এপ্রিল ১৩, ২০২৫
“ঘুমাতেছে।
যদি ডাকি রক্তের নদীর থেকে কল্লোলিত হ’য়ে
ব’লে যাবে কাছে এসে, ‘ইয়াসিন আমি,
হানিফ মহম্মদ মকবুল করিম আজিজ—
আর তুমি?’ আমার বুকের ’পরে হাত রেখে মৃত মুখ থেকে
চোখ তুলে শুধাবে সে— রক্তনদী উদ্বেলিত হ’য়ে
বলে যাবে, ‘গগন, বিপিন, শশী, পাথুরেঘাটার;
মানিকতলার, শ্যামবাজারের, গ্যালিফ স্ট্রিটের, এণ্টালীর—’
কোথাকার কেবা জানে।”
(১৯৪৬-৪৭, জীবনানন্দ দাশ)
৭৭ বছর আগে ঔপনিবেশিক শাসক, দেশীয় দালাল ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের চক্রান্তে দেশভাগের সময় যে রক্তাক্ত ইতিহাস রচিত হয়েছিল, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সেই কলঙ্কিত ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে সমগ্র দেশে। মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, প্রভৃতি বিভিন্ন অঞ্চলে আত্মঘাতী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সমাজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।
ইতিহাসের পাতা খুঁজলে দেখা যায় যখনই স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ সংগঠিত হয়ে ওঠে তখনই সংগ্রামী ঐক্যকে ভাঙ্গার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে বিভেদকামী শক্তি –
“অন্ধকারে অর্ধসত্য সকলকে জানিয়ে দেবার
নিয়ম এখন আছে; তারপর একা অন্ধকারে
বাকি সত্য আঁচ ক’রে নেওয়ার রেওয়াজ
র’য়ে গেছে; সকলেই আড়চোখে সকলকে দেখে”।
পারস্পরিক অবিশ্বাস আর সন্দেহের আবহাওয়া তৈরি করে, মানুষকে তার ন্যায্য অধিকারের লড়াই থেকে দূরে নিয়ে যেতে চাইছে শাসক দল। অভয়ার ন্যায় বিচারের আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন এবং অগণিত চাকরিহারা ও বঞ্চিত শিক্ষকদের আন্দোলন যখন সংহত হচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই অন্যায় ভাবে সংসদে ওয়াকফ বিল পাশ এবং সেটাকে কেন্দ্র করে পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও দাঙ্গার উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকে প্রকৃত সমস্যার থেকে সরিয়ে অন্যদিকে পরিচালিত করা এবং সংগ্রামী জনতার মধ্যে ভাঙ্গন ধরানো।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে অভয়া মঞ্চ সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ধর্মনিরপেক্ষ, প্রকৃত ধার্মিক এবং পরধর্মসহিষ্ণু মানুষের কাছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছে। ধর্মীয় স্লোগান ভুলে গিয়ে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের সন্ধানই ভারতীয় জাতীয়তার ভিত্তি। সমস্ত বিভেদকামী শক্তিকে পরাজিত করে জয়ী হোক বাংলা তথা ভারতের সমন্বয় আর বহুত্ববাদী সংস্কৃতি, জয়ী হোক মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম।