Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

ফিরে আসা

matla
Dr. Shyamal Kumar Mondal

Dr. Shyamal Kumar Mondal

Pediatrician
My Other Posts
  • April 21, 2024
  • 9:14 am
  • No Comments

বৌবাজারের মোড়ের কাছে তখনও ভিড় জমেনি। তবে একেবারে যে ফাঁকা তেমনও নয়। অফিস ফেরতা কানাইলাল কবিরাজ ট্রাম থেকে নেমে পশ্চিমমুখো রাস্তাটা ধরে একটু এগিয়ে গেলো। এই রাস্তাটা কানাইলালের খুব প্রিয়। বেশ কয়েকটা স্যানিটারি জিনিসপত্রের দোকান, দুটো বনেদি ভাতের হোটেল ডানদিকে পড়ে আর রাস্তার উল্টোদিকে সেই বিখ্যাত বৌবাজার।

ওপারে সারি দিয়ে ফুলের দোকান, গরম রুটি তরকারির দোকান, দুটো তিনটে পুরোনো মিষ্টির দোকান, যেখানে গজা, জিলিপি, বালুসাই, বোঁদে, লাড্ডু এই ধরনের সাবেকি মিষ্টি তৈরি আর বিক্রি হয়। কানাইলাল ওপাশটায় যায় না। সে যায় আরো একটু এগিয়ে। ডানদিকের রাস্তার ওপরে টিনের সাইন বোর্ডে কাঠের হরফে নাম লেখা একটা নির্দিষ্ট মিষ্টির দোকানে।

এই দোকানটা বড় প্রিয়। লেখা আছে ‘ঘিয়ে ভাজা লুচি’ আরো অল্প কিছু কথা। এই কথাগুলোর টানে কত বছর ধরে যে কানাই আসছে এখানে তার ঠিক নেই।

প্রাইভেট অফিসের করণিক কানাই। রোজ সকালে ট্রামে চেপে অফিসে যায় আবার সন্ধ্যায় ফেরৎ আসে শিয়ালদহ স্টেশনে । ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া স্টপেজ থেকে ট্রামে চেপে ডালহৌসি যায় । ফেরার পথেই সে এই বৌবাজারের চৌমাথায় টুপ করে ট্রাম থেকে নেমে পড়ে।
এটা তার বিলাসিতা। ঘিয়ের সুগন্ধযুক্ত নরম পাতলা তুলতুলে লুচি আর মিষ্টি মিষ্টি আলুর তরকারি। নেশার মতো তাকে টানে। তবে সপ্তাহে এক দু’বারের বেশি নয়। সে এমনিতে যে খুব খাদ্যপ্রিয় তেমন নয়। কিন্তু এই চারটে লুচি এবং পরে দুটো সাদা স্পঞ্জ রসগোল্লা তাকে খুবই প্রলুব্ধ করে।

একদিন একটা অবাক কান্ড ঘটে এই দোকানে। গরমের দিন, বিকেলে বেশ গুমোট আবহাওয়ার মধ্যে একটু ধুলোর ঝড় উঠলো আর যতো সব দোকানের টিনের হোর্ডিং চড় চড় আওয়াজ করতে লাগলো। লোকজন ছোটাছুটি করে কোন আশ্রয়ের খোঁজ করছিলো। কানাই সবে তার প্রিয় দোকানটায় ঢুকেছে। এমন সময় চড়বড় করে কিছু বড় বৃষ্টির ফোঁটা তপ্ত আকাশ থেকে পীচ রাস্তা আর ট্রামের লাইনে আছড়ে পড়লো।

একটা মেয়ে তার থেকে কমবয়েসীই হবে কোন রকমে মাথাটা ঢেকে দোকানে ঢুকে পড়লো।

একটা টিউব লাইট জ্বলছিলো দোকানে। আর বাকিটা প্রায় অন্ধকার। কানাই একটু জায়গা করে দিলো মেয়েটিকে। সরে দাঁড়ালো খানিকটা ভিতরের দেয়াল ঘেঁসে। একটু বিদ্যূতের ঝলকানি আর বাজ পড়ার আওয়াজ। রাস্তায় বিদ্যুৎবিহীন হয়ে ট্রামগুলো দাঁড়িয়ে গেলো। একটু নিরাপদ ভেবে দোকানের চারপাশটায় নজর করলো মেয়েটা। আর তার চোখজোড়া কানাইয়ের মুখে পড়ে স্থির হলো। মনে হলো বিস্মিত মেয়েটি একটু অস্বস্তিতে পড়লো। তবুও সেটুকু পেরিয়ে সে জিজ্ঞেস করলো, – কানাইদা না, তুমি এখানে ?

– অফিস থেকে ফিরছি, হঠাৎ বৃষ্টিতে আটকে গেলাম।

– এদিকে চাকরি করো?

– না,সেই ডালহৌসিতে।
– বেশি দূর নয় !

