হাইপারটেনসিভ আর্জেন্সি এবং এমারজেন্সি
হাইপারটেনসিভ আর্জেন্সি এবং এমারজেন্সি দুটি একে অপরের থেকে আলাদা। যদিও দুই ক্ষেত্রেই রক্তচাপ অত্যাধিক বেশি হয়। দুটির চিকিৎসাও আলাদা। আরজেন্সির ক্ষেত্রে রোগীকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু এমারজেন্সির ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার প্রয়োজন।
হাইপারটেনসিভ আরজেন্সি (Hypertensive Urgency):
এক্ষেত্রে সিস্টোলিক প্রেশার >১৮০ মিলিমিটার পারদ এবং/অথবা ডায়াস্টোলিক প্রেশার >১১০ মিলিমিটার পারদ হয়। কিন্তু রোগীর কোনো রকম উপসর্গ থাকে না বা শরীরের কোনও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হওয়ার লক্ষণ থাকে না।
হাইপারটেনসিভ এমারজেন্সি (Hypertensive Emergency):
এক্ষেত্রেও হাইপারটেনসিভ আর্জেন্সির মতো সিস্টোলিক প্রেশার >১৮০ মিলিমিটার পারদ এবং/অথবা ডায়াস্টোলিক প্রেশার >১১০ মিলিমিটার পারদ হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে অত্যাধিক রক্তচাপের জন্য বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়। আগেই আলোচনা করা হয়েছে হাইপারটেনশনে মূলত আমাদের মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, কিডনি, রক্তবাহী নালী এবং চোখ আক্রান্ত হয়।
হাইপারটেনসিভ এমারজেন্সিতে যে ক্ষতি গুলো হতে পারেঃ
- হাইপারটেনসিভ এনকেফালোপ্যাথি।
- মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ।
- হার্ট ফেলিওর।
- বুকে ব্যথা। (হৃদপিণ্ডের ইশ্চেমিয়া)
- হার্ট এটাক।
- রক্তনালীর কোথাও বেলুনের মতো ফুলে যাওয়া (অ্যানিউরিজম)
- গর্ভাবস্থায় খিঁচুনি। (এক্লামপশিয়া)
- চোখের ভেতরে রেটিনায় রক্তক্ষরণ।
- একিউট রেনাল ফেলিওর।
যে উপসর্গ গুলি নিয়ে রোগী আসতে পারেনঃ
- মাথা যন্ত্রণা।
- দৃষ্টি শক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া।
- রোগীর চেতনায় গণ্ডগোল।
- খিঁচুনি।
- বুকে চাপ ব্যথা।
- শ্বাসকষ্ট, ইত্যাদি।
কেন এমারজেন্সি হয়ঃ
যারা নিয়মিত তাঁদের রক্তচাপ মাপেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধপত্র খান তাঁদের হাইপারটেনসিভ এমারজেন্সি হয় না। যারা অনিয়মিত ওষুধ খান অথবা খানই না, বা রক্তচাপ নিয়মিত মাপেন না তাঁদের হাইপারটেনসিভ এমারজেন্সি হতে পারে। এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাই প্রথম অবস্থায় হাইপারটেনশন নির্ণয় করা এবং প্রথম থেকে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা ভীষণ জরুরী।
অনেকেই হাইপারটেনশন ধরা পড়ার পর প্রশ্ন করেন, ‘ডাক্তারবাবু, আমার তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না, তাহলে কি ওষুধ খাব? শুনেছি প্রেশারের ওষুধ একবার শুরু করলে আর ছাড়া যায় না।’ এক্ষেত্রে একটাই উত্তর দেওয়া যায়, ‘আপনি প্রথম থেকেই ওষুধ খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যদি না রাখেন, পরে আর ওষুধ খাওয়ার সুযোগ নাও পেতে পারেন। অথবা পেলেও ততদিনে আপনার একাধিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়ে যাবে। ফলে একটি মাত্র ওষুধ খেয়ে দীর্ঘদিন সুস্থ ভাবে কাটানোর বদলে আপনাকে তখন একাধিক ওষুধ খেতে হবে এবং নানা রকম শারীরিক সমস্যা নিয়ে বাঁচতে হবে।
চিকিৎসাঃ
হাইপারটেনসিভ আর্জেন্সির ক্ষেত্রে রোগীকে বাড়িতে রেখেই মুখে খাওয়ার ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু হাইপারটেনসিভ এমারজেন্সির ক্ষেত্রে রোগীকে সাধারণত আই সি ইউ তে ভর্তি করে চিকিৎসা করা হয়। এক্ষেত্রে রক্ত কমানোর ওষুধ (যেমন নাইট্রোপ্রুসাইড, ল্যাবেটলঅল, এনালাপ্রিল ইত্যাদি)শিরাতে সরাসরি চালানো হয়। রক্তচাপ খুব তাড়াতাড়ি না কমিয়ে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক করা হয়।
সারারণত প্রথম দুঘণ্টায় সিস্টোলিক বা ডায়াস্টোলিক প্রেশার ২৫% এর বেশি কমানো হয় না। হঠাৎ করে রক্তচাপ অনেকটা কমে গেলে মস্তিষ্কে রক্তচলাচলের যে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকে তা নষ্ট হয়ে এনকেফালোপ্যাথি বা ইশ্চেমিয়া হতে পারে।
রক্তচাপ কমানো ছাড়াও অন্যন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের যে ক্ষতি হয়েছে সে গুলির চিকিৎসা করাও জরুরী। সঠিক সময়ের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না হলে হাইপারটেনসিভ এমারজেন্সি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যু বা দীর্ঘ মেয়াদি অসুস্থতা বা পঙ্গুত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।