এটেনসন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসঅর্ডারকে সংক্ষেপে বলে এ ডি এইচ ডি।
শান্তিময় বাবু তাঁর আট বছরের ছেলেকে নিয়ে চরম অশান্তি ভোগ করছেন। ছেলে ছোট থেকেই একটু বেশি ছটফটে। ভেবেছিলেন বড় হলে দৌরাত্ম্য কমবে। কিন্তু দৌরাত্ম্য কমার তো কোন লক্ষণ নেইই, উল্টে তা বেড়ে চলেছে। স্কুলের স্যারেরা ছেলের ব্যাপারে অভিযোগ করেন যে, সে ক্লাসে পড়া শোনে না, বেঞ্চে স্থির ভাবে বসে থাকে না, অঙ্ক করতে গিয়ে প্রায়ই সিলি মিসটেক করে, হোমওয়ার্ক করতে ভুলে যায়। স্যারেরা এও বলেন যে, ওর বুদ্ধির অভাব নেই , কিন্তু বেশিরভাগটাই দুর্বুদ্ধি। দুরন্তপনা তো ছিলই, কিন্তু গত পরশু কোন একটা সিনেমা দেখে সিনেমার হিরোকে নকল করে গাছের ডাল ধরে ঝুলতে গিয়ে মাটিতে পড়ে পায়ের হাড় ভেঙেছে। অর্থোপেডিক বিভাগের ডাক্তারবাবু পায়ের প্লাস্টার করে শান্তিময় বাবুকে বলেছেন যে, তিনি যেন ছেলের ব্যাপারে কোন সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নেন।
সাইকিয়াট্রিস্ট ডাক্তারবাবু জানিয়েছেন যে এটি একটি রোগ এবং এর নাম হল এটেনসন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসঅর্ডার (এ ডি এইচ ডি)।
এটেনসন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসঅর্ডার (এ ডি এইচ ডি) হল একপ্রকার মানসিক রোগ যার লক্ষণ গুলি হল মনযোগের অভাব ও অতিচঞ্চলতা।
মনোযোগের অভাব থাকার জন্য এই সব বাচ্চারা অনেকসময় শিক্ষকদের ও অভিভাবকদের কথা ঠিকমত শোনে না, পড়াশোনার কাজ অর্ধেক করার পর খেই হারিয়ে ফেলে, এক কাজ সম্পূর্ণ না করে সেটি ছেড়ে অন্য জিনিসের দিকে আকৃষ্ট হয়, প্রায়শই খাতা, কলম , পেন্সিল হারিয়ে ফেলে ইত্যাদি। তাই বুদ্ধি স্বাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষার ফল খারাপ হয়।
অতিচঞ্চলতার জন্য এই সব বাচ্চারা সবসময় ছটফট করতে থাকে, এক জায়গায় স্থির থাকে না, অহেতুক বেশী কথা বলে ফেলে, প্রশ্ন পুরোপুরি না শুনেই উত্তর দেবার চেষ্টা করে, অন্যদের আলোচনার মাঝে অহেতুক নাক গলায়, কোন কাজের কি পরিণতি হতে পারে তা না বুঝে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে ফেলে।
বড় হবার সাথে সাথে এই রোগের লক্ষণগুলি সংখ্যায় কমলেও কিছু সমস্যা থেকেই যায় যা কর্মক্ষেত্রে নানান বাধা সৃষ্টি করে।
এটেনসন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসঅর্ডার (এ ডি এইচ ডি) রোগটির সাথে অনেকসময় কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার নামক আর একটি রোগ যুক্ত থাকে।
কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার রোগের মূল লক্ষণগুলি হল-অসামাজিক আচরণ, নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করা, ঔদ্ধত্য, পশুপাখি বা অন্য মানুষের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন, অন্যের ক্ষতি করার প্রবণতা, মিথ্যে কথা বলা, স্কুল থেকে পালানো, চুরি করা ইত্যাদি।
এই রোগ ছোট বেলা থেকে শুরু হয়। উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে এরা কৈশোর অবস্থা থেকেই বা বড় হয়ে নানান অসামাজিক কাজ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। অনেকসময় এইরকম একই মানসিকতার কিছু কিশোর-কিশোরী দলবেঁধে এই জাতীয় অপরাধ সংগঠিত করে।
গবেষণায় দেখা গেছে “এটেনসন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসঅর্ডার” রোগটি প্রায় ৩ থেকে ৫ শতাংশ শিশু ও কিশোরদের মধ্যে দেখা যায়।
আমাদের মস্তিষ্কের প্রি ফ্রন্টাল কার্টেক্স নামক স্থানে ডোপামিন ও নরএপিনেফরিন নামক দুটি রাসায়নিকের পরিমাণের তারতম্যের কারণে এই রোগ হয়।
“এটেনসন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসঅর্ডার” বা “কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার”-এগুলি যে এক এক ধরনের মানসিক সমস্যা, সে বিষয়ে অনেকে অভিভাবক বা শিক্ষক-শিক্ষিকাই বিশেষ ভাবে অবগত নন। তাই এই সব বিষয়ে তাঁদের অবগত করা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।
উপরে বর্ণিত মানসিক সমস্যাগুলি থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
এই রোগের চিকিৎসায় স্টিমুল্যান্ট গোত্রের ঔষধ ভালো কাজ করে এবং ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভাল ফল পাওয়া যায়। এর সাথে সাথে এই রোগের চিকিৎসায় ক্লাসরুম বিহেভিওর মডিফিকেশন, পেরেন্ট ট্রেনিং ইত্যাদি পদ্ধতিরও গুরুত্ব আছে।
আমার ছেলের ADHD চিকিৎসা চলছে গত 3 বছর ধরে.. বর্তমানে তার বয়স 6 বছর 11 মাস… চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার methylphenidate ওষুধ চলে.. এই রোগের কি অন্য কোনো চিকিৎসা আছে?
ঔষধ গুলির মধ্যে সাধারণত methylphenidate এর রেসপন্স সবথেকে ভালো হয়।সাথে অন্যান্য ঔষধ দরকার কিনা তা আপনার ডাক্তারবাবু ঠিক করে দেবেন।
কাউন্সিলিং কী এ রোগের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক?
এই রোগে ঔষধের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।সাথে কাউন্সেলিং যোগ হলে রেসপন্স আরো একটু ভাল হয়।
কেবলমাত্র কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে এই অসুখ কি সারানো সম্ভব ?