আপনার বাচ্চা খুব চঞ্চল? পড়ায় মন নেই? ভয়ানক জেদি, একগুঁয়ে? যখন যা ইচ্ছে তা-ই বলে, তা-ই করে? খারাপ কথা বলা শিখেছে? ফলাফল বিচার বোধ একেবারে নেই? তাকে বকাঝকা মারধোর না করে, বরং নিয়ে যান মনের ডাক্তারের কাছে। ADHD হতে পারে; বাংলায় বললে বলা যায় “মনোযোগ-হীনতা অতি-চঞ্চলতা রোগ”।
অনীক অতিরিক্ত চঞ্চল। সে পড়ায় মন দিতে পারছে না। সে জন্য তার স্কুলের রেজাল্ট খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তার ছটফটানির চোটে বাড়ির লোকও অস্থির হয়ে পড়েছে। সে অতিরিক্ত কথা বলে। তার জেদও ভীষণ বেড়ে গেছে। সে খারাপ কথা বলা শিখেছে। ফলাফল বিচার না করে, যা মনে আসছে তাই বলছে বা করছে। অনীকের বাবা-মা তাকে নিয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারবাবু এক খটমট রোগের নাম বললেন ‘Attention Deficit Hyperactive Disorder’ যাকে সংক্ষেপে বলা হয় ADHD। বাংলায় তেমন প্রতিশব্দ নেই, আমরা বলতে পারি “মনোযোগ-হীনতা অতি-চঞ্চলতা রোগ”।
ADHD আসলে কি?
শিশুবয়সের বিভিন্ন অসুখের মধ্যে এটি একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য অসুখ। ছোটবেলার এই অসুখ বড় বয়স পর্যন্ত থাকতে পারে। এই রোগের প্রধান উপসর্গগুলো হল অমনোযোগিতা, অতিরিক্ত চঞ্চলতা ও নিজের আচরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো।
ADHD তিনরকমের হতে পারেঃ
১) অতিরিক্ত চঞ্চলতা ও জেদ।
২) অমনোযোগিতা
৩) অতিরিক্ত চঞ্চলতা, জেদ ও অমনোযোগিতা।
অমনোযোগিতা, অতিরিক্ত চঞ্চলতা এবং জেদ এই তিনটি হল ADHD-র প্রধান লক্ষণ। সাধারণভাবে এই তিনটি লক্ষ্মণ বাচ্চাদের মধ্যে প্রায়শই লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু যখন তা মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখনই বাবা-মার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অবশ্যই এই লক্ষ্মণগুলি ছ’ মাসের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হতে হবে ও সমবয়সী বাচ্চাদের তুলনায় তার প্রাবল্য বেশি হতে হবে।
অমনোযোগিতার লক্ষ্মণগুলি হলঃ
খুব সহজে মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, খুঁটিনাটি বিষয়ে মনোযোগ দিতে না পারা আর সহজেই এক কাজ থেকে অন্য কাজে মনোযোগ সরে যাওয়া। বাচ্চার পক্ষে কোন বিষয়ে এক ভাবে মনোযোগ স্থাপন করা অসুবিধাজনক হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে স্কুলের কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। প্রায়ই জিনিসপত্র স্কুলে হারিয়ে ফেলে। মনোযোগের অভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকার নির্দেশ অনুসরণ করা অসুবিধা হয়ে দাঁড়ায়।
অতিরিক্ত চঞ্চলতার লক্ষ্মণগুলি হলঃ
এক জায়গায় বসা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। সর্বক্ষণ কথা বলতে থাকে। চোখের সামনে যা দেখে তাই ছুঁয়ে দেখতে চায়।
অতিরিক্ত জেদের লক্ষ্মণগুলি হলঃ
অধৈর্য হয়ে যাওয়া, যা মনে আসে তাই বলে ফেলা, নিজের ইমোশন প্রকাশ করার ক্ষেত্রে লজ্জা বোধ না থাকা, ফলাফলের চিন্তা না করে দুম করে কোন কাজ করে ফেলা। অন্য লোক কথা বলছে তার মধ্যে কথা বলা একটি লক্ষণ।
ADHD হয় কেন?
ADHD বিভিন্ন কারণে হতে পারে। জিন ঘটিত কারণে, পরিবেশের জন্য, পুষ্টিজনিত কারণে, মাথায় আঘাতজনিত কারণে বা সামাজিক কারণে।
অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রে দেখা যায় জিনঘটিত কারণে মস্তিষ্কের যে অংশ মনোযোগ- স্থাপনের ক্ষেত্রে সক্রিয় হয় সেই অংশের টিস্যুগুলো অপেক্ষাকৃত পাতলা হয়। সেই কারণে তাদের অমনোযোগিতা বাড়ে। পরিবেশগত কারণগুলোর মধ্যে দেখা গেছে যে সব মা অন্তঃস্বত্তা অবস্থায় ধূমপান করে বা মাদকদ্রব্য নেয় তাঁদের বাচ্চাদের এই অসুখ হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
মাথায় আঘাত লাগলেও অনেক সময় বাচ্চাদের এই অসুখ হতে পারে। যদিও তার সম্ভাবনা অনেক কম।
ADHD সারে কি?
ADHD সম্পূর্ণভাবে সারা মুশকিল। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে এই অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব। ছোট বয়সে রোগ নির্ধারণ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে তারা একটা পূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে।
ওষুধের মাধ্যমে এই অসুখের চিকিৎসা করা হয়। তাছাড়া সাইকোথেরাপির মাধ্যমেও এই অসুখের চিকিৎসা সম্ভব।