আমি একজন সুন্দরীর সঙ্গে বসবাস করি। সে নখপুলিশ পরতে ভালবাসে। আবার নখপুলিশ খেতেও ভালবাসে। সে শুধু সুন্দরী নয় রুদালিও বটে। একবার বেরোলেই হলো বারান্দার গ্রিলে পা তুলে দিয়ে হাউহাউ করে পাড়া জাগায়। আমাকে বিশেষ পাত্তা দেয় না। সারাদিন তুরতুর করে নখের আওয়াজ তুলে এঘর ওঘর করছে। কেবল ঘুম পেলে আমার বুকের কাছে কুকুর কুন্ডলি পাকিয়ে আমার হাত চিবোতে চিবোতে ঘুমিয়ে পড়ে। ওর সব কটা ভাইবোন গাড়ি চাপা পড়ে মরেছে বলে অতি ছোটবেলায় তাকে ঘরে তুলে আনি তাই সে রাস্তায় চলমান গাড়ি দেখলে গাড়ির সামনে গিয়ে খেলতে চায়। বেড়াল থেকে পাখি সবাই তার খেলার সাথী। এবং সে আমার মতোই খাঁটি দেশীয় জন্তু। সে আর আমি দুজনেই দুজনের সঙ্গী। আমিই তার খাবার যোগান দিই। আমিই তাকে ঘুম পাড়াই। দুজনেতে খেলা করি দুজনে ঘুমাই। সুন্দরী এ শহরে আছে একটাই। (কৃতজ্ঞতা রাণু মুখার্জি)
টুকটুক করে পাতা ঝরে যায়
এক সময়ে এক ডুবে ভরা নদী হয়ে যাবো পার। বয়স বাড়ছে। হৃদকমলে ধুম লেগেছে। তিনটে সলিড ইস্পাতের পাইপ গোঁজা হৃদয় আমার, রক্তে বাড়ে স্নেহ, হাঁটতে হাঁটতে পা অবশ, কোমরে ব্যথা। ডিফেক্টিভ মেরুদন্ড। কশেরুকা সরে ঘিলুতে টান ধরেছে। শল্যচিকিৎসা করে বিছানাশায়ী। তবুও রোগীরা বাড়িতে চলে আসে। সুন্দরী তাদের গায়ে ওঠে – গাল চেটে দেয়। পোস্ট কোভিড ডায়াবেটিস। সাতকুলে কারো কোনোদিন শুগার ছিলো না। হঠাৎ করে ছয়শো শুগার। কোভিড গেছে কিন্তু নিয়ে গেছে অগ্ন্যাশয়টা। অথবা কোভিড সারার পরেও ভয়ানক শ্বাসকষ্ট। অক্সিজেন স্যাচুরেশনটা ষাঠের কোঠায়। কোভিড গেছে কিন্তু নিয়ে গেছে ফুসফুসের ক্ষমতা। তিনি আজও হাসপাতালনিবাসী। অথবা পোস্ট কোভিড হার্ট ফেলিওর। সহজ ভাষায় কথাটা বলাই শ্রেয় পোস্ট কোভিড কার্ডিওমাওপ্যাথি। আর কি কি হতে পারে? হামি কুছু জানি না হুজুর। হামার কোনও কসুর নেই। ঘরে বসে দেখি এরা সব আসে। সুন্দরী অতিথি বড়ো ভালবাসে। সে ভারি খুশি হয়। হোওও হোওও করে ডাক পাড়ে। কোলে উঠে গড়াগড়ি খায়। গাল চেটে দেয়। পেশেন্ট আসে পেশেন্ট যায়। কোভিড যায় তবু যায় না। রোগীরা বুড়ো ডাক্তারের কাছে শুকনো মুখ আসতেই থাকে।
আগে তো করিনি কভু এমন কম্মটি
চিকিৎসা শিখেছি গেঁয়ো কলেজে। পেছনে বাবুর বাগের ধান মাড়াইকল। তুষের গুঁড়োয় হেঁপোদের টান বেড়ে যায়। পুকুরে বিস্রস্তবাস মহিলাদের স্নান। বিকেলে কলেজ মাঠে ফুটবল বা ক্রিকেট। প্রেমিক প্রেমিকারা অবশ্য সন্ধ্যা ঘনালে হেক্সাগনে গোপন কম্ম করতে যেতো। মাস্টারমশাইরা ছিলেন রামকৃষ্ণ দত্তরায়, সিদ্ধেশ্বর রায়, অনিল ঘোষ, শ্যামল সরকার, তুষার কান্তি বটব্যাল, গৌতম চ্যাটার্জী, শান্তিময় ভট্টাচার্য, অশোক দত্ত, তৃপ্তি আঢ্য, নিতাই চন্দ্র চক্রবর্তী, শ্যামল বসু, অসীম মুখার্জি, চিত্ত রঞ্জন মাইতি আরও কতো জনা। এনারা শিখিয়েছিলেন পারকাশন, হার্টের মর্মরধ্বনি, লিভারের অনুভূতি, গলব্লাডার অপারেশনের পদাবলী, কখন কোন শিরা ধমনী কোথায় ঘুরে যায়। রোগীর ইতিহাস। কবে থেকে কি রকম ব্যথা? ছুরি বেঁধানো না মোচড় দেওয়া, পুড়ে যাওয়া নাকি জ্বালা করা? আমি সেভাবেই রোগী দেখে পয়সা নিই। টেলিমেডিসিন বা রোগী না ছুঁয়ে পয়সা নিতে শিখিনি তো! আমায় একটি পয়সা দে মা আমি চেম্বারে বসি – এভাবে রোগী দেখতে পারি না। অথচ পুঁজি ক্ষীয়মান। সবাই না ছুঁয়ে রোগী দেখছে। আমি কি করবো? শ্বাসের শব্দ শুনবো না? গরুর গাড়ির চাকার ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ না জলের ঘড়ঘড়ানি না শুনে কাশির ওষুধ লিখবো?
একা বসে তেতলাতে খালি খালি ক্ষিদে কেন পায় রে?
ছেলে বহুদূরে। মেয়েও তথৈবচ। আছি আমি ষাঠের বুড়ো আর আমার সুন্দরী। যদি আমার কোভিড হয়? খুশখুশে কাশি ঘুসঘুসে জ্বর পাঁজরাতে ব্যথা বুড়ো তুই মর? আমাকে কর্পোরেশনের গাড়ি এসে নিয়ে যাবে কোনও এক কোভিড হাসপাতালে। হয় সেরে যাবো। নয় সরে যাবো। সেরে গেলেও এই অকেজো মানুষটাকে আরও অকেজো করে দিয়ে যাবে। হ্যাঁ ডাক্তারমশাই, আপনি ভয় পাচ্ছেন।