কানাই মেয়েটাকে চিনতে পারলো। না চেনার কিছু নেই। অনেকদিন দেখা হয়নি তবুও অচেনা হওয়ার মতো সময়ের ব্যবধান নয়।
এরা মাতলা নদীর চরে একটা মাটির ঘর বানিয়ে বসবাস করতো। কানাইরা বলতো মালো-দের বাড়ি। ঠিকানাহীন একটা পরিবার দিগন্ত বিস্তৃত নদীর চরে আশ্রয় পেয়ে নদীর মাছ ধরে চারজনের একটা পরিবার চালাতো ওর বাবা শশীনাথ। শশীনাথ মাঝে মাঝে জনমজুর খাটতে তার বাবার কাছে আসতো। তার অনুরোধে কানাই কালক্রমে দুই ভাইবোনকে একটু টিউশনির নাম করে পড়াশুনা দেখিয়ে দিত।

শশীনাথ বলেছিলো, – বাবা যদি একটু দেখিয়ে দাও, তবে স্কুলটা পার করতে পারে।

তারপর মাতলার চরে অনেক ঋতু অতিবাহিত হয়েছে । তারাও বড় হয়ে যায়। কানাই গ্রাজুয়েট হয়ে যায়। খুব বেশি দিন সে পড়াতে পারেনি। হয়তো সাকূল্যে দুই বছর।

তারপর ঘাত অভিঘাতে জীবন কতো বদলে যায়। কানাই একটা বেসরকারি সংস্থায় খাতা লেখার কাজ করে। নিত্যযাত্রী হয়ে অফিসের ছয় দিন সামলে আর সংসারের ঘানিতে পাক খেতে খেতে মাতলার চরমুখো আর হওয়া যায়নি বহুদিন। যদিতে তার বাড়ি থেকে এই চর আহা মরি দূর কিছু নয়।

এ ডলি রানী। ডলি বিশ্বাস।

– তুমি রোজ আসো অফিসে কানাইদা ?

– রবিবার ছুটি।

– কতদিন তোমার সাথে দেখা হয় না।

তারও মনে হলো এদের সাথে কতদিন দেখা হয়নি। তখন ডলি ক্লাস এইটে পড়তো। মাথা ভালো না মন্দ বোঝা যেত না। তবে উদয়াস্ত সংসারের সাহায্যকারি হিসেবে তাকে অনেক কিছু সামলাতে হত সংসারে। রান্না করা,ভাইয়ের দেখভালের দায়িত্ব তার কাঁধে ছিলো। ভাই সবে স্কুলে ঢুকেছিলো তখন। বাবা সারাদিন নামমাত্র আয়ের জন্য বাড়িছাড়া হয়ে থাকতো। দোকান বাজার করতেও ডলিকে বাইরে বেরোতে হতো।

কটকটে উজ্জ্বল রংয়ের একটা সিন্থেটিক শাড়ি পরেছে ডলি, আর ঠোঁটে গাড় গোলাপি লিপস্টিক। চোখে কাজল আর রঙ্গীন ফিতেয় টানটান করে বাঁধা চুল। তার সাজগোছ একটু চোখে পড়ার মতো।

চেনা খরিদ্দার, তাই দোকানদার তার প্লেটটা এগিয়ে দিলো।

– দাদা, আরো এক প্লেট দিন।

ডলি আপত্তি করেনি বরং সাগ্রহে নিজে হাতে টেনে নিলো প্লেটটা।

বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না ঝড় বা বৃষ্টি। সবে প্লেটটা শেষ হয়েছে। ডলি, ‘চলি’ শব্দটার প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা না করেই দোকান থেকে ফুটপাতে নেমে পড়লো। কানাই দ্রুত পয়সা মিটিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখলো ডলি ত্রস্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে বৌবাজার মোড়ের দিকে। যেন বেশ ব্যস্তসমস্ত, তার চলার ছন্দে সেটা স্পষ্ট। তখনও আঁধার পুরো নামেনি তাই তার অবয়ব যতক্ষণ দেখা যায় সেদিকে কানাই তাকিয়ে রইলো।

একটা চেনা মানুষ কেমন যেন অচেনা হয়ে গেলো কয়েক মুহূর্তে ব্যবধানে।

বাকি রাস্তাটা হাঁটতে হাঁটতে ফেরে কানাই। সেদিনও ফিরছিলো। আলো জ্বলে উঠছে দোকানের ভিতরে ও রাস্তার ল্যাম্পপোষ্টে। স্বপ্নপুরীর মতো আয়না আর কাঁচে ঘেরা দোকানগুলো নিজেদের রূপ জাহির করে খরিদ্দারের দিকে তাকিয়ে আছে। চেনা পথের চেনা চাহুনি। কানাই এসবে সে প্রলুব্ধ হতে পারে না। কারণ তার আর্থিক সামর্থহীনতা। হয়তো বা আরো অন্য কিছু। তাগিদের অভাব। তার সংসারে বৃদ্ধা মা আর সে। আর আছে দূর সম্পর্কের এক পিসি। জীবনের অনেকটা পথ কানাই একাই পার হয়ে এসেছে। বাকিটাও নিরুপদ্রবে কাটিয়ে দিতে পারবে।

