হাইপারটেনশনের শ্রেণী বিভাগ
হাইপারটেনশনকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন (Essential Hypertension) এবং সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন (Secondary Hypertension)।
এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন
৯০% এর বেশি রোগীর রক্তচাপ বৃদ্ধির পেছনে কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এই ধরণের হাইপারটেনশনকে এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন বলে। তবে নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলেও কিছু ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’কে চিহ্নিত করা গেছে, যারা এসেনশিয়াল হাইপারটেনশনের সাথে নিশ্চিত ভাবে জড়িত। যেমন-
বয়স= বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাইপারটেনশনের ঝুঁকি বাড়ে।
দৈহিক স্থূলতা।
শারীরিক পরিশ্রমের অভাব।
খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ।
হাইপারটেনশনের পারিবারিক ইতিহাস।
মদ্যপান।
ধূমপান।
মানসিক চাপ, ইত্যাদি।
যদিও এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন নিরাময়যোগ্য রোগ নয়, তাহলেও ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’গুলি এড়িয়ে চলার মাধ্যমে আমরা হাইপারটেনশনকে কিছুটা ঠেকিয়ে রাখতে পারি। যেমন খাদ্যে লবণের পরিমাণ কমালে রক্তচাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। জাপানের উত্তরভাগের দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারীরা সম্ভবত খাদ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মাথা পিছু লবণ গ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে এসেনশিয়াল হাইপারটেনশনের প্রাদুর্ভাবও পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে যে সব জনগোষ্ঠীর মানুষেরা খাদ্যে অত্যন্ত কম লবণ খান, তাঁদের মধ্যে হাইপারটেনশনের রোগীর সংখ্যা নগণ্য।
সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন
৫ থেকে ১০% হাইপারটেনসিভ রোগীর উচ্চ রক্তচাপের পেছনে নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। অনেক সময় কারণগুলিকে নির্মূল করতে পারলে বা কারণগুলির চিকিৎসা করলে তাঁদের রক্তচাপ আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। যে কারণ গুলিতে সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন হয় সেগুলি হলো-
১) কিডনির সমস্যা
ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি (ডায়াবেটিস থেকে দীর্ঘমেয়াদি রেনাল ফেলিওর)।
পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ।
গ্লোমেরুলার কিডনি ডিজিজ।
রেনাল আর্টারি স্টেনোসিস ইত্যাদি।
২) হরমোনের গণ্ডগোল
হাইপারথাইরয়েড এবং হাইপোথাইরয়েড।
কুশিং সিন্ড্রোম (অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে কর্টিসল বেশি তৈরী হওয়া)।
অ্যালডোস্টেরোনিজম (অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে অ্যালডোস্টেরোন বেশি তৈরী হওয়া)।
ফিওক্রোমোসাইটোমা (অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে এড্রেনালিন ও নরএড্রেনালিন বেশি তৈরী হওয়া)।
হাইপার প্যারাথাইরয়েডিজম।
৩) বিভিন্ন ওষুধ
স্টেরয়েড।
গর্ভনিরোধক।
ব্যথার ওষুধ।
কোকেন ইত্যাদি।
৪) অন্যান্য কারণ
কোয়ার্কটেশন অফ অ্যায়োর্টা।
গর্ভাবস্থা।
স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া। ইত্যাদি
সম্ভবত সেকেন্ডারি হাইপারটেনশনের অধিকাংশ কারণগুলির সাথে আপনারা পরিচিত নন। তবে এগুলি বিস্তারিত বোঝানো এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমদের এটুকু জানলেই চলবে এই কারণগুলির অধিকাংশই নিরাময়যোগ্য এবং কারণগুলির চিকিৎসা করলে অনেকসময় রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যায়। যেমন হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে অনেক সময় ডায়াস্টোলিক প্রেশার কিছুটা বাড়ে। হাইপোথাইরয়েডের ওষুধ খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রক্তচাপ কমানোর কোনো ওষুধ লাগেনা।