বছর পঁয়তাল্লিশের ভদ্রলোক চেম্বারে ঢুকেই বললেন, ‘ওষুধপত্র বেশী লিখবেন না। কোভিডের পরে আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। কোনো টেষ্ট করতে দেবেন না। পারব না। ওষুধ আর ব্যায়ামের দ্বারাই ট্রিটমেন্ট করুন।’
‘আপনার কষ্ট কি সেটা তো বলুন!’
‘আপনি জানেন তো! আপনাকে তো দেখিয়েছিলাম। আপনি তখন একটামাত্র ওষুধ দিয়ে ভাল করে দিয়েছিলেন।’
‘কবে?’
‘২০০৬ সালে।’
‘এটা কোন সাল?’
‘২০২২’
‘তাহলে ষোল বছর। অত দিনের কথা আমি কি করে মনে রাখব?’
‘মনে নেই?’
‘না। এখন কি সমস্যা সেটা বলুন।’
‘ঘাড়ে ব্যাথা। মাথা ঘোরে। পিঠটাও শক্ত হয়ে গেছে।’
‘সেই ২০০৬ সাল থেকে?’
‘না না। কি যে বলেন! এতদিন ভালো ছিলাম। এই গত এক সপ্তাহ ধরে ব্যথাটা আবার শুরু হয়েছে। মাথা ঘোরাটা অবশ্য আগে ছিল না।
‘অন্য কোনো রোগ আছে?’
‘ডায়াবেটিস আছে।’
‘প্রেশার?’
‘না না প্রেশার-ট্রেশার নেই।’
‘রোজ কি কি ওষুধ খান?’
‘সুগারের জন্য একটা ট্যাবলেট খাই। প্রেশারের জন্য দুটো। একটা কুড়ি পাওয়ারের, আর একটা পাঁচ পাওয়ারের।’
‘এই যে বললেন আপনার প্রেশার নেই?’
‘নেই-ই তো। আপনার এখানেও তো মেপেছে। পায় নি।’
আমি বললাম ‘সুগারের চিকিৎসা কি আন্দাজে করান?’
‘না না, আন্দাজে করাব কেন? প্রতি মাসে রক্তপরীক্ষা করাই। এই দেখুন গতকালের রিপোর্ট।’ এই বলে আমার দিকে নিজের আইফোনটা বাড়িয়ে ধরলেন।
‘তাহলে ঘাড়ে ব্যথার চিকিৎসা আন্দাজে করাতে চাইছেন কেন?’
‘আন্দাজে কেন করবেন? এক্সরে তো করিয়েছিলাম। আপনি তো দেখেছিলেন!’
এই বলে তিনি ২০০৬ সালের লালচে হয়ে যাওয়া, ছোপ ধরা একটা এক্সরে প্লেট বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন।