#ডা_নন্দ_ঘোষের_বই
*********************
মেডিক্যাল কলেজ আর ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ থেকে ডাক্তারি পড়ার পর সরকারি বন্ড পোস্টিং হিসেবে জঙ্গলমহলের শালবনী সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে শিশু-চিকিৎসক হিসেবে কাজে যোগ দিই। শহরের হাসপাতালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধে থেকে হঠাৎ করে প্রান্তিক হাসপাতালে এসে পড়লে যা হয়.. স্বাভাবিকভাবেই চোখে সর্ষেফুল দেখতে শুরু করি। ব্লাড ইনভেস্টিগেশন বলতে প্রায় কিছুই নেই। ওষুধপত্র আর যন্ত্রপাতিও তথৈবচ।
আদিবাসী-প্রধান এলাকার ছত্রে ছত্রে লুকিয়ে আছে দারিদ্র্য, অশিক্ষা আর কুসংস্কার। ততদিনে গোটা রাজ্যে কিংবা বলা ভালো গোটা দেশে চিকিৎসক নিগ্রহ চরম রূপ নিয়েছে। কারণে অকারণে জনতার রোষ আছড়ে পড়ছে নিধিরাম সর্দার ডাক্তারের ওপর। অথচ স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার সমস্যার আসল জায়গাগুলো নিয়ে কোনও কথা হচ্ছে না। এই একই সময়ের আরও দুটো গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের কথা বলবো.. টুকটাক হাত-মকশো করা লেখার অভ্যেস ছিল বহুদিন কিন্তু সচেতনভাবে লেখার কথা কখনো ভাবিনি। পুণ্যদা (ডা. Punyabrata Goon) ‘স্বাস্থ্যের বৃত্তে’ নামে দ্বি-মাসিক পত্রিকায় লেখার কথা বলে। মূলত এখান থেকেই আমার লেখালেখি শুরু। লিখতে গিয়ে শুরুতে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যায় পড়তাম। সম্পাদক জয়ন্তদা (ডা. Jayanta Das) প্রায় হাতে ধরে সেসব ভুল শুধরে দিতো। লেখা নিয়ে প্রাথমিক ভয়গুলো কাটতে শুরু করলো। এই সময়ের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, সব্যসাচীদা (ডা. Sabyasachi Sengupta) আর কিছু পরে ঐন্দ্রিলদার (ডা. Aindril Bhowmik) লেখা পড়ে ফেলা। চমকে উঠেছিলাম! এত শক্তিশালী, এত সুস্বাদু লেখা কীভাবে সম্ভব! দুজনেই আমার মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র এবং লেখালিখিতে আমার অনুপ্রেরণা। যদিও খুব ভালো করেই জানি, ওরকম লেখা আমার পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু গুণীজনেরা বলে গেছেন, লক্ষ্য অনেক উঁচুতে রাখলে তার খানিকটা অর্জন করা সম্ভব।
এই পটভূমিকায় আমার লেখার শুরু। আমি সাহিত্যিক নই। সাহিত্যের কিছুই বুঝি না। জনগণ আর চিকিৎসকের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি কাটানো, সাধারণ কিছু রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া, কুসংস্কার-অন্ধবিশ্বাস দূরীকরণ আর শিশুর যত্ন বিষয়ে কিছু টিপস.. মূলত এগুলিই এই বইয়ের উপজীব্য।
কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে পদে পদে বুঝতে পেরেছি, হঠাৎ করে আজন্মলালিত বিশ্বাসে ঘা দিলে অসফল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আমি মাদুলি জোর করে কেটে দিইনা বরং বলি “তোমার বিশ্বাস থাকলে বিছানার তলায় রাখো, বাচ্চার গায়ে দিও না।” আগে বিশ্বাস আর আস্থার জায়গাটা অর্জন করা দরকার। আমি চাই বিজ্ঞান জেনে তারা নিজেরাই তাবিজ-মাদুলি খুলে দিক।
বইতে ডা. নন্দ ঘোষ যথাসম্ভব সহজ ভাষায় বিজ্ঞানের কথা বলতে চেয়েছেন। লেখাকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য সব লেখাই প্রশ্নোত্তরে।
বাংলা ভাষার বইয়ের পাঠক সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। বোধহয় লেখক সংখ্যাই পাঠক সংখ্যাকে ছাপিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এই অবস্থায় নতুন একটি বই ভাষাকে আরও কষ্ট দেবে কিনা জানিনা।
বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শ্রী রতন সেন।
পরিবেশনায় স্বাস্থ্য শিক্ষা নির্মাণ।
প্রুফ দেখার ঝক্কি সামলেছেন শ্রী সঞ্জিত ভট্টাচার্য্য।
ছাপানোর দায়িত্বে ছিলেন শ্রী কালাচাঁদ ঘোষ।
পরিবেশনায় প্রণতি প্রকাশনী।
এই বই সাহিত্য নয়, গল্প-উপন্যাস নয়। বইয়ের লেখা পড়ে যদি একটি শিশুরও উপকার হয় সেটুকুই চাওয়া। আমি শুধু লেখার কাজটুকু করে দিয়েই হাত গুটিয়ে নিয়েছি। বইয়ের বাদবাকি দেখভাল প্রায় পুরোটাই সামলেছে ঐন্দ্রিলদা। বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন আমার আদর্শ চিকিৎসক ডা. পুণ্যব্রত গুণ। ২৬ শে ডিসেম্বর থেকে বই পাওয়া যাবে। কোথায়, কীভাবে সেগুলো তাড়াতাড়িই জানিয়ে দেবো। সাধারণের কথা ভেবে বইয়ের দাম রাখা হয়েছে মাত্র ৮০ টাকা।
আপাতত বই সবার জন্য তুলে দিলাম। ভালো-খারাপ বিচারের ভার পাঠকের। বই পড়ে পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানালে ভালো লাগবে। প্রয়োজনীয় মনে হলে নিজেদের পরিচিত মানুষজন কিংবা স্যোশাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপে বইটির কথা জানান। ডা. নন্দ ঘোষ আপনাদের ভালোবাসা আর শুভেচ্ছার অপেক্ষায়।