ভীষণরকম শোকাহত, খুব ব্যথিত হচ্ছে হৃদয়
আপনাদের এই খবর দিতে,
বেশ কিছুদিন ভোগার পরে সবার-জন্য-শিক্ষা বাবু
সবার থেকে বিদায় নিলেন আজ নিভৃতে।
শরীর খারাপ আগেই ছিলো,
কোভিড মারী বিষম হয়ে মারলো তাঁকে,
তাঁর যে ছেলে, অনলাইন ক্লাস,
পাত্তা মোটেই দিতো না সে তার বাবাকে।
সেই পুরনো ব্ল্যাকবোর্ড চক,
পচাধসা ক্লাসে বসে শিক্ষকদের পড়া বোঝা,
বাতিল সে সব কবেই হলো,
ক্লিক করলেই ঘরের ভেতর আসে এখন শিক্ষা সোজা।
সবার-জন্য- শিক্ষা বাবু এই কথাটা মানতে চাননি,
ভীষণ রকম একগুঁয়েমি আঁকড়ে ধরে,
মুখের ওপর বলে দিতেন,
স্মার্টফোনহীন এত্ত কোটি গরীবগুলো পড়বে তবে কেমন করে?
এমনতর বুড়োর কথায় লজ্জা পেতো ভীষণ ছেলে,
গরীব হলে পড়ার আবার দরকার কি বলো দেখি,
‘শিক্ষা’ থেকে এফিডেবিট করে সে যে ‘ক্লাস’ হয়েছে,
পয়সা বিনা ফালতু এমন গরীবসেবার জন্য সে কি?
আজকে ছেলের ব্যবসা বিশাল ,
করোনা তার পসারটাকে তুঙ্গে তুলে দিচ্ছে রোজই জুম গুগুলে,
স্মার্টফোন নেই যাদের ঘরে, শিক্ষা ধুয়ে কি জল খাবে,
মিড ডে খাবার মিলছে তো ঠিক বন্ধ স্কুলে।
এই কথাটাই সবার-জন্য-শিক্ষা বুড়ো ঠ্যাঁটার মতো বোঝেনইনি,
শিক্ষা নাকি উচিৎ যাওয়া সবারই ঘর,
কর্পোরেটে দেশ কিনেছে , ওনার মাথায় ঘুরতো তবু
ডেভিড হেয়ার, ফুলে এবং বিদ্যাসাগর।
শিক্ষা বলো স্বাস্থ্য বলো সবখানেতেই ফেললে কড়ি
তবেই জোটে তৈল এখন মাখার মতন,
সস্তা রেশন পাচ্ছে খেতে, ওইটুকুতেই তুষ্ট থাকুক,
খামোখা ফ্রি লেখাপড়ায় মিলবেটা কি অরূপরতন?
অনলাইন ক্লাস রাষ্ট্রপ্রেমিক, বাপের মতো গোঁ ধরে নেই
সবার কাছে পৌঁছে দেবে মগজ খোলার চাবি,
গরীব যদি শিক্ষিত হয়, ভীষণ প্রলয় আসতে পারে,
খুব মুশকিল রেশন দিয়ে দাবিয়ে রাখা দাবী।
যাহোক এবার চিন্তাটি নেই, ধিনতা নাচুন দেশপ্রেমিক,
সবার-জন্য- শিক্ষা বুড়ো মরলো অবশেষে,
উন্নয়নের জোয়ার খালি, চোখের যত ঝুরো বালি
অনলাইনের প্রবল ঠেলায় এবার যাবে ভেসে।
শ্রাদ্ধ কবে নেই তা জানা, ওঁ গঙ্গা কার্ডটা পেলে
পায়ের ধুলো দয়া করে দিয়ে যাবেন এসে।