১৭.১২.২২
গতকাল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসে ১৯ জনের বদলির আদেশনামা বেরিয়েছে। শিক্ষক চিকিৎসকদের বদলি নতুন কিছু নয়। মেডিক্যাল কাউন্সিল যখন পরিদর্শনে আসে তখন কুমির ছানা দেখানোর জন্যে যখন তখন বদলি হওয়া শিক্ষক চিকিৎসকদের গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে,স্বাস্থ্য প্ৰশাসনের রুটিন বদলি বলে যে সমস্ত চিকিৎসকের বদলির আদেশনামা বেরোয়, তাঁদের বেশিরভাগ শাসকদল অনুগত নয় বলেই শোনা যায়। এমনকি প্রমোশনাল বদলিতেও বেছে বেছে শিরদাঁড়া বিক্রি না করা চিকিৎসকদের নামই থাকে। বদলি নীতি নয়, সাম্প্রতিক সময়ে শাসকের আনুগত্যই বদলির প্রধান বিবেচ্য।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে, ২০১৮ সালের প্রহসনের মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচন বাতিল হয়ে নতুন নির্বাচনের পুরো সময়কালে, সরকারপন্থী প্রার্থীরা অবিরত হুমকি দিয়ে গেছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্মের প্রার্থী ও সমর্থকরা বাসস্থান পরিবর্তন করতে প্রস্তুত হোন বলে। তা সত্বেও শিরদাঁড়া সোজা রাখা চিকিৎসক সমাজ–সমস্ত হুমকি উপেক্ষা করে বিপুল ভোট, বিপুল সমর্থন জানিয়ে ছিলেন জয়েন্ট প্ল্যাটফর্মের প্রার্থীদের। কিন্তু হার নিশ্চিত বুঝে, হাজার হাজার জাল ব্যালট জমা দিয়ে, এমনকি গণনার সময়, যৌথ মঞ্চের হাজার হাজার প্যানেল ভোট, অতিরিক্ত ক্রস দিয়ে বাতিল করা সহ, নানা পদ্ধতিতে, নির্বাচনকে আবারও প্রহসনে পরিণত করে। যার বিরুদ্ধে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম আইনের পথে যেতে বাধ্য হয়। গতকাল উচ্চ আদালত এই প্রহসনের নির্বাচনের সমস্ত নথি বাজেয়াপ্ত করে। তারপরেই এই বদলির আদশনামা বেরোয়। স্বাস্থ্যদপ্তর রুটিন বদলি বলে চালানোর চেষ্টা করলেও এই আদেশনামায় যাদের নাম আছে তাঁদের বেশিরভাগ ওই নির্বাচনে শিরদাঁড়া সোজা রেখে,শাসকের চোখে চোখ রেখে কথা বলা চিকিৎসক।
একদিকে স্বাস্থ্যদপ্তর বলছে রুটিন বদলি অন্যদিকে প্রায় সবাইকেই বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে রিলিজ অর্ডার ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদি রুটিন বদলি হবে তাহলে এতো তাড়া কিসের? একজন শিক্ষক চিকিৎসককে শনিবার, বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে রিলিজ কেন করতে হবে? যে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে ওনাদের বদলি করা হয়েছে, সেই সব কলেজের কি এমনই হাল যে একদিনও অপেক্ষা করা যায় না? তাহলে তো ধরে নিতে হয় মেডিক্যাল এডুকেশন পুরোপুরি গোল্লায় গেছে। যারা দায়িত্ব নিয়ে প্রশাসনিক চেয়ার গুলোতে বসে আছেন, তারা তাহলে কি করছেন? আমাদের দাবি সমস্ত প্রতিহিংসার বদলি বাতিল অবিলম্বে করতে হবে।
অন্যদিকে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে অচলাবস্থা চলছেই। ওদের স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা আমরা গভীর দুশ্চিন্তায়। ওদের অনশন আন্দোলন ১১ দিনে পড়েছে। দুজন গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য প্রশাসন ছাত্রছাত্রীদের বাধ্য করেছে আন্দোলনে যেতে। ৩০সে নভেম্বর, ৫৫ জন কলেজ কাউন্সিল সদস্যের নেওয়া, ২২সে ডিসেম্বর নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত কার অঙ্গুলি হেলনে, কেন বন্ধ হয়ে গেল তার উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। কলেজ কাউন্সিলের যদি কোনো ক্ষমতাই না থাকে তাহলে এই কমিটি রাখার দরকার কি? কেন ডিএইচএস, ডিএমই, স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মেডিক্যাল কলেজে আসবেন, যাবেন অথচ কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে অচলাবস্থা চালিয়ে যাবেন? এটা কি দিনের পর দিন চলতে পারে? ওরা তো আকাশের চাঁদ চায়নি, চেয়েছে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ। কেন ২০১৬ সালের পর থেকে কোনো মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে না? কেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনের জন্যে ছাত্রদের অনশনে বসতে হবে? অবিলম্বে মেডিক্যাল কলেজের অচলাবস্থা কাটিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে হবে। অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলোতেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার পদ্ধতি শুরু করতে হবে।
একই সঙ্গে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি যে স্বাস্থ্যদপ্তরে নিয়োগে নগ্ন অনিয়ম চলছে। সম্প্রতি মহামান্য উচ্চ আদালত জেলায় জেলায় চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের জন্য গঠিত কমিটিগুলোর মাথা থেকে শাসকদলের নেতাদের সরিয়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে গতকাল স্বাস্থ্যদপ্তর সমস্ত নিয়োগ স্থগিত রাখার আদেশনামা বের করতে বাধ্য হয়েছে। একইভাবে স্থায়ী নিয়োগের জন্য গঠিত যে হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডকে স্বজনপোষন ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে শাসকদল, তার মাথা থেকেও শাসকদলের নেতাদের অবিলম্বে সরিয়ে দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত করবার দাবী আমরা জানাচ্ছি।
এএইচএসডি, পশ্চিমবঙ্গ