গতমাসে চশমা নিতে হয়েছে। জুলপিতে অনেকগুলো চুলের রঙ বদলে গেছে।

মায়ের কাকুতি মিনতি ছিলো, বন্ধু বান্ধবের প্ররোচনা ছিলো,আত্মীয় স্বজনের বক্রোক্তি ছিলো তবুও বিবাহ নামক স্বর্গীয় বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সাহস সে দেখাতে পারেনি। অনেকেই বলেছিলো এবং এখনও বলে এই অবিমৃষ্যকারী সিদ্ধান্ত তাকে শেষ জীবনে ভোগাবে। কানাই উদাসীন এসব বিষয়ে। কর্ম ক্লান্ত দিনের শেষে বা কর্মহীন দিনে ক্যানিং স্টেশন থেকে একটা দুটো গ্রাম পেরিয়ে এই নদীর ধারের নির্জন বাড়িতে বাবার রেখে যাওয়া শ্রীখোলে মনের আনন্দে তাল অভ্যাস করে। কখনও একটা দুটো সংকীর্তন অনুষ্ঠানে সংগত করে।

তখন তার কন্ঠিতে তুলসী মালা থাকে। সবাই জানে কানাই বৈষ্ণব, সাত্ত্বিক।

শেষ বিকেলের দমবন্ধ ঠাসা ভিড়ের ট্রেনে একটু বসার জায়গা জুটে যায় নিত্য সহযাত্রীদের কল্যাণে।

ডলিকে আরো একদিন সে দেখেছে বৌবাজারের ঘিঞ্জি গলিতে। কোন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে খাবারের দোকানের লোকটার সাথে কথা বলতে। হেসে হেসে শরীরে হিল্লোল এনে ডলি যে লোকটা দোকানদারি করছিলো তার সাথে রসালাপে ব্যস্ত ছিলো। সেটা তার অবশ্য অনুমান। সে মুখ লুকিয়ে চলে গেছিলো। কারণ কানাইও চায়নি এই গলিতে ডলি রানীর সাথে তার মুখোমুখি দর্শন হয়ে যায়। শিব মন্দিরের পাশের ঐ শর্ট কাট গলিটা তাকে কখনও ধরতে হয় রাস্তার দৈর্ঘ্য সংক্ষিপ্ত করার আশায়।

ডলিও তাকে দেখে নি। সে ও ডেকে জিজ্ঞেস করেনি সে এখানে কি করছে ? রাতে মাটির দাওয়ায় বসে সেদিন মাকে এই ব্যাপারে কথা বলতে গেলে মা বলেছিলো।

– তার তো শহরে বিয়ে হয়ে গেছে। সে পালা পার্বণে আসে ক্যানিংয়ে। শুনেছি…।

-কি শুনেছো মা?

– শুনতে পাই। এখন সে স্বামীর সাথে থাকে না।

ডলি রানীর দাম্পত্যের ইতিহাসে কানাইয়ের কোন উৎসাহ নেই। শুধু মনে হয় একটা মানুষ খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও চেনা মানুষ ছিলো, হঠাৎ কি করে বা কেন এমন অচেনা হয়ে যাচ্ছে? কিসের জন্য ডলি অচেনা পরিবেশে একজন চেনা লোককে পেয়েও ঝোড়ো এক সন্ধ্যা বেলায় জনস্রোতে মিশে গেলো তাকে সঙ্গ দেয়ার সুযোগ না দিয়েই? মানুষ কি চেনা মানুষকে কাছে পেলে ছাড়তে চায়?
নির্জন নদী সংলগ্ন একটা অজ গাঁয়ের থেকে কানাই কত জনপদ উজিয়ে একটা তিন শতাব্দীর পুরোনো শহরে জীবিকার টানে রোজ যায়। আবার ফিরে এসে আঁধার গায়ে মেখে মাটির দাওয়ায় বসে মায়ের সাথে কথা কয়। কথা হয় দেশের, আত্মীয়দের, পাড়া পড়শীর, সুখ দুঃখের। অকাল বিধবা তার পিসি। বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাওয়া শিক্ষিত একটা ছেলে কানাইলাল। বসে বসে নিজের গল্পে হাসে, কখনও ভাবে, আবার কখনও তার গলা জড়িয়ে আসে অবরুদ্ধ কাঁন্নায় ।

পৈতৃক একটা ছোট পুকুর আছে, গোটা কয়েক ফল পাকুড়ের গাছ, কয়েক বিঘা চাষযোগ্য জমিও আছে। সে চাষ করায় মজুর দিয়ে। আর যতটুকু মাইনে পায় তাদের তিন জনের পেট চলে যায়। কানাই হাল চাষ করতে পারে, পুকুরে বা নদীতে জাল বাইতে পারে।
কখনও প্রবল বর্ষায় যখন অফিসে যাওয়ার কোন উপায় থাকে না। সে পাড়ার দু’একজনকে নিয়ে মাতলার শাখা নদীতে চলে যায় মাছ ধরতে । গত বর্ষাকালে একবার গেছিলো। ঢেউ তোলা নদীতে ছৈ নৌকো করে জাল ফেলতে ফেলতে অনেকটা দূরে চলে গেছিলো। এখন মনে হয় সে মোহনার কাছে ডলিদের মাটির বাড়িটা খেয়াল করেছিলো।

