“বাবা গল্প বলো?” কাল রাতে জিরির আবদার।
“বলছি, কিন্তু কাল কার জন্মদিন জানিস?”
“কার, বাবা?”
“বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকারের”।
“বাবাসাহেব কে, বাবা?”
“বাবাসাহেব আমাদের দেশের কন্সটিটিউশন বা সংবিধান লিখেছিলেন।”
“কন্সটিটিউশন কি, বাবা?”
“আমাদের দেশ যখন স্বাধীন হল তখন আমাদের দেশের মানুষ ঠিক করলেন আমাদের দেশ কি ভাবে চলবে, মানুষ কি কি অধিকার পাবে, যেমন ধর আমাদের দেশে সব মানুষকে সমান ভাবে দেখা হবে, সবার সমান অধিকার। আবার কি কি করা যাবে না সব লেখা আছে কন্সটিটিউশনে। আর লিখেছেন বাবাসাহেব।”
“কিন্তু বাবা সবাই তো কন্সটিটিউশন মানে বলে মনে হচ্ছে না”
“সেকি তোমার এরকম কেন মনে হল?”
পাশ থেকে জিরির মা বলল “পাঁচ বছরের মেয়ে, খালি পাকা পাকা কথা।”
জিরি তার বক্তব্য চালিয়ে নিয়ে বলল “দেখো বাবা, আমি তো হায়দ্রাবাদে কত গরীব মানুষ দেখেছি, কলকাতাতেও দেখেছি। তারা খেতে পায় না, বাচ্চারা জুতো পরে না, স্কুলে যায় না, আবার আমার বন্ধু ***** ওরা তো খুব বড়লোক ওদের বাড়ি দেখলেই বোঝা যায়। তাহলে সবাই সমান কি করে হলো?”
“ঠিকই বলেছ, মা। কিছু পচা লোক নিজেরা কাজ না করে অন্যের পরিশ্রমের টাকা পয়সা, দুষ্ট বুদ্ধি দিয়ে বা গায়ের জোরে নিজেরা ভোগ করে। সে যাই হোক বাবাসাহেব আমাদের দেশে জাতপাতের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন ”
“জাতপাত কি বাবা?”
“ওই যে বললাম কিছু পাজি লোক নিজেরা অন্য অনেক মানুষকে ঠকিয়ে, নিজেরা কাজ না করে অন্যের পরিশ্রমের সব টাকাপয়সা, আরাম এইসব ভোগ করে। এদের একটা খুব ভালো কায়দা হলো জাতপাত। মানুষ তো ভগবানকে খুব মানে, তাই এই সব পাজি লোক মানুষকে বোঝায় ভগবান বলেছে তোমরা নিচু জাত আমারা উচু জাত, তাই তোমরা সব কাজ করবে আর আমাদের সেবা করবে। না হলে ভগবান তোমাদের পাপ দেবে।”
“এইরকম পচা কাজ করলে তো ভগবান ওই দুষ্ট লোকেদেরই পাপ দেবে বাবা, ভগবানের কাছে তো সবাই সমান”
“ঠিক কিন্তু পাজি লোকেরা ভগবানকেও মানে না, মা। তারা নিজেদের সুখ ভোগের জন্য অনেক মানুষকে দলিত ছোট জাত বলে তাদের দিয়ে সব কষ্টকর কাজগুলো করায়, আর নিজেরা আরাম করে সেবা নেয়। বাবা সাহেব নিজে এইরকম দলিত পরিবারের ছিলেন, খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন। পাজি লোকেরা দলিতদের পড়াশোনা করতে দিতে চায় না।”
“কেন পড়াশোনা করতে দেয় না, বাবা?”
“পড়াশোনা করলেই তো সবাই জেনে যাবে যে সব মানুষ সমান, উঁচু জাত নিচুজাত সব মিথ্যা কথা, সব বানানো ,ভগবান মোটেও এরকম কথা বলতে পারে না। ব্যাস, পাজিদের সব প্ল্যান শেষ। আর কেউ তাদের কথা শুনবে না”
“আচ্ছা বাবা মেয়েদেরও তো পড়তে দিত না তুমি বলেছ, বিদ্যাসাগর মেয়েদের স্কুল বানালেন, সেটাও কি এইজন্য?”
“ঠিক ধরেছ মা, মেয়েদেরও ছেলেরা বাড়ি বন্ধ করে রেখে সব কাজ করাতো আর নিজেদের সেবা করাতো। তাই তারা জানতো পড়াশোনা করলেই মেয়েরা বুঝে যাবে ছেলে মেয়ে সমান তাই মেয়েদেরও পড়তে দিত না। যেটা বলছিলাম বাবা সাহেব খুব লড়াই করে পড়াশোনা করলেন, স্কুলে ওনাকে ক্লাসে বসতে দিত না, জল খেতে দিত না নিচু জাত বলে।”
“ঢিসুম ঢিসুম ঘুষি?”
“সব লড়াই ঘুষি মেরে হয়না মা, কেউ পড়তে দিতে না চাইলেও কষ্ট করে জোর করে পড়াশোনা করাটাও লড়াই, খারাপের মাঝে ভালো কাজ করে যাওয়াটাও লড়াই। বাবাসাহেব অনেক পড়াশোনা করে জাতপাতের বিরুদ্ধে কথা বললেন। মানুষকে বোঝালেন এটা কত অন্যায় কত খারাপ। কন্সটিটিউশনে লিখলেন সবাই সমান। জাতপাতের ভিত্তিতে কাউকে আলাদা করা যাবে না।”
“বাবা আমি বড় হয়ে এমন ওষুধ আবিষ্কার করব যাতে পাজি লোকেরা ভালো হয়ে যায় কিন্তু পাজি লোকেরা কি তা করতে দেবে? আমাকে তো মিথ্যে কথা বলে আবিষ্কার করতে হবে কিন্তু মিথ্যে কথা কি বলা ঠিক?”
“এইরকম ওষুধ বানানো যাবে কিনা জানি না, তবে একটা আছে যাতে পাজিরা জব্দ হবে”
“কি, বাবা?”
“পাজিরা তো খুব অল্প লোক আর যাদের অত্যাচার করে তারা অনেক, তাই তারা সবাই মিলে যদি পাজিদের বকে দেয়, বলে তোমাদের খারাপ বুদ্ধি আমরা বুঝেছি আর তোমার কথা শুনব না তাহলেই ওরা ভয় পেয়ে লুকিয়ে পরবে”।
“আচ্ছা বাবা এমন দেশ আছে যেখানে সবাই কন্সটিটিউশন মানে, সবাই সমান? এইরকম সবাই মিলে পাজিদের ভয় দেখিয়েছে?”
“এই মুহূর্তে আছে কিনা বলতে পারব না তবে অনেক দেশেই বাচ্চাদের পড়াশোনা খাবার দাবার, কারো অসুখ করলে চিকিৎসার ভার নেয়, কারো কাজ না থাকলে তার খাওয়ার ব্যাবস্থা করে। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন বলে একটা দেশ ছিল সেই দেশে এইরকম সবাই মিলে পাজিদের শায়েস্তা করেছিলো আবার চীনেও করেছিল।”
“এখন আর নেই?”
“না মা, পাজিরা আবার ক্ষমতা দখল করেছে”
“যাঃ, এখন কি হবে?”
“আবার মানুষ বুঝতে পারবে আবার পাজিরা জব্দ হবে একদিন”
বাবা সাহেব আম্বেদকারের জন্ম দিবসে লেখা।