আজ সন্ধ্যায় একটা ছোট অনুষ্ঠান ছিল। বাংলায় একটি বই প্রকাশকে ঘিরে নানান কর্মসূচি দিয়ে সাজানো ছিল সেই অনুষ্ঠান। সেই বইতে যেহেতু আমারও একটি লেখা আছে সে জন্য বইটার নাম বাদ গেল। বইয়ের লেখক সূচিতে অনেক ডাক্তার ছিলেন যাঁদের সাথে কলকাতা থেকে দূরে থাকার জন্য কেবলই মুখ-পুস্তকের মাধ্যমে আলাপ, সামনাসামনি দেখা হয় নি তাঁদের একবার দেখার লোভেই হাজির হয়েছিলাম আজ মধ্য কলকাতার সেই অনামা সভাগৃহে। বেশ কিছু বই আর পুস্তিকা ওখানে ছিল বিক্রির জন্য। পিঠের ঝোলা থলিটার আয়তন অনুযাযী দু’চারটে বই সংগ্রহ করা গেল। তার পর সই শিকারি সেজে দিব্যি সব লেখকদের সই নেওয়া গেল। একটা বিষয়ে নিশ্চিন্ত যে ডাক্তার লেখকদের বাংলা হাতের লেখা তাঁদের নিদানপত্রে ইংরেজিতে লেখার মতোই খারাপ। প্রুফ রিডারদের দুর্দশার কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এসেছি।
এবার ছবি তোলার পালা। তুলতে গিয়ে অনুভব করলাম যে ঐন্দ্রিল আর বিষাণ, দুজনেই আমার চেয়ে লম্বা। সৌম্যকান্তি, জয়ন্ত দাস আর জয়ন্ত ভট্টাচার্য তিনজনেই তাঁদের ছবির চেয়ে ঢের সুপুরুষ। অরুণাচলদার চেহারা দেখে বোঝার জো নেই যে মানুষটার ভেতর অমন বারুদ ঠাসা আছে। সফলতম চিকিৎসকদের অন্যতম কৌশিক লাহিড়ীর বক্তব্যের ধারও ওর চেহারার মতই ধারালো। প্রথমসারির সাহিত্যিক দোলনচাঁপা ও তার বাবা মায়ের সাথে আলাপ হল গল্প হল, সে গল্প আলাদা মেজাজের। আরেকদিন বলা যাবে খন।
শারীরিক ও মানসিক দৈর্ঘ্যে বিশাল সব মানুষের ভিড়ে নিজেকে বামন ভেবে যখন একটু একটু দুঃখ হতে শুরু করে ছিল তখন সেটা ভাঙিয়ে দিলেন তরুণ যীশুর মতো দাড়িওয়ালা পুণ্যদা, পুণ্যব্রত গুণ সিঙ্গারার ঠোঙ্গা এগিয়ে দিয়ে। তরুণ ঠিক নয় কারণ দাড়িতে পাক ধরেছে কিন্তু চোখ দুটো অবিকল যীশুর মত মায়াময়।
চলে আসার আগে শেষ দেখা আরেক মুখ-পুস্তক বন্ধু দীপকের সাথে। দুদিন আগে পাঞ্জাব সীমান্তে কৃষক আন্দোলন নিয়ে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করে আসা দীপক যাঁকে যুক্তিবাদ আর সাপের কামড় নিয়ে লেখালেখি করতে দেখেছি। খুব করে অনুরোধ করে এলাম ওই আন্দোলনের মানুষগুলোর রক্তমাংসের চেহারা আমাদের সামনে হাজির করে একটা বই লিখতে। অবশ্যই বাংলায়।
আমার দুঃখিনী মাতৃভাষার স্মরণের দিনে বাংলায় লেখা বই জড়িয়ে একটা সন্ধ্যে কেটে গেল এবারের মতো। গরীব মায়ের অপদার্থ সন্তান আর কি বা করতে পারে মায়ের জন্য।
২১শে ফেব্রুয়ারী, ২০২২