আজ অফিসের অর্ধেক দিন ছুটি। মালিক পক্ষের কোন উৎসব উপলক্ষে প্রথম অর্ধে কাজ করার পর তাদের অফিস বন্ধ থাকবে। কানাই আজ আর ট্রামে ওঠেনি। অঢেল সময় হাতে থাকায় সে ধীরে সুস্থে অফিস থেকে বেরিয়ে লাল দিঘির পাশ দিয়ে আসছিলো। সে এই পথে এভাবে হেঁটে ফিরেছে বহুবার। লালবাজার পেরিয়ে বউবাজার স্ট্রিট ধরে সেন্ট্রাল এভিনিউ পেরিয়ে বউবাজার মোড়। এতোদিনের যাতায়াতের পথে সবই প্রায় চেনা। মোড়ের কাছে এসে রাস্তা পার হতে গিয়েই বিপত্তি।

বোধ হয় অসতর্কতায় সিগন্যাল খেয়াল করেনি। একটা সাদা রঙের অ্যাম্বাসাডর গাড়ি প্রায় তার গা ঘেঁসে প্রচন্ড জোরে ঘ্যাঁচ শব্দ করে দাঁড়িয়ে পড়লো। সে হতচকিত হয়ে বোবা হয়ে রইলো। হিন্দুস্থানি ড্রাইভার দেশীয় ভাষায় গালি দিতে শুরু করলো। আশপাশের দু-চারজন লোক এগিয়ে এলো। পেছনের সিটের এপাশে বসে একটা টাক মাথা মধ্য বয়স্ক লোকও এই গালাগালিতে সামিল হলো।

কানাইলাল বলতে চাইলো, তার ভুল হয়ে গেছে। সে ক্ষমা প্রার্থী। আর তখনই সে নির্ভুল ভাবে খেয়াল করলো, একটা মেয়ে সে অবশ্যই ডলিরানী লোকটার একটা হাত চেপে ধরে বলছে,- ছোড় দিজিয়ে। গালি মত দো। গলতিসে হো গিয়া।

লোকটা আরো কিছু অশ্রাব্য গালি গালাজ দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলো। আর গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বার করে থুক করে রাস্তায় এক মুখ থুথু উগরে দিলো।

সিগন্যাল খুলে গিয়ে লোকজন সরতে লাগলো এবং আবার যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে গেলো। কানাই ওপারে চলে গেলো।

উপহাস,গালাগাল, টিটকারি আর উপদেশাবলীর মধ্যে একপা একপা করে অপর পারের ফুটপাতে যেখানে হার্ডওয়্যারের দোকানের মালপত্র ঢাঁই করা আছে সেখানে উঠে পড়লো। নিশ্চিন্ত হয়েও তার চোখে ডলির মুখটা ভেসে উঠলো ।

সে মুখে কি আতঙ্কের ছায়া লেগে ছিলো? ঐ অভদ্র লোকটার হাতটা চেপে ধরে সে কোন রকমে খিস্তি খেউড়ের পর্বটা সংক্ষিপ্ত করতে চাইছিলো। কোন রকমে দুর্ঘটনায় যে কানাইয়ের কোন ক্ষতি হয়নি সেইটুকু জেনে সে কি আস্বস্ত ছিলো?

নিজের শরীরে বড় আঘাত কিছু লাগতে পারতো অবশ্যই। সেটা না ঘটার জন্য নিজের ওপরে ঈশ্বরের অশেষ আশীর্বাদ আছে ভেবে নিয়ে মনে প্রশান্তি আনতে পারতো। কিন্তু বেমানান লোকটার পাশে ডলির মূর্তি তাকে উত্যক্ত করেছে। ডলি দেখেছে কানাই বুড়বকের মতো রাস্তা পেরোতে গিয়ে চাকার তলায় পড়তে পড়তে বেঁচে গেছে। আবার কানাইও দেখেছে একটা পুরুষের বাহু লগ্ন হয়ে আছে ডলি। সব মিলিয়ে কানাইলাল চূড়ান্ত অন্যমনস্ক।

– দাদা ধরুন।

কিছু বলেনি সে, কি নেবে কতটা নেবে। চেনা ছেলেটা খাবারের প্লেটটা তার হাতে ধরিয়ে দিতে সে বিনা বাক্য ব্যয়ে খেতে শুরু করলো।
ট্রেনের ভিতরে একটা বসার জায়গা পেয়েছে সেদিন। অন্য সময়ে কসরত করতে হয়। তবে আজ একটু আগের গাড়ি বলে ভিড় কিছুটা কম। দেড় ঘন্টার পথে পুরোটা দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর। একটু বসতে পারলে নিজেকে লটারি প্রাপকের মতো মনে হয়।

আজ চেনাজানা লোক নেই আশ পাশে। কানাই ঘুমিয়ে পড়লো গাড়ির ঝাঁকুনিতে। এখন দেড় ঘন্টার পথ সে না জাগলেও কোন অসুবিধা নেই।

এভাবেই দিন আসে দিন যায়, মাস কেটে বছর ঘুরে যায়। চোখের দৃষ্টিক্ষমতা পাল্টে যাওয়ায় চশমার পাওয়ার পাল্টাতে হয় কানাইকে । কখনও ভরা বর্ষায় বৃষ্টির জমা জলে ভিজে, কখনও বা তীব্র গ্রীষ্মের দাবদাহে নিত্যযাত্রীর কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে একদিন টুপ করে শীতের আমেজ আসে শহরে। ভুটিয়ারা গরমের পোষাক নিয়ে ওয়েলিংটন স্কোয়ারে পসার নিয়ে বসে ।

সেদিন ফেরার পথে সে ঠিক করলো মায়ের জন্য একটা সোয়েটার নেবে। নিতে যখন হবে তখন পিসিরটাও কি বাদ যাবে?

