হাইপারটেনশন ও চোখ
আরও একবার বলি, হাইপারটেনশন হল নিঃশব্দ ঘাতক। সাধারণত প্রথমে কোনো উপসর্গ না থাকলেও হাইপারটেনশন আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে এবং হঠাৎ করে মৃত্যুর বা পঙ্গুত্বের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
হাইপারটেনশনের ফলে দেহের নির্দিষ্ট অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হওয়াকে বলে ‘এন্ড অরগ্যান ড্যামেজ’ (End Organ Damage)। মূলত যে অঙ্গগুলির ক্ষতি হয় সেগুলি হল-
• মস্তিষ্ক
• হৃদপিণ্ড
• কিডনি
• চোখ
• দেহের বিভিন্ন অংশের রক্তনালী
এই পর্বে আমরা চোখের ক্ষতি নিয়ে সংক্ষেপে জানব। পরবর্তী পর্বগুলিতে অন্যান্য ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি
অনেক বছর ধরে হাইপারটেনশন থাকলে চোখের রেটিনাতে নানা পরিবর্তন দেখা যায়। একে বলা হয় হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি।
প্রথমে রেটিনার রক্তনালীগুলি সরু হতে থাকে। কোন কোন রক্তনালী মেটে রঙের এবং সাদা রঙের হতে পারে, যাকে বলা হয় কপার ওয়ারিং এবং সিলভার ওয়ারিং। সরু হতে হতে রেটিনার কিছু রক্তনালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিছু রক্তনালীর দেয়ালের পরিবর্তন হয়ে ফুলে যায়, ব্লাড রেটিনাল ব্যরিয়ার নষ্ট হয়ে যায় এবং রক্তনালী থেকে জল, রক্তকণিকা, লিপিড ইত্যাদি চোখের ভেতরে রেটিনার সামনে চলে আসে। এ সকল অবস্থাকেই বলা হয় চোখের রেটিনাল ইডিমা, হেমোরেজ, এগজুডেট ইত্যাদি। সকল উপসর্গকে একত্রে বলা হয় হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি।
হাইপারটেনশনের মাত্রা এবং মেয়াদ বেশি হলে হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি-র মাত্রাও বেশি হতে পারে।
অপটিক নার্ভের ক্ষতি
ডায়াস্টলিক রক্তচাপ অনেক বেড়ে গেলে চোখের অপটিক নার্ভে জল জমে ডিস্ক ইডিমা হয়। রেটিনায় জল জমে এগজুডেটিভ রেটিনাল ডিটাচমেন্ট করতে পারে। অপটিক নার্ভের রক্ত সরবরাহ কমে ইশ্চেমিক অপটিক নিউরোপ্যাথি নামক সমস্যা হতে পারে। এ সমস্ত জটিলতা হলে দৃষ্টিশক্তি অনেক কমে যায় এবং জরুরীভাবে উচ্চ রক্তচাপ ও চোখের জটিলতার চিকিৎসা করতে হয়। তা না হলে অপটিক নার্ভ শুকিয়ে স্থায়ীভাবে অন্ধত্ব বরণ করতে হতে পারে।
গ্লকোমা
হাইপারটেনশন থাকলে চোখের চাপও অনেক সময় বেড়ে যায় এবং দৃষ্টির পরিসীমা কমে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় গ্লকোমা। এজন্যে উচ্চ রক্তচাপ অনেক দিন থাকলে এক ধরনের গ্লকোমা (ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লকোমা)-এর হার স্বাভাবিক রক্তচাপের মানুষদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি দেখা যায়।
চিকিৎসাঃ
হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথির মূল চিকিৎসা রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখা।
হাইপারটেনশনের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন, কিডনির সমস্যা, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকলে তারও চিকিৎসা প্রয়োজন।
চোখের জটিলতা হয়ে গেলে চোখের রঙিন ছবি, ফ্লুরেসিন এনজিওগ্রাফি ইত্যাদি পরীক্ষা করে, সঠিক রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রেটিনায় লেজার চিকিৎসা করলে দৃষ্টির উন্নতি হতে পারে।
উবু হয়ে বসে কোনও কাজ করতে করতে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে ‘চোখে অন্ধকার দেখা’ ও অল্প মাথা ঘোরা ও হঠাৎই অনেকটা হাঁফিয়ে যাওয়া কি হাইপারটেনশন এর লক্ষণ ?