প্রশ্নোত্তর
একঘেঁয়েমি কাটানোর জন্য এই পর্বে হাইপারটেনশন নিয়ে সাধারণ মানুষের কয়েকটি ভুল ধারণার কথা বলি, যা আমাদের চিকিৎসকদের প্রতিদিনই শুনতে হয়।
১) ডাক্তারবাবু, আপনি বলছেন আমার প্রেশার বেশি, ওষুধ খেতে হবে। অথচ আমার তো শরীরে কোনো সমস্যা নেই। তাহলে কেন ওষুধ খাব?
উত্তরঃ হাইপারটেনশানে আক্রান্ত অধিকাংশ ব্যক্তির কোনো উপসর্গ থাকে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অন্য কারণে ডাক্তার দেখানোর সময় রক্তচাপ মাপতে গিয়ে হাইপারটেনশন ধরা পরে। প্রথম অবস্থায় হাইপারটেনশন ধরা পড়লে এবং প্রথম থেকেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে দীর্ঘ সুস্থ জীবন কাটানো সম্ভব। তাই কোনও সমস্যা না থাকলেও প্রথম থেকেই খাদ্যাভ্যাস পাল্টানো, ব্যায়াম ও ওষুধপত্রের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিৎ। মনে রাখতে হবে হাইপারটেনশন হলো নিঃশব্দ ঘাতক। তেমন কোনো উপসর্গ না থাকলেও এটি ধীরে ধীরে হৃদরোগ, পক্ষাঘাত, দৃষ্টিহীনতা ও রেনাল ফেলিওরের কারণ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এড়াতেই ওষুধ দেওয়া হয়। অনেকে বলেন, এই ওষুধ শুরু করলে সারা জীবন খেতে হবে, তাই শুরু না করাই ভালো। এটাও বিপজ্জনক চিন্তা। প্রয়োজন হলে ওষুধ অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব শুরু করা উচিত, নয়তো জটিলতা বাড়বে।
২) আমার ঘাড় ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে, অথচ আমার প্রেশার নর্মাল। এটা কি করে হতে পারে?
উত্তরঃ অনেকেই ঘাড়ে ব্যথা হলে মনে করেন, নিশ্চয়ই রক্তচাপ বেড়েছে। এই ধারণা অমূলক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রক্তচাপ বৃদ্ধির কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না। আর ঘাড়ে ব্যথা অন্যান্য অনেক কারণে হতে পারে।
৩) ডাক্তারবাবু, আপনি লবণ খেতে বারণ করছেন। লবণ কি ভেজে খাওয়া যেতে পারে?
উত্তরঃ উচ্চ রক্তচাপের জন্য অতিরিক্ত লবণ খেতে নিষেধ করায় অনেকেই লবণ ভেজে খান বা রান্নায় লবণের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। তাতে কোনো লাভ নেই। লবণ যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন, তা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেবে।
৪) প্রেশার ধরা পড়লে ডিম, দুধ, মাংস সব খাওয়া কি বন্ধ করে দিতে হবে?
উত্তরঃ দুধ-ডিম-মাংস খেলে রক্তচাপ বাড়ে—এ ধারণাও ভুল। রক্তচাপ বাড়লে অনেকেই দুধ-ডিম খাওয়া ছেড়ে দেন। কিন্তু আসলে লবণ বা লবণাক্ত খাবার বেশি খেলে রক্তচাপ বাড়ে। তবে অনেকসময় হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিকে তেল-চর্বিযুক্ত খাবার, যেমন ডিমের কুসুম, দুধের সর, চর্বিযুক্ত মাংস ইত্যাদি খেতে নিষেধ করা হয়।
৫) ওষুধ খেয়ে প্রেশার স্বাভাবিক থাকছে। তাহলে কি ওষুধ বন্ধ করে দেব?
উত্তরঃ উচ্চ রক্তচাপের অনেক রোগী রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন, যা একেবারেই ঠিক নয়। ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করলে রক্তচাপ হঠাৎ করে বেড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, এমনকি জীবনের ঝুঁকিও থাকে।
৬) ডাক্তারবাবু, আমার জীবনে যা টেনশন, রক্তচাপ কমবে কি করে?
উত্তরঃ মানসিক চাপ, উদ্বেগ ইত্যাদি হাইপারটেনশনের জন্য কিছুটা দায়ী তো বটেই। তবে কেবল মানসিক উৎকণ্ঠা উচ্চ রক্তচাপের একমাত্র কারণ নয়। অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন, ওজনাধিক্য, ধূমপান, মদ্যপান, তেল-চর্বিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ প্রভৃতি উচ্চ রক্তচাপের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে রক্তচাপ বাড়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়।
Khub upokari lekha.anek kichhu janlam.dhonyobaad.
অনেকের অসম্ভব ঘাড়ে ব্যথার চিকিৎসা করার পর স্পণ্ডিলাইটিস ধরা পড়ে…. এই রোগটাও কি হাইপারটেনশনজাত ?