দোকানীর সাথে কথা বলে দর দস্তুর করতে করতে কানে আসে মৃদু গোলমালের আওয়াজ। মেলায় ডিউটি দেয়া মহিলা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে একজন মহিলা পকেটমার। টাকা মিটিয়ে কৌতূহল বশতঃ নজর করতে গিয়ে কানাইলালের বুকটা কেঁপে উঠলো। অস্থায়ী ফাঁড়িতে কুৃঁকড়ে গুটিসুটি মেরে যে মেয়েটি বসে আছে সে যে ডলি সেটা বুঝতে সময় লাগলো। উস্ক খুস্ক চুল, ছেঁড়া মলিন পোশাক, চোখে ভীত সন্ত্রস্ত দৃষ্টি।

সে চেয়ে রইলো ডলির দিকে। অথচ ডলি তাকে চিনতে পারছে না। কিম্বা চিনতে চাইছে না। কানাই সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অফিসারকে নমস্কার করে বলে, – স্যার, কি চুরি করেছে ও?

– বাদ দিন পাগলীর কথা। পেটের দায়ে করেছে। আমরা ছাড়তে পারলে বাঁচি!

ডলির চোখ-মুখ তো অস্বাভাবিক ছিলো তবে কানাই কেন চিনতে পারেনি, সে কি ঠিক মতো খেয়াল করেনি? সে আরো বিশদে জানতে পুলিশ অফিসারকে বললো,- ও কি আগেও ধরা পড়েছে স্যার ?

– একবার নয় কয়েক বার, কাঁচা হাত। আগে অন্য কাজ করতো। এখন সে সব পারে না ?

– কি কাজ স্যার? ও আমার পরিচিত ।

– বাঁচালেন মশাই। চেনা যখন, সবই তো জানেন।

– না স্যার তেমন পরিচিত নয়।

– ও! তবুও তো পরিচিত।

কোন পুলিশের লোক এতোটা ভালো হয় কানাইলালের জানা ছিলো না।

– আপনাকে একটা অনুরোধ করবো? তিনি বললেন।

– ওর সত্যি ঠিকানা আমি বলবো। কি কাজ করতো তাও বলবো, কিন্তু আপনাকে একটা কাজ করতে হবে। আপনার বাড়ির ঠিকানা দিয়ে ওকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। পুলিশের নামে ভর্তি হলে ও আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না।

কানাই কবিরাজের নতুন করে ভাবনার কোন সুযোগ রইলো না। কাছাকাছি মেডিকেল কলেজের এমারজেন্সিতে গিয়ে সেই অফিসার ও কানাই সহজে ডলিকে মেয়েদের ওয়ার্ডে ভর্তি করে দিয়ে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। সেদিন একটা দোকানে দাঁড়িয়ে অফিসার যা বললেন তা সাংঘাতিক।

ডলিকে একদিন এই হাসপাতালের উল্টোদিকের একটা কুখ্যাত গলি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। উন্মাদ অবস্থায়। চেনা শুনো পরিচিতরা ধাক্কা ঝাঁটা লাথি মেরে ভাড়া বাড়ি থেকে বার করে দেয়। কারণ যার বাসায় সে ভাড়া থাকতো সে আর এই উন্মত্ত বোঝাকে টানতে চায় না।

এই অফিসারের আওতায় পড়ে ঐ পাড়াটা। সেদিন কোন রকমে বুঝিয়ে হাসপাতালের আউটডোরে দেখিয়ে ওষুধের ব্যবস্থাপত্র করে দেয়া হয়। কিন্তু সাময়িক লাভ হলেও , সে লাভ দীর্ঘ স্থানী হয় নি। তাকে দিয়ে রোজগারের সব বন্ধ হওয়ায় বাড়িউলি মাসি তাকে রাস্তায় ঠেলে ফেলে দেয়। পাগলি পেটের দায়ে অপটু হাতে কারো মানিব্যাগ তুলতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়।

কুচকুচে কালো অন্ধকারে নিকষ্যি গাঁয়ের উঁচু বারান্দায় বসে আদা চায়ে চুমুক দিতে দিতে শীতের রাতে বসে টিমটিমে আলোয় তিনটি প্রাণী কথা কইছে।

– জানো পিসি আজ কি কান্ড ?

– কি রে খোকা, তাই বল কত দেরি হলো আজ তোর? পথ চেয়ে মোরা হয়রান হয়ে গেলাম।

– সেই যে ডলি ছিলো না! কলকাতায় একদিন দেখা হয়েছিলো। আবার আজ দেখা। সে এক আজব ঘটনা!

