বঙ্গে একটা ঝড় উঠেছে। ঝড় না বলে সুনামি বলা ভাল। দুঃখের সুনামি, চোখের জলের সুনামি। যে বঙ্গদেশ তথা পশ্চিমবঙ্গ নারীদের নিরাপত্তা, শিক্ষা ইত্যাদি সব দিকেই প্রথম সারিতে ছিল। সেই বঙ্গ অর্থাৎ একদা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় নারী নিরাপত্তার প্রশ্নে বড়সড় একটা প্রশ্ন চিহ্ন যোগ হয়েছে, এবং এই অবস্থা তৈরি হয়েছে ৯ ই আগস্ট আরজিকর হাসপাতালের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ডাক্তার দিদির অর্ধ নগ্ন দেহ ও গণধর্ষণের ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই। এই ঘটনায় শাসকগোষ্ঠী ছাড়া প্রত্যেকের কপালেই চিন্তারেখা ফুটে উঠেছে। তা নিয়ে সর্বস্তরের লেখকগণও সাধারণ নাগরিকদের মতই উদ্বেগ জানাচ্ছেন।
এখানে একটা কথা বলে নেওয়া জরুরী যে আমরা জানি আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব একটা মতবাদ থাকে। কিন্তু সেই মতবাদ ততক্ষণ যৌক্তিকতা লাভ করে না, যতক্ষণ না তা সর্বস্তরের পাঠকেকুলের হাতে পৌঁছায়। তাই জনস্বার্থে প্রকাশনা দায়িত্ব নিয়ে সব স্তরের লেখকদের মতামত তুলে ধরেছেন তাদের ‘দুঃসময়ের ভাষ্য’ প্রতিক্রিয়া সংকলনটিতে।
প্রথমে কিছু লেখকের নাম উল্লেখ করছি তাতেই বোঝা যাবে কারা মতামত জানিয়েছেন যেমন প্রথম পাতাতেই দেখতে পাচ্ছি শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, পবিত্র সরকার, মিরাতুন নাহার, রতন খাসনবিশ, সব্যসাচী দেব, মন্দাক্রান্তা সেন, সৈয়দ হাসমত জালাল, ডঃ কুশধ্বজ ঘোষ প্রমূখ সাহিত্যিকগণ
এখানে প্রায় ১০০ জনের মতামত উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে আমি চেষ্টা করছি কয়েকজনের উক্তির কিছু অংশ তুলে ধরতে।
যেমন পবিত্র সরকার বলেছেন “এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেক প্রশ্নের এখনো জবাব পাওয়া যায়নি, প্রশ্নের তালিকা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। এ রাজ্যের পরিকল্পিত দুর্বৃত্তায়ন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে…”
আবার স্বপ্নময় চক্রবর্তী বলেছেন “এই বিচারের দাবির ভিতরে শুধুমাত্র আরজিকর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া ঘৃণ্য ঘটনায় নয় গত দেড়দশকের একের পর এক ঘটে যাওয়া অন্যান্য অন্যায়গুলিও যুক্ত আছে।…”
আবার আমরা যশোধরা রায় চৌধুরীর কলমে পড়তে পাই “…অগাস্টের ৯ তারিখ আরজিকর কাণ্ড একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত তরুণী ডাক্তারের ধর্ষণ খুন শুধু নয়, এটা মনে হয় সমাজের যা কিছু আশাপ্রদ, ভবিষ্যতের দিকে উৎসাহিত তারই বিনাশ যেন ফলত নারীদের এবং সাধারণ মানুষকে তা প্রবল ভাবে নাড়া দেয়।…”
সৈয়দ কওসর জামাল বলেছেন “…স্পষ্ট ভাবে বলা দরকার যে আরজিকর হাসপাতালের ঘটনাটি শুধুমাত্র ধর্ষণ খুন কিংবা নারী সুরক্ষার বিষয় নয় নারীর শরীরের উপর পুরুষের আধিপত্য দেখানোর বিষয় এটি নয় এই রাজ্যে এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা শাসক দলের অপশাসন…”
এভাবেই প্রত্যেক লেখকের কলমে ঝরে পড়া ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এই বইটিতে পাওয়া যায়। বাকী লেখকদের লেখা তুলে ধরা গেল না। বা উক্ত লেখকদের লেখাও সম্পূর্ণ রূপে উল্লেখ করা গেল না। তাই প্রত্যেক লেখা পড়তে, সংগ্ৰহ করতেই পারেন দুঃসময়ের ভাষ্য।
বইটির নাম দুঃসময়ের ভাষ্য, প্রকাশিত করেছেন জনস্বার্থ প্রকাশনা, মূল্য ১২০টাকা।
এই পাঠ প্রতিক্রিয়াটিকে, পাঠপ্রতিক্রিয়া রূপে না দেখে জনসাধারণের স্বার্থে বিদগ্ধ জনের মন্তব্য তুলে ধরার প্রয়াস হিসেবে দেখলে বাধিত হব।