আমেরিকা থেকে একজন জানাচ্ছেন যে রাস্তায় জ্যামে আটকে পড়েছেন, কারণ আসন্ন রামমন্দির উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সপ্তাহান্তে প্রবাসী ভারতীয়দের (অবশ্যই হিন্দু) আনন্দ উৎসবের মিছিল চলছে আর ট্র্যাফিক পুলিশ যান নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। পুলিশ কর্তৃক সরাসরি যান নিয়ন্ত্রণ আমেরিকার খুব বড় শহর ছাড়া মোটেই সাধারণ দৃশ্য নয়, আর উল্লেখিত শহরটি সেই পর্যায়ের ধারে কাছে যায় না!!
ধরে নেওয়া যেতে পারে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা হিন্দু ভারতীয়দের একটা বড় অংশ এইভাবেই উদ্বেলিত উচ্ছ্বসিত। আমাদের ফরেনসিক মেডিসন পড়াতেন প্রফেসর জগবন্ধু মুখার্জী, যার এক একটা বাক্য বা শব্দবন্ধ আমাদের কাছে প্রায় প্রবাদপ্রতিম মানে সত্যি করেই জীবনের খাতায় বাঁধিয়ে রাখার মতো। স্যার একবার দিল্লীতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে AIIMS এ দেখাতে গেছেন। Attending doctor ওনার নাম শুনেই বললেন, ‘স্যার, আপনাকে চিনি’। ‘কি করে চিনলে বাপ’? কথাটা হয়তো ইংরাজীতেই বলেছিলেন, কিন্তু ‘বাপ’ শব্দটা তার মধ্যে নিশ্চয়ই ছিল’ কারণ ওটা স্যারের খুব প্রিয় সম্ভাষণ ছিল ছাত্রদের প্রতি। AIIMS এর ডাক্তারবাবুর উত্তর, ‘স্যার, আপনার ছাত্র আমার রুমমেট ছিল’!!
সেই Prof. J.B. Mukherjee (জগবন্ধু মুখার্জী) একবার একটি বিতর্কিত চ্যাপটার পড়ানোর সময়ে বলেছিলেন, “পৃথিবী আনন্দময়, যার যেথা মনে লয়; যা করবে করো বাপ তবে একটু দেখেশুনে…….”!! ঠিকই তো পৃথিবী তো আনন্দময়ই, আর জীবনে আনন্দই হলো আসল….!!
তাই সত্যি, এত মানুষ যখন দেশে বিদেশে আনন্দ পাচ্ছে, তখন আর কীই বা বলার থাকতে পারে?! আর, তার চেয়েও বড় কথা, একটা মন্দির করেই যদি এত লোককে খুশিতে মাতোয়ারা করে দেওয়া যায় , অনায়াসে ভোট বৈতরণী পার হবার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে আর আপত্তিই বা কোথায়!! দশ বছরে কী কাজ করেছো, না ৩৭০ ধারা বিলোপ আর মন্দির করেছি!! ব্যাস, তাতেই মানুষ খুশিতে আত্মহারা!! ভাবি, আচ্ছা আগের সরকারদের এই বুদ্ধি কেউ দিলো না কেন, বছরের পর বছর আরাম করে রাজত্ব করতেন!!
যাক, এর মধ্যে আবার কর্পোরেট হাসপাতালের চিকিৎসকরাও নাকি মহাসমারোহে ভগবান রামের পূজো করবেন। ডাক্তারদের এ হেন আচরণ হয়তো অভূতপূর্ব বা অশ্রুতপূর্ব, তো কি করা যাবে? অনেক ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে তো লেখা থাকে, ‘I treat, He cures’..। যাক, এবার থেকে চিকিৎসাও হয়তো ‘তাঁর’ নামেই হবে, ডাক্তাররা যখন হাসপাতালের ভিতরেই প্রকাশ্য বন্দনায় মেতে উঠেছেন। অসুবিধা একটাই এর পরে রোগীরা ডাক্তারের জন্য টাকা খরচ না করে আর কর্পোরেটের লক্ষ লক্ষ টাকার বিল না মিটিয়ে হয়তো রামনাম করেই কাটিয়ে দেবে, কিংবা ঠাকুরের ক্যাশবাস্কেই জমা দেবে।তাতে অবশ্য কর্পোরেটের বিলের থেকে অনেকটাই কম পড়বে!!
এই চিকিৎসকদের আচরণ নিয়ে অবশ্য কিছু বলার নেই ; এদের ভক্তিভাব অতি প্রবল, এরা চিরকালই কারুর না কারুর ভক্ত! বরং, এখন মানুষের বদলে যে ভগবদ্ ভক্তি হয়েছে, এটাই তো অনেক…..!!
তবে, সব সত্বেও একটা বিষয় বেশ দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, এতদিন পরে জিন্নাহ- নেহেরুর শুরু করা ‘পার্টিশন’ টা সম্পূর্ণ হলো। আর, সেই সঙ্গে গান্ধীরও মুক্তি হলো, তাঁকে আর বারবার মরতে হবে না। এখন থেকে গান্ধী পুরোপুরি মৃত, সব অর্থে…..’রামনাম সত্য হ্যায়…….