ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার মূল লক্ষ রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। এর জন্য বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
ওষুধ
প্রথম ওষুধ হলো মেটফরমিন। এটি অত্যন্ত সস্তা এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া করেনা। তাছাড়া এই ওষুধটি খিদে কমায় এবং ওজনও কিছুটা হ্রাস করে।
দ্বিতীয় ওষুধ হলো সালফোনাইলইউরিয়া (যেমন গ্লিমেপেরাইড)।
এই দুটি ওষুধে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে না আসলে তৃতীয় ওষুধ হিসাবে এর সাথে যোগ করা হয় ইনসুলিন।
ইদানীং অনেক নতুন নতুন ওষুধ বাজারে আসছে। যেমন থায়োজলিডিনিডাইয়োন, গ্লিপটিন, অ্যাকারবোজ, ভোগ্লিবোজ ইত্যাদি। অনেকে সময় রোগী ইনসুলিন নিতে না চাইলে, বা কোনো কারণে ইনসুলিন না দেওয়া গেলে এর মধ্যে থেকে তৃতীয় ওষুধটি দেওয়া যেতে পারে। তবে এগুলির চাইতে মেটফরমিন, সালফোনাইলইউরিয়া এবং ইনসুলিনের মাধ্যমে চিকিৎসা করলে খরচ অনেক কম হয় এবং গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখাও সুবিধা হয়।
ইনসুলিন নিয়ে রোগীদের মধ্যেই নানারকম ভীতি থাকে। চিকিৎসকের দায়িত্ব ভালো করে বুঝিয়ে সেই ভীতি দূর করা। মনে রাখতে হবে ডায়াবেটিস নিঃশব্দ ঘাতক। প্রথম থেকে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে, একবার সমস্যা শুরু হলে, তখন ব্যয়বহুল চিকিৎসা করেও সেই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করা যাবে না।
রক্তে গ্লুকোজের লক্ষ্যমাত্রা
চিকিৎসা শুরুর পর প্রথম দিকে একটু ঘন ঘন রক্তে গ্লুকোজ মাপা হয়। তেমন কোনও সমস্যা না থাকলে প্রথম দিকে প্রতি তিন মাস অন্তর, এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে ছয় মাস অন্তর রক্তের গ্লুকোজ মাপলেই চলে।
১. HbA1c: আগেই বলা হয়েছে এটি গ্লুকোজের মাত্রার দীর্ঘমেয়াদী পরিমাপ করতে পারে।
চিকিৎসাধীন ডায়াবেটিক ব্যক্তির HbA1c ৭% এর কম থাকা উচিৎ।
তবে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তি এবং চিকিৎসার ফলে যাদের বার বার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে HbA1c এর লক্ষ্যমাত্রা ৮% এর নীচে।
২. খালিপেটে রক্তের গ্লুকোজঃ এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ১২৬ মিগ্রা/ডেসিলি. এর কম।
চিকিৎসকের কর্তব্য
১. প্রত্যেকবার ডায়াবেটিক রোগী দেখার সময় তাঁদের খাদ্য, ব্যায়াম ইত্যাদি নিয়ে বলা। ধূমপান ও অন্য কোনও নেশা থাকলে তার কুফল সম্পর্কে আলোচনা করা এবং নেশা ত্যাগ করার জন্য বলা।
২. প্রত্যেকবার রক্তচাপ মাপা এবং রক্তচাপ ১৩০/৮০ মিলিমিটার মার্কারির নীচে রাখা।
৩. প্রত্যেকবার ওজন মাপা এবং বডি মাস ইনডেক্স হিসেব করা। বেশি হলে তা কমানোর জন্য রোগীকে উৎসাহিত করা।
৪. বছরে একবার লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করা। রোগীর বয়স ৪০ বছরের বেশি হলে অনেক চিকিৎসকই রোগীকে রিপোর্টের উপর নির্ভর না করেই স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকেন।
৫. বছরে একবার ইউরিনের এলবুমিন ক্রিয়েটিনিন রেশিও বা ACR পরীক্ষা করা উচিৎ এবং বছরে অন্তত একবার রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা।
৬. প্রত্যেকবার রোগীর পায়ের পাতা পরীক্ষা করা।
৭. প্রতি দুবছরে একবার রোগীর রেটিনা পরীক্ষা করা।
৮. সর্বোপরি প্রত্যেকবার রোগীকে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণের এবং রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলা।