২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেটরি ব্লাড প্রেশার মনিটারিং
এক্ষেত্রে রোগীর বাহুতে একটি বিশেষ ভাবে প্রস্তুত স্বয়ংক্রিয় রক্তচাপ মাপার যন্ত্র বেঁধে দেওয়া হয়। এই যন্ত্র সারাদিন ধরে রোগীর রক্তচাপ মাপে। চিকিৎসকের চেম্বারে একবার বা দুবার রক্তচাপ মাপা হয়। কিন্তু এই পদ্ধতিতে সারাদিন ধরে বিভিন্ন সময়ে রোগীর রক্তচাপ মাপা যায় এবং রোগীর দিনের বিভিন্ন সময়ে রক্তচাপ কেমন আছে সে সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
এই যন্ত্র কতক্ষণ অন্তর রক্তচাপ মাপে?
দিনের বেলায় ২০- ৩০ মিনিট অন্তর এবং রাত্রে ঘুমানোর সময়ে একঘন্টা অন্তর রক্তচাপ মাপে। রক্তচাপের সাথে সাথে এই যন্ত্রে পালস রেট অর্থাৎ নাড়ীর গতিও মাপা হয়।
একাধিক রক্তচাপের পরিমাপ থেকে গড় রক্তচাপ বোঝা যায়। তাছাড়া দিনের বিভিন্ন সময়ে রক্তচাপের ও পালস রেটের পার্থক্য বোঝা যায়।
কেন ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেটরি ব্লাড প্রেশার মনিটারিং ব্যবহার করা হয়?
এক্ষেত্রে অনেক অতিরিক্ত তথ্য পাওয়া যায়। যেটার সাহায্যে কারো হাইপারটেনশন সঠিক ভাবে নির্ণয় করা যায় এবং তাঁর হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সুবিধা হয়।
যেমনঃ
১) বিভিন্ন কাজকর্মের সময়ে আমাদের রক্তচাপ কতটা বাড়ছে বোঝা যায়।
২) বেশিরভাগ মানুষের ঘুমানোর সময়ে সিস্টলিক প্রেশার ১০%- ২০% কমে। কিন্তু হাইপারটেনশনের প্রাথমিক অবস্থায় ঘুমানোর সময়ে রক্তচাপ কমে না, বরঞ্চ অনেক সময় রক্তচাপ বেড়ে যায়। সেটা এই পদ্ধতিতে বোঝা যায় এবং হাইপারটেনশন অনেক আগে নির্ণয় করা যায়।
৩) হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন নিয়ে আগের পর্বেই আলোচনা করা হয়েছে। যেখানে চিকিৎসকের চেম্বারে মানসিক উদ্বেগের জন্য রোগীর রক্তচাপ বেড়ে যায়। এই পদ্ধতিতে রোগীর হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন আছে কিনা বোঝা যায়।
৪) মাস্কড হাইপারটেনশনঃ এটা হোয়াইট কোট হাইপারটেনশনের ঠিক উল্টো। এক্ষেত্রে ডাক্তারের চেম্বারে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু বাড়িতে রক্তচাপ বেশি থাকে। হাইপারটেনশনের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন এরকম প্রায় ২০% রোগীর মাস্কড হাইপারটেনশন থাকে।
৫) এর মাধ্যমে রোগীর উচ্চ রক্তচাপ দিনের ২৪ ঘণ্টা ধরে ওষুধপত্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রণে থাকছে কিনা তাও বোঝা যায়। ২৪ ঘণ্টার বিভিন্ন সময়ের রক্তচাপের পরিমাপ দেখে চিকিৎসক রক্তচাপের ওষুধের পরিমাণ ও ওষুধ খাওয়ার সময় ঠিক করতে পারেন। এর ফলে দিনের ২৪ ঘণ্টা ধরেই রোগীর রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
৬) রোগীর সারাদিনে কখনো রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাচ্ছে কিনা অর্থাৎ হাইপোটেনশন হচ্ছে কিনা তাও বোঝা যায়। ওষুধের পরিমাণ ও সময় পরিবর্তন করে এই হাইপোটেনশনকে ঠেকানো যায়।
৭) এছাড়াও নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেটরি ব্লাড প্রেশার মনিটারিং বিশেষ উপযোগী।
- গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বাড়লে।
- বর্ডারলাইন হাইপারটেনশন বা রক্তচাপের সামান্য বৃদ্ধি হলে।
- ওষুধের মাধ্যমে সঠিক ভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে।
- অন্য ওষুধের জন্য রক্তচাপে গণ্ডগোল হলে।
- মাথা টলমল করলে বা একাধিক বার অজ্ঞান হয়ে গেলে।
তবে একটাই সমস্যা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সব সুযোগ এখনও মানুষের নাগালের মধ্যে আসেনি। তবে সময়ের সাথে সাথে একদিন নিশ্চয়ই ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেটরি ব্লাড প্রেশার মনিটারিং সকলের আয়ত্ত্বের মধ্যে চলে আসবে এবং সকলেই এর সুফল পাবেন।