সেদিন হেমন্তের মায়ালু কমলা চাঁদ পূর্ব দিগন্ত ছাড়িয়ে পুকুর পাড়ের ছাদের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে। রোগীহীন বৃদ্ধ ডাক্তার টেবিলে মাথা রেখে নিদ্রামগ্ন। ওনার সুন্দরী পিসিমা কাম রিসেপনিস্ট কানে ইয়ারফোন গুঁজে মোবাইলে কিছু দেখতে দেখতে আনমনে খিলখিলিয়ে হাসছেন। এমন সময় একটি ভীত সন্ত্রস্ত দম্পতি ডাক্তারের খুপরিতে প্রবেশ করলো।
ডাক্তার ঘুম ভাঙা আলস্যে চোখ তুলে ঢুলু ঢুলু চোখে তাকালেন। ইতস্ততঃ এলোমেলো নিম্ন আয়ের ভারি মিষ্টি একজোড়া স্বামী স্ত্রী নতমুখে এসে ঢুকলো।
“বসুন” দুজনেই জড়োসড়ো বসলো। মেয়েটি ডাক্তারের কন্যাসমা ।
“কি হয়েছে রে মা?”
“আমার বুকে একটা গোটা…..” মেয়েটির চোখ বেয়ে অশ্রুবিন্দু ….
ওর বর হাল ধরে “ডাক্তার বাবু ওর ডানদিকের বুকে সেদিন একটা শক্ত গোটা মতন কি যেন ঠেকলো। তