ঋতম মুখোপাধ্যায়ের লেখা
অত্যন্ত দুঃখিত, বাকি ৪ কমরেড। আমি শেষ অব্দি টানতে পারলাম না। সর্বোপরি সেঞ্চুরিটা করতে পারলাম না। আমার বাদ পড়ে যাওয়া লড়াইটা স্বার্থপরের মতো তোমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে এলাম.. শারীরিকভাবে এখনও ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে আবার অনশনে বসি তোর/তোমাদের সাথে, আবার দিনে ১৫ ঘণ্টা করে ঘুমিয়ে প্রত্যুষকে বিব্রত করি, আবার ভাট বকে লোকজনকে জ্বালাই.. কিন্ত saline চালিয়ে দিয়েছে। ফলে সেটা টেকনিক্যালি সম্ভব নয়। এ যাত্রাতেও আমি as usual ছড়ালাম। তোমাদের “কে প্রথম OUT হওয়ার” বাজিটা তোমরা জিতেই গেলে।
তবে কিছু কথা মনে পড়ছে এখন, তাই লিখছি। এই একলা নিঃসঙ্গ CCU আমায় হাড়ে হাড়ে শেখাচ্ছে একসাথে লড়াই করার মর্মটা। সেই একসাথে খালি পেটে গান আর আড্ডাটা আজ খুব মনে পড়ছে। মনে পড়ছে নিজেদের মধ্যে করা ইয়ার্কি ফাজলামিগুলো। মনে পড়ছে কৌশিকদার দেখানো খাবারের reels-গুলো, কিংবা সাবিতদার “ভাই আমরা hardcore অনশন করছি, এই দাদা আজ আমাদের ট্রিট দেবে বলেছে। জলদি নাম নোট করে নে”। কিংবা প্রত্যুষের সাথে করা খুনসুটি আর হঠাৎ উপলব্ধিগুলো “ভাই প্রথম যখন এখানে এসেছিলাম কখনো ভেবেছিলাম এক দিন এই কলেজটাকে আবার কলেজ বানাতে আমাদের অনশনে বসতে হবে! তাও এই ক্ষুদ্র necessity-গুলোর জন্য। তবে দেখিস আমরা যদি করে যেতে পারি এটা, কলেজটাকে আর কখনো ফিরে দেখতে হবে না”। প্রত্যুষ আর আমার পার্টনারশিপটা আলাদাই ছিল। রণবীরদার সেই অনবরত PES খেলা আর চাটন খাবার পর অত্যন্ত চেষ্টা সত্ত্বেও অতীব করুণ comeback গুলোর কথা কি ভুলে থাকা যায়! আরো মনে পড়ছে সেই সব খাবারের লিস্টটার কথা যেগুলো আমরা খাবার প্ল্যান করেছি অনশনের পর।
আমার আজ খুব খারাপ লাগছে আমার বাকি অনশনকারীদের নিয়ে, মূলত কারণ আমি তাদের কষ্টটা অনুভব করতে পারছি। তারা এখনও সবাই না খেয়ে লড়ে যাচ্ছে authority-র চোখে চোখ রেখে। আমি জানি তারা সহজে ছাড়বে না, আমার বাকি রাখা লড়াইটা ঠিক লড়ে নেবে। সস্তার মোটিভেশন দেওয়ার জন্য আজ আমি না থাকলেও, এখন অনশন মঞ্চ আরো প্রাণবন্ত সৌমিতদা আর শুভেদার আগমনে।
আমরা অনশনকারীরা সামনে থাকলেও, সেই সমস্ত ভাই, দাদা আর বন্ধুরা যারা দিনের পর দিন আমাদের সমস্ত রকমের সাহায্য করে গেছে, তাদের লড়াইকে কুর্নিশ জানতে ইচ্ছে করছে আজ। সপ্তর্ষিদা, অনিন্দ্যদা, সঞ্জীবদা, তপদীপদা, সৈকতদা, ত্রিদিবরা আমাদের নিয়ম করে জল খাওয়া থেকে ধরে ধরে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া, রাতে মশারী টাঙিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সকাল হলে মশারী খুলে দেওয়া, কোনো দায়িত্বে একটুকুও গাফিলতি করেনি। এবং আমরা একটু ক্যেত বা ফাঁকি দিলে, এদের থেকে ভালো রকম ঝাড় খেতে হতো। তৎক্ষণাৎ রিপোর্ট পৌঁছে যেত আমাদের “higher authority”-র কাছে অর্থাৎ MOD-দা আর আপনদা। এই দাদারা, সবাই নিজেদের পড়াশুনো, duty এবং ব্যক্তিগত জীবন বিপন্ন করে যে সংকল্প নিয়ে আমাদের দেখভাল করছে, প্রত্যেক ৪-৫ ঘণ্টা পর পর check up করছে এবং একাধারে সারাদিন প্ল্যানিং করছে আন্দোলনটা কি ভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা সত্যি অকল্পনীয়। এদের ছাড়াও আরো অনেক গ্রুপ ছিল যা সব আমি এখনও জেনে উঠতে পারিনি, যাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা কাজ থাকতো, কারুর social media আবার কারুর অফলাইন লিফলেট বিতরণ। এই গ্রুপগুলোর সমন্বয় কি করে হতো জানি না, তবে এগুলো যে সুমনদা, অয়নদা, MOD দা, মৃন্ময়দা, অনিন্দ্যদা, দেবাদা, আপনদার মত অনেক দাদা দিদিরাই করত তা বুঝতে পারতাম।
সত্যি বলতে এই আন্দোলনের ফল জানা নেই আমার। কিন্তু যা আমি শিখলাম এই কয়েকদিনে, যে ভালোবাসা পেলাম সকলের কাছ থেকে তা আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো না। আমি এই কিছুদিনে, নতুন ভাবে ৮৮ কলেজে স্ট্রিটের প্রেমে পড়ে গেলাম, যেখানে আপোস করা কারুর মাথাতেও আসেনা, যেখানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইটা সকলের অভ্যেসে পরিণত হয়, যেখানে ভয় শব্দটা কারুর ডিকশনারিতেও নেই। এমন ভাই, বোন, দিদি, দাদা, বন্ধুদের সংস্পর্শে থেকে সমাজে বিপ্লব আনতে পারব কিনা ঠিক জানি না, তবে জীবন যুদ্ধে ঠিক honours পেয়ে যাবো।