– শুনিছি সে কেমন যেন হয়ে গেছে এখন! শোনা কথা।

– না পিসি, সে যেমন ছিল তেমনি আছে। তবে তার মাথাটা বিগড়ে গেছে।

কানাই সবিস্তারে আজকের ঘটনাটা বললো। পুলিশের কথা বললো,হাসপাতালের কথা বললো। তবু বলতে পারলো না তার রুটি

রোজগারের কথা। আশ্রয়দাত্রীর ছুড়ে ফেলে দেয়ার কথা। তার বুকে কোথাও লাগলো।

– বলিস কি রে ? বৈরামপুরের কাবিল গুনিনকে দেখালে সেরে যায় শুনিছি সব মাথায় ব্যায়রাম।

– বলছো পিসি, এসব রোগ সারে? সে তো আমাকে চিনতেও পারলে না।

রাতে কেমন অস্থিরতার মধ্যে বার কয়েক ঘুম ভেঙে গেলো কানাইয়ের। উঠোনে নেমে এপাশ ওপাশ ঘুরে আবার শুলো। শীতের দীর্ঘ রাত, তবে ঠান্ডা সেভাবে পড়েনি। ছেঁড়া মশারির ভেতরে পিন পিন করে মশা জ্বালাচ্ছে। বাঁশ বাগানের মাথায় ক্ষয়া চাঁদ দেখা দিচ্ছে আকাশে। দুই বৃদ্ধা ঘরের ভিতরে ঘুমোচ্ছে। ঘুমের সাথে যুদ্ধ না করে সে তার প্রিয় শ্রীখোল খানা নামিয়ে মৃদু আওয়াজ করে বোল তুলতে চেষ্টা করলো। এমন যে আগে করেনি তেমন নয়।

আজ ভোরের আলো না ফোটার আগেই বিছানা ত্যাগ করলো সে। অন্য দিন দুই ঘন্টা পরে জাগে। একটা পুরোনো সাইকেল বেড়ার গায়ে শেকল দিয়ে বাঁধা আছে। মা- পিসিকে না কিছু বলে সে বেড়ার দরজাটা টেনে দিয়ে মাটির রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলো। আধ মাইলটাক যাওয়ার পর একটা সরু খাল। এটা গিয়ে মিশেছে মাতলায়। সে তর তর করে প্যাডেল করতে লাগলো। ফাঁকা জায়গায় এসে বেশ ঠান্ডার অনুভূতি হলো। মনে হলো গায়ে কিছু ভারি পোশাক থাকলে আরাম বোধ হতো। বিস্তীর্ণ ফাঁকা নদীর চরের মধ্যে একটা দুটো মেঠো বাড়ি মাথা তুলে জেগে আছে। তবে লোকজন দেখা যাচ্ছে না।

ঐ যে উঁচু ঢিবি মতো জায়গায় একটা টালির বাড়ি ওটাই গো ডলিদের বাড়ি। ওরা কি জেগেছে এখন?

পায়ে পায়ে ওদের বাড়ির দিকেই এগিয়ে চললো কানাই। এই ভোরবেলাতেও মুরগি চরছে উঠোনে। তবে তো অবশ্যই জেগেছে মানুষ জন।

এক বৃদ্ধ ঘর থেকে বেরিয়ে কানাইকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, – কারে খোঁজ বাবা ?

– চিনতে পারছো না কাকা, আমি কানাই, কবিরাজ।

– তুমি বিষ্টুদাদার ছেলে, কতদিন তো দেখিনি। তায় চোখে খুব কম দেখি।

– শরীর কেমন, কাকা?

– ভালো না, নানা রকম অসুখ। বুকে জল জমেছিল। ডাক্তার বললে টি বি। কত ওষুধ খেয়ে সারল তো চোখে দেখি কম।

– ডলিরা কেমন আছে কাকা?

এতক্ষণে মুখে প্রশান্তে এসে কাকা বললো। – সে এখন কোলকেতায় চাকরি করে। তার আয়েই তো আমাদের চলে।

কানাই আর দেরি করে না বা এদের আসল কথাটা বলে সত্যিকারের দুঃখবোধ জাগাতে চায় না। সে আবার আসবে বলে পিছু হটে এসে সাইকেলে বসে। ডলির জীবন, তার আয়ের পন্থা, বর্তমানে তার মানসিক বৈকল্য সব জানে সে। সে বলেছে কেবলমাত্র পিসি ও মাকে। আর কেউ জানে না । হ্যাঁ, আর জানে একজন, পুলিশ অফিসার। তার জানা না জানায় কিছু এসে যায় না। কারণ সে তার ডিউটির স্বার্থে ডলিকে হয়তো উদ্ধার করে হাসপাতালে দিয়ে এসেছে।

কানাইয়ের হাতে খুব বেশি সময় নেই। একটু জোরে চালিয়ে তাকে বাড়ি ফিরে অফিসে যেতে হবে। আজ একবার মেডিকেল কলেজে গিয়ে ডলির খোঁজ নিতে হবে। পুলিশ ইচ্ছে করেই তাকে ডলির বাড়ির লোক হিসাবে হাসপাতালের খাতায় লিখে দিয়েছে।

