অদ্ভুত এক পরিস্থিতি।
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষরা একটি বিশেষ দলের পক্ষের চিকিৎসকদের ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। হ্যাঁ, বিশেষ এক চিকিৎসক-গোষ্ঠী নয় – বিশেষ এক দল। ‘তৃণমূলপন্থী চিকিৎসক’।
দলটির ইদানীং যা অবস্থা, তাতে অনেকদিনের অতি বড় সমর্থকও নিজের সমর্থনের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে সঙ্কোচ বোধ করেন। আমতা আমতা করেন। কিন্তু চিকিৎসক অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষকুল সে সঙ্কোচ (বা চক্ষুলজ্জা) জয় করেছেন। তাঁরা মোটামুটি দু’কান-কাটা গোত্রভুক্ত – রাস্তার মধ্যিখান দিয়ে বুক ফুলিয়ে হাঁটতে লজ্জা পান না।
সেসব খবর জানাজানি হয়ে যেতে – কাগজে ছাপা হয়ে গেলে – একটু সাবধানি হয়ে পড়তে হয়েছে। আপাতত বিভাগীয় প্রধানদের কাছে ফোন আসছে। প্রিন্সিপালের ঘর থেকে ব্যালটের বিলিবণ্টন ঠিকভাবেই হবে, বিভাগীয় প্রধানদের দায়িত্ব বিভাগের যাবতীয় শিক্ষক-চিকিৎসকদের কাছ থেকে ফাঁকা ব্যালট জোগাড় করে উপযুক্ত স্থানে জমা দেওয়া।
ডিএ না পেলেও বর্তমান সরকারের আমলে ভয় পাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ খামতি নেই। কাজেই, সবই খুব পরিকল্পিত পথে সুন্দরভাবে এগোচ্ছে।
তবে এটুকুও বলার, বিভিন্ন ফোনের রেকর্ডিং আমাদের কাছেও রয়েছে। উপযুক্ত সময়ে সেই রেকর্ডিং প্রকাশ্যে আনতে আমরা সঙ্কুচিত হবো না।
এবং এও জানানোর, বর্তমানে সরকারে থাকা দলটি কোনও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে সরকারে বসেননি। আপনি নিয়ম মেনে চললে তাঁদের রোষানলে পড়লেও পড়তে পারেন, বদলি ইত্যাদি ঘটলেও ঘটতে পারে – কিন্তু আইনি সমস্যা কিছু ঘটবে না। ওদিকে, আপনারা আদালতের নির্দেশে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচনে যেভাবে আইন ভাঙছেন, তা প্রমাণ-সহ (প্রমাণ যথেষ্ট আছে আমাদের হাতে) আদালতে দাখিল হলে কিন্তু সরকারি পদের অপব্যবহার বা পদে থেকেও দায়িত্বপালনে অনীহা/ব্যর্থতার সেসব আদালত-গ্রাহ্য অভিযোগ সটান সার্ভিসবুকে উঠে যাবে। অন্তত উঠে যাতে যায়, সেটুকু দেখার দায়িত্ব আমরাই নেব। অবসরকালে সুযোগসুবিধার ক্ষেত্রেও অল্প-বিস্তর সমস্যা হতে পারে বইকি!! কাজেই, একটু ভেবেচিন্তে…
ওদিকে নিজেদের প্রচারপুস্তিকায় ন্যাশনাল এমব্লেম ব্যবহার করার ব্যাপারে নিজেদের ‘ভুল’ তৃণমূলপন্থী প্রার্থীরা স্বীকার করে নিয়েছেন। একেবারে সংবাদপত্রে প্রকাশিত সেই ‘ভুল স্বীকার’। ‘ভুল’ স্বীকার করলেও অপরাধ অপরাধই থাকে। জাতীয় প্রতীকের অনুচিত ব্যবহারের শাস্তি, খবরটবর নিয়ে জানলাম, বছরদুয়েকের জেল এবং জরিমানা (অনাদায়ে জেলবাস আরেকটু বেশি)। সেদিক থেকেও…
গত কয়েকবছরে যেখানে যখনই কোনও চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন, পাশে থেকেছি আমরা। দৌড়ে গিয়েছি আমরা৷ এমনকি সরকারি কমিশন যখন অকারণ হেনস্থা করেছেন, আইনি সহায়তা জুগিয়েছি আমরা। এসবই করেছি রাজনৈতিক পরিচয় না দেখেই। স্রেফ আক্রান্তের পাশে থাকার অনুভূতি – মানবিকতার বোধ – থেকেই।
কিন্তু মনে হয়, একটু ভেবে দেখার সময় এসেছে। পাশে দাঁড়ানো বা সাথে থাকার আগে কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ জরুরি বইকি!! শুধুই সহমর্মিতা, শুধুই সহিষ্ণুতা – তাকে যদি ধান্দাবাজেরা দুর্বলতা হিসেবে বুঝে ব্যবহার করতে যায়, দোষটা যতখানি ধান্দাবাজেদের, তার চাইতেও বেশি আমাদেরই। এই হিসেব-নিকেশটুকু বোঝা জরুরি।
অবশ্য এসব বিরক্তি-ক্লান্তি-রাগ-অভিমানের মধ্যেও যখন দেখি, চিকিৎসকরা একবাক্যে বলছেন, শুধু ব্যালটটা হাতে পাই, তাহলেই হবে…
যখন শুনি, প্রচার করতে হবে না, শুধু যাতে ব্যালটটা পাই, ওটুকু দেখো…
যখন দেখি, ব্যালটের ঠিকঠাক বিলিবণ্টনের কথা অধ্যক্ষের কাছে বলতে যেতেই প্রিন্সিপালের পিএ বলছেন, স্যার তো এইমাত্র বেরিয়ে গেলেন জরুরি মিটিংয়ে… যদিও ঘরের বাইরে ‘ইন’ আলো জ্বলজ্বল করছে…
যখন দেখি অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষরা কথা বলার সময় চোখের দিকে তাকাতে পারছেন না… অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মতো কিলবিল করে গুটিয়ে যাচ্ছেন…
যখন দেখি, এত আয়োজন সত্ত্বেও শেষমেশ আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে দিতে হচ্ছে…
তখন বুঝি, জিতছি আমরাই…
বুঝি, ওরা ভয় পেয়েছে…
এই রাজ্যে গণতন্ত্রের হাল দেখে দুঃখও হয়, রাগও…
আপাতত কাউন্সিল পালটে দেওয়া যাক। বাকিটা তার পরে।
পাল্টানোর শুরুটা যে কোথা থেকে হয়, আর একবার শুরু হলে তার গতি যে শেষমেশ কোথায় পৌঁছাতে পারে, সে ভবিষ্যতবাণী কে-ই বা করতে পারে! সেকথা শাসক জানে – সুতরাং তারা যথার্থ কারণেই ভয় পাচ্ছে – কথাটা আপনিও মনে গেঁথে নিন এই বেলা।
#CleanupWBMC2022
#VoteForChangeWBMC2022