ইন্টারনেট এবং স্মার্ট ফোনের দৌলতে “দুনিয়াটা এখন ছোট হতে হতে” হাতের তালুতে বন্দি!! তাই খবর ভাইরাল হয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যে। ঠিক যেমন ভাইরাল হয়েছে সেই সুদূর চিনদেশের ইউহান প্রদেশে হটাৎ করে আবির্ভাব হওয়া ‘নোভেল করোনা ‘ভাইরাসের!!
আজ আউটডোরে সর্দি কাশি নিয়ে দেখাতে আসা এক 3 বছরের শিশুর মা নিজেই জিজ্ঞেস করলেন “ডাক্তারবাবু , করোনা না কি একটা ভাইরাস হয়েছে, সেটা হয়নি তো???
তাই চলুন চট করে খুব সহজে এই ভাইরাস এবং এই ভাইরাস কি কি রোগ করে তা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
এই করোনা ভাইরাস হলো একটি RNA ভাইরাস।মূলত পশু পাখি এবং জীবজন্তুর মধ্যে অসুখ করলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি মানবদেহেও সংক্রমণ ছড়ায়। আজ অব্দি মানুষের শরীরে আক্রমণকারী 7 রকমের করোনা ভাইরাস চিহ্নিত করা গেছে। এই 7 রকমের করোনা ভাইরাসের মধ্যে 4 রকমই সাধারণ সর্দি কাশি করে থাকে। তারা কোনোমতেই কোনো প্রাণঘাতী অসুখ করেনা।
বাকি 3 টির মধ্যে একটি হলো ” সার্স করোনা ভাইরাস” যা 2003 সালে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রাণঘাতী “সার্স” কিংবা “সিভিয়ার একিউট রেসপিরাটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোম” বলে অসুখের মূল ভাইরাস বলে চিহ্নিত হয়েছিল।
আরো একটি হলো “মার্স” করোনা ভাইরাস কিংবা’ মিডিল ইস্ট রেসপিরাটরি সিনড্রোম করোনা ভাইরাস” যা 2012 এবং 2013 সালে সৌদি আরব এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং প্রাণঘাতী নিউমোনিয়ার জন্ম দিয়েছিল।
সব শেষে এলো নতুন আর এক করোনা ভাইরাস।যা সর্বপ্রথম পাওয়া গেলো চীনের ইউহান প্রদেশে গতবছরের ডিসেম্বর মাসে।
গত মাসে চীনের ইউহান শহরে পর পর অনেক মানুষ ভয়াল নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হলেন।অনেকে মারাও গেলেন। দেখা গেল সব নিউমোনিয়ার লক্ষণ একই রকমের। প্রথমে সর্দিকাশি তার পর জ্বর এবং তার পরেই প্রবল শ্বাসকষ্ট। ক্রমেই ফুসফুস দুটিকে অকেজো করে দিতে লাগলো এই প্রাণঘাতী ভাইরাস। তারপর ঠাঁই হলো ভেন্টিলেটরে এবং একে একে একের পর এক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে ঢলে পড়া মৃত্যুর মুখে। পরীক্ষা করে এক নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের সন্ধান মিলল এবং যার নাম দেওয়া হল “নোভেল করোনা ভাইরাস”! আরো বেশ কয়েকটি নামকরণ ও হলো। যেমন “ইউহান করোনা ভাইরাস”, “ইউহান ফ্লু”, “ইউহান নিউমোনিয়া” কিংবা “ইউহান সি ফুড মার্কেট নিউমোনিয়া ভাইরাস”, কারণ দেখা গেছিল প্রথম দিকে যারাই আক্রান্ত হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই কোনো কোনো ভাবে ইউহানের সামুদ্রিক খাদ্যের বাজারের সাথে যুক্ত।এই ভাইরাসের জিনের গঠন কিন্তু 2003 সালে পাওয়া সার্স করোনা ভাইরাসের সাথে 70% মিলে যায়। এটাই প্রমাণ করে কেন এই ভাইরাস এত টা ভয়ঙ্কর আর প্রাণঘাতী।
এখনও অব্দি এর কোনো ভ্যাকসিন কিংবা আন্টি ভাইরাস ওষুধ তৈরি হয়নি। উপসর্গমূলক চিকিৎসা এবং ভেন্টিলেশনে রাখাই চিকিৎসার মূল অঙ্গ। এই ভাইরাস একজন আক্রান্তের শরীর থেকে আরো এক জন আক্রান্তের শরীরে ও ছড়িয়ে পড়ছে (যেটাকে বলা হয় “হিউম্যান টু হিউম্যান ট্রানন্সমিশন”) এবং সেটা সম্প্রতি প্রমাণিতও হয়েছে।
এখনও অব্দি যা খবর পাওয়া গেছে তাতে পৃথিবীর আটটি দেশে এই ভাইরাসের সনাক্তকরণ হয়েছে এবং সেগুলি হলো চীন,থাইল্যান্ড, হংকং,জাপান, মাক্যাও,দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান,এবং আমেরিকা।
এখনও অব্দি 560 জন আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে যার মধ্যে 549 জন ই চীনের। এবং এদের মধ্যে 17 জন মারা গেছেন এবং বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য এই দেশে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই যে সব জায়গায় এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়েছে সেই সব দেশ থেকে কারোর আগমন হলে বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। খুব দরকার না পড়লে আক্রান্ত এলাকায় ভ্রমণ বাতিল করা দরকার। ফ্লু জাতীয় অসুখগুলো থেকে বাঁচার জন্য যে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে যেমন মুখে হাত দিয়ে হাঁচা কিংবা কাশা, দরকার পড়লে উপযুক্ত মাস্ক ব্যবহার করা, আলাদা করে রেখে চিকিৎসা করা,বারবার হাত ধোয়া এসব করা দরকার।
কিন্তু এই ভাইরাসের সনাক্তকরণের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো যুক্ত ভাইরাল পি সি আর ল্যাবরেটরি দরকার। এবং আক্রান্তের চিকিৎসার জন্য যথাযথ পরিকাঠামো যুক্ত আইসোলেশন ওয়ার্ড দরকার এবং চিকিৎসক আর স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য উপযুক্ত জীবাণুরোধক পোশাক কিংবা “পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট ” দরকার এবং এই সব গুলোই এখন এই রাজ্য তথাপি এই দেশে অপ্রতুল!!তাই এই ভাইরাস এ রাজ্যে কিংবা এই দেশে ছড়িয়ে পড়লে যে তা এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারলে তা বলাই বাহুল্য। তবে সান্ত্বনার বিষয় একটাই যে এখনও অব্দি কোনো আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যায়নি।