ডাক্তারি বই পড়ে শিখেছি ভুলে যাওয়া বা স্মৃতি হারানোর একটা বড় কারণ Alzheimer’s disease।
২১ সেপ্টেম্বর ছিল অ্যালঝাইমারস ডে। এই অসুখ কিন্তু একদিনে শরীরে বাসা বাধে না। বেশ কিছুদিন বলা ভাল, প্রায় ১৫- ২০ বছর সময় নেয়। একটু আধটু সমস্যা বুঝলে আগে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এই অসুখ দমন করা তেমন কঠিন কিছু কাজ নয়। আপনার নিজের বা পরিবারের কারও এই সমস্যা আছে কিনা বোঝার কয়েকটি উপসর্গের কথা জেনে রাখুন।
১) স্মৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়া- কোনও জিনিস কোথায় রাখলেন তা পরমুহূর্তে ভুলে যাওয়া। এক কথা বারবার বলা, একই প্রশ্ন বারবার করা।
২) সমস্যা সমাধানে সমস্যা হওয়া- আগে যে হিসেবনিকেশ সহজেই করতে পারতেন, কোথায় কত টাকা খরচ করলেন সব মনে রাখতে পারতেন, পরিবারের সবার ভাল-মন্দ বুঝে সবাইকে বোঝাতেন তা ঠিকভাবে করতে না পারা।
৩) রোজকার কাজে সমস্যা হওয়া- কোন কাজটা কীভাবে করবেন তা মনে করতে অনেক বেশি সময় লাগা। যেমন আপেল কাটতে গিয়ে কীভাবে কাটবেন বা কোন সবজির সঙ্গে কোন আনুসঙ্গিক ভাল যাবে তা মনে করতে না পারা।
৪) সময় এবং জায়গা সম্পর্কে ভুলে যাওয়া- ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর ডেট ভুলে যাওয়া, হাঁটতে হাঁটতে বা গাড়ি চালানোর সময় গন্তব্য ভুলে যাওয়া। লিস্ট করে নিয়ে কাজ শুরু করার পর লিস্টটাই ভুলে যাওয়া।
৫) কথা বলার সময় ভুলে যাওয়া- কথা বলতে গিয়ে উপযুক্ত শব্দ খুঁজে না পাওয়া, কোন কথার উত্তরে কী বলা উচিত তা বুঝতে না পারা।
৬) জিনিস হারানো- এই সমস্যা প্রায় কমন। একটা জিনিস এই মুহুর্তে রেখে পরের মুহুর্তে ভুলে গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করা।
৭) সাধারন জিনিসে ভুল করা- লেখাপড়ার সময় কোন চিহ্ন কোথায় বসানো উচিত, কতটা দূরে দুটো শব্দের ব্যবধান থাকা দরকার সেসব বুঝতে না পারা।
৮) বিচারবুদ্ধি কমে যাওয়া- অকারণে টাকা খরচ করা, ভুল পথে রোজগারের চেষ্টা বা নিজের পক্ষে ক্ষতিকর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া।
৯) ব্যক্তিত্বের বদল- ঘন ঘন মুড বদল, হতাশা, মনের মধ্যে অকারণ ভয় ইতাদি দেখা দেওয়া।
১০) নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা- বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় সবার থেকে নিজেকে গুঁটিয়ে নেওয়া, কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়া।
এতো গেলো ডাক্তারি।কিছু জীবনের গল্প বলে লেখাটা শেষ করছি।
এক ভদ্রলোক রোজ বিকেলে স্ত্রীর হাত ধরে তাকে নিয়ে ঘুরতে বেরোন। একদিন তার বন্ধু তাকে বলেন, তুমি রোজ ওকে নিয়ে বেরোও কিন্তু উনি তো ভুলে গেছেন তুমি ওনার কে হও। শুনে ভদ্রলোক বললেন, কিন্তু আমি তো ভুলিনি উনি আমার কে।
এক ছেলে তার মায়ের সব জিনিষ ভুলে যাওয়া নিয়ে খুব বিরক্ত, তোমায় একই কথা বার বার বলতে হয়, কিছুই মনে রাখতে পারোনা । সব শুনে তার বাবা আর থাকতে না পেরে বলে ওঠেন, বর্ণ পরিচয় করবার সময় তোর মাও যদি একই রকম ভাবত তাহলে আজও তোর অক্ষর জ্ঞান হতো না।
জীবন শিখিয়েছে ভুলে যাওয়ার আরো বড় কারণ প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়া। যদি আমরা কাউকে সত্যিই ভালোবাসি তাহলে আমাদের উচিত তার হাত ধরে গুনগুন করে তার সেই প্রিয় গানগুলো শোনানো, যখন সে গানগুলো আর গায়ক, দুজনকেই ভুলে গেছে।