চিনতে অসুবিধে হলেও চেনা গেলো রুগীকে। হাসপাতালের দেয়া পোশাক পরে মুন্ডিত মস্তক ক্ষীণকায়া মহিলার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে একজন আয়া এসে একটা ওষুধের স্লিপ ধরিয়ে দিলো।

– বাড়ির লোক তো ? এই ওষুধগুলো নিয়ে আসবেন। গেটের ওপারে অনেক দোকান আছে। আর কিছু খাবার নিয়ে আসবেন।

অল্প কিছু ওষুধ। সঙ্গে একটা পাঁউরুটি, কয়েকটা ফল ও সামান্য মিষ্টি নিয়ে যখন ওয়ার্ডে পৌঁছলো তখন পাগলি তার দিয়ে অনেকক্ষণ চেয়ে বললো, – কানাইদা, তুমি এখানে কি করছো?

সে কিছু উত্তর দিলো না। মাথার কাছে টিনের টেবিলে জলের জগ থেকে গ্লাসে একটু গড়িয়ে ওর দিকে এগিয়ে দিলো। – খাও ডলি। তোমার খিদে পায়নি?

গোগ্রাসে ডলি খাবার ও জল খেয়ে নিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে রইলো। চোখে কিম্বা মুখে তার সুনির্দিষ্ট দৃষ্টি নেই। বিক্ষিপ্ত চাহনিতে একবার কানাইয়ের দিকে তাকায় তো একবার ওয়ার্ডের শেষে যেখানে সিস্টারা বসে আছে সেদিকে তাকাচ্ছে। তার মুখে বিষন্নতার মাঝে আচমকা এক ঝলক হাসি।

একজন সিস্টার এগিয়ে এসে বললো,- কাল পরশু রুগী অন্য ওয়ার্ডে চলে যেতে পারে। কোথায় গেল এসে টেবিলে খোঁজ নেবেন।

– রুগী কেমন আছে দিদি?

– আগের থেকে ভালো। ওষুধপথ্য পড়লে তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তারবাবু বলেছেন।

কথাগুলো আশাপ্রদ বটে তবে কানাই সেভাবে নিতে পারলো না। কেন না সে ডলির ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে না । বর্তমান তার চোখের সামনে বসে। আর অতীত তো অজানা নয়।

কেমন শরীর টুকু কাজে লাগিয়ে ডলি তার সংসার টেনে এসেছে এযাবৎ কাল। হঠাৎ অকর্মক্ষম শরীরের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে এলো মস্তিষ্কের বিকৃতি। দুই যুদ্ধ শেষে সেরে উঠলে সে কিভাবে আবার সবার সেবা করবে ? অথচ তার বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা তো তার মুখ চেয়ে বসে আছে। তার উপার্জনে তাদের ক্ষুন্নিবৃত্তি হবে। তাদের চাহিদা আছে বেঁচে থাকার।

বেরিয়ে এলো কানাই হাসপাতাল থেকে। তাড়া নেই তবুও তাগিদ আছে ডেলি প্যাসেঞ্জারির দ্বিতীয় পর্ব শেষ করে বাড়ি পৌঁছানোর। সেখানে দুটি শিশুসুলভ নারী তার অপেক্ষায় চোখ জ্বেলে বসে থাকে। এভাবেই কতদিন ধরে অপেক্ষা করে তারা। তাদের সংসারে কানাইলাল অভিভাবক।

আজ ফিরে ডলির কথা, তার শারীরিক উন্নতির কথা ও সিস্টারের দেয়া আশ্বাস বাক্য সব কানাই বললো মা ও পিসিকে । শীতের রাতে গাঁয়ের মেঠো বাড়ির টালির চালে শিশির পড়ে বারান্দায় বেশ ঠান্ডা বোধ হচ্ছে। আকাশে আজ চাঁদ নেই। তার বদলে আকাশ ভর্তি তারা ঝিক মিক করছে। বাতাসে একটু মৃদু ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। ছাতিমের গন্ধ মনে হয় । এটা কি অসময়, ফুল ফোটার ?

দুই মহিলার মধ্যে সম্পর্ক পারিবারিক এবং সামাজিক ভাবে খুব অন্তরঙ্গ হওয়ার মতো নয়। ননদ ও বৌদির সম্পর্ক। কূটকচালির সম্পর্কই হয় । তথাপি এদের রসায়ন কেমন যেন অন্যরকম। হয়তো অসহায় দুই মহিলার নিজেদের বাস্তব পরিস্থিতি দুইজনকে কাছাকাছি এনে দিয়েছে।

– মা , ডলিরা ভালো হয়ে কোথায় ফিরে যায়? তুমি জানো? ও ভালো হলে কি ভাবে নিজের ও বাড়ির বাকিদের পেট চালাবে? পিসি তুমি জানো?

