর মত নানা রকম অসুখ যাতে বিভিন্ন ধরনের ক্রিস্টাল জমা হয়ে হাড় বেড়ে যাওয়া মনে হয়। পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের কাছে এটা কমন।
৩. মাংসপেশীর টেন্ডন যেখানে লাগে , সেখানে বয়সজনিত/কোন রিপিটেড আঘাত বা অন্য অসুখ থেকে spur হতে পারে। পায়ের তলায় ও গোড়ালির পেছনে এটা কমন।
৪. হাড়ের নানা ধরনের টিউমার (মজ্জা ও কর্টেক্স দুটোতেই হতে পারে) – খুব কমন যদি বলি – ওস্টিওকন্ড্রোমা।
৫. ভেঙে যাবার পর জমা হওয়া অতিরিক্ত ক্যালাস যেটা শরীর রিমডেলিং করে দূর করতে পারেনি।
৬. জন্মগত নানান অসুখ – যেমন নানারকম ডিসপ্লাসিয়া ।
৭. অ্যাক্রোমেগালি বা একই ধরনের হরমোন রিলেটেড অসুখ।
৮. অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে বা কোন জায়গায় মাংসপেশীর অতিরিক্ত টান দীর্ঘদিন ধরে পড়ার ফলে ।
৯. কখনো কখনো ফরেন বডি – যেমন গাছের বা মাছের কাঁটা ঢুকে হাড়কে দীর্ঘদিন ধরে আঘাত দেওয়ার ফলে
১০. কিছু হাড় থাকে, যারা আপাতদৃষ্টিতে অতিরিক্ত, সবার থাকে ও না , তারা কখনো কখনো ছোট থেকে বড় হয়ে যায়।
১১. বেশ কিছু মাংসপেশীর টেন্ডনের ভেতরে মালাইচাকির মত হাড় তৈরি হয় , যারা হঠাৎ বড় হয়ে যেতে পারে।
১২. দীর্ঘদিন কোন প্রদাহ বা ইনফেকশন একটানা থাকলে সেখানে হাড় বাড়তে পারে
১৩. স্কার্ভি বা এরকম কিছু রোগ আছে যাতে হাড়ের পেরিওস্টিয়ামের নিচে জমা রক্ত হাড়ের মত হয়ে যায়।
১৪. কোন জায়গার কিছু টিস্যু মরে গেলে, যেমন মাংসপেশী বা নার্ভ বা ফুসফুস, শরীর সেখানে ক্যালসিয়াম জমাতে পারে।
১৫. কিছু হাড়ের ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে ।
১৬. বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কোন টিস্যুতে ক্যালসিয়াম জমা হলে।
এইরকম আরো অসংখ্য কারণে হাড় বেড়ে যায় বা বেড়ে গেছে মনে হতে পারে।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন – এই ফেসবুক গ্রুপে বসে রোগীকে না দেখে আর যাই হোক চিকিৎসা করা উচিত নয়। তাই ওদিকে যাবোই না। কোন একজন আধুনিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
না হলে এখানে যত পরামর্শ পাবেন ,সেসব মানতে গেলে বেশ কিছু হাড় বেড়ে যাবার বা ক্ষয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।
যেটা বলার জন্য হাড় হারামি-কে নিয়ে পোস্ট করলাম সেটা হলো – পেপার পত্রিকায়, পথে ঘাটে, ফেসবুকে দেখবেন – বহু NOCTOR, যারা হাড় এর জন্মবৃত্তান্ত থেকে শুরু করে তার স্বাস্থ্য কিভাবে ভালো রাখা যায়, সেসবের সামান্যতম জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও হাড়ের রোগের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ বলে ঢাক পিটিয়ে বেড়ায়। কেউ কেউ গোপনে চিকিৎসা করার প্রতিশ্রুতিও দেয়!! কেউ কেউ হাতুড়ি ছেনি দিয়েও নাকি চিকিৎসা করে ফেলেন!!
ইদানিং আমি খোঁজ পেয়েছি আরেক দল বিশেষজ্ঞদের। তারা কি করেন শুনবেন? তেল মাখান! কি তেল জানিনা, তবে তাদের তেল মাখানোর খরচ আধুনিক চিকিৎসার চেয়ে বেশি – এ তথ্য রোগীর থেকে জেনেছি। ফলাফল – কঠিন ভাঙাচোরা, হাড়ের ক্যান্সার , ইনফেকশন – এই সবকিছুর চিকিৎসার জন্য বহু মানুষ তাদের কাছে ছুটে যান। কয়েকজন আবার আধুনিক চিকিৎসকের কাছে বারবার এক্সরে করতে পাঠান মাসখানেক তেল মাখিয়ে।
বিশ্বাস করুন – একজন রোগীরও হাড় জোড়া লাগেনি (যতটুকু শরীর নিজে থেকে করে সেটি ছাড়া), ক্যান্সার সারেনি, জীবাণু মরেনি।
সেই মানুষগুলোর তথ্য প্রমাণ যদি প্রকাশ করার অনুমতি পেতাম, তাহলে দেখাতে পারতাম ভণ্ডামি কাকে বলে।
এদেশের মানুষের খুরে দণ্ডবৎ, জিজ্ঞেস করলে তাঁরা এইসব অলৌকিক ক্ষমতাশালী কবিরাজের নাম ঠিকানা বলেন না। সারাজীবনের জন্য নিজেকে বা নিজের প্রিয়জনকে প্রতিবন্ধী করে ফেলেন, ক্যান্সারে মারা যান, ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসককে নিগ্রহ করেন, তবু এদের কাছেই দৌড়ে যান!!
পরিচয় না দিয়েই একটি ছবি দিলাম, এরকম হাড় নিয়ে হারামিগিরি করা কবিরাজি চিকিৎসার কুফল বোঝাতে। বাচ্চাটি সারাজীবনের মত ভুগবে এই কনুইয়ের সমস্যা নিয়ে (টেনিস এলবো-র মত গলফার’স এলবো বলে একটি সমস্যা হয়, এক্ষেত্রে সেটি চলতে থাকবে) – এটা বলে দেওয়া যায় বিজ্ঞানসম্মত ভাবেই!!