হঠাৎ শিশুর মতো হেসে উঠলো পিসি, অতসীবালা। তারপর কেরোসিনের কুপি নিয়ে ঘরের কোণে রাখা বৌদির ফুলকাটা তোরঙ্গের ঢাকনা খুললো। ক্যাঁচ কোঁচ শব্দে ডালা খোলার সাথে সাথে পুরোনো বাক্সের ভিতরে জমা একটা মিশেল গন্ধ কানাইয়ের নাকে এলো। সেন্ট, ন্যাপথলিন, চন্দন বা আরো কত কিছু মেশানো মৃগনাভির সুগন্ধি বাতাস। চোখ বুজে সে হারিয়ে গেলো হাফ প্যান্ট পরা কৈশোরে।

বৌদি অতসীকে বললো, – নীচে ডান দিকে।

একটা পুঁটলি হাতে নিয়ে পিসি বললে, – পেয়েছি গো! এই দেখো।
গিঁট মুক্ত পুঁটলি থেকে বেরিয়ে এলো হাতে সেলাই করা পুঁচকে এক জোড়া ফ্রক আর খান দুই কাঁথা।

কানাই দেখলো সজল আঁখি বুজে মা দুই হাতে শিশুর জিনিসগুলো নিয়ে মুখের ওপরে চেপে ধরলো। কানাই কিছু না বুঝতে পেরে হতভম্ব হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলো।

– তুমি জানো না কানাই, এ তোমার এক দিদির জন্য বানানো হয়েছিলো। বৌদির প্রথম সন্তান । সে ষষ্টী পুজোর দিন মারা যায়। দিদি

মেয়ে সন্তান খুব ভালোবাসে। সযত্নে নিজের ভালোবাসাকে বাক্সবন্দী করে রেখেছে।

অনেকটা নিস্তব্দ সময়। বাতাসে রাতচরা পাখির ডাক আর তার উড়ে যাওয়ার শব্দ। নিশাচর বাদুড়ের ডানার সাঁই সাঁই আওয়াজ ।
মায়ের বাক্সবন্দী ভালোবাসা। হয়তো তাই। তবে কানাই জানে তার মা নির্বিশেষে সবাইকে ভালোবাসে। বাইরে জমাট অন্ধকার, তবুও কানাই এই অন্ধকারের মধ্যে আলোর দিশা দেখতে পেলো। ঝিকিমিকি তারার আকাশে অভিশপ্ত কোন তারাকে খসে পড়তে দেখলো না।

(শেষ)

PrevPreviousনিভৃতকথন পর্ব ১১
Nextহার্ট ব্লকNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

।। ফিল্ড ডায়েরি ।। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী উত্তরবঙ্গ, অক্টোবর, ২০২৫

November 1, 2025 No Comments

প্রাইমারি ডিজাস্টার রেসপন্স হিসেবে বন্যা ও ভূমিধ্বসে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সপ্তাহব্যাপী অভয়া স্বাস্থ্য শিবিরের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা আমরা এক এক করে সকলের সাথে ভাগ করে

স্বপ্নকথা

November 1, 2025 No Comments

আমাদের সময়ে মেডিকেল কলেজগুলোয় ডাকসাইটে মহিলা বস(মানে শিক্ষক) ছিলেন হাতে গোনা। তাও শুধুই পেডিয়াট্রিক্স আর গাইনিতে। পেডিয়াট্রিক্সে ছিলেন প্রফেসর শান্তি ইন্দ্র। আমি কোনওদিনও তাঁর ক্লাস

“অমিতাভ – অ্যাংরি ইয়ং ম্যান” – পর্ব ১

October 31, 2025 No Comments

অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে একটা বড় লেখার ইচ্ছে ছিল। সেদিন সময় হয় নি, আজ লেখাটার শুরু করা যাক এই ভাবে। এই শতাব্দীর সূচনালগ্নে, ইউনিসেফ

সুন্দরবন ও নিবারণদের বারমাস্যা

October 31, 2025 4 Comments

এবার নিবারণরা এসেছিল পাড়ার কালী পুজোয় তাদের চড়বড়ি তাসা পার্টি নিয়ে সেই ‘সোদরবন’ থেকে। দলে ওরা মোট পাঁচজন – নিবারণ, নিরাপদ, নিখিল, নিরঞ্জন আর নিরাপদর

সরকার মানুষের স্বার্থে আমাদের দাবিগুলো পূরণের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ দ্রুত নিক।

October 31, 2025 No Comments

২৬ অক্টোবর, ২০২৫ আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে, আর জি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের নৃশংস খুন ও ধর্ষণের প্রেক্ষিতে এবং লাগাতার আন্দোলনের চাপে নবান্ন

সাম্প্রতিক পোস্ট

।। ফিল্ড ডায়েরি ।। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী উত্তরবঙ্গ, অক্টোবর, ২০২৫

West Bengal Junior Doctors Front November 1, 2025

স্বপ্নকথা

Dr. Arunachal Datta Choudhury November 1, 2025

“অমিতাভ – অ্যাংরি ইয়ং ম্যান” – পর্ব ১

Dr. Samudra Sengupta October 31, 2025

সুন্দরবন ও নিবারণদের বারমাস্যা

Somnath Mukhopadhyay October 31, 2025

সরকার মানুষের স্বার্থে আমাদের দাবিগুলো পূরণের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ দ্রুত নিক।

West Bengal Junior Doctors Front October 31, 2025

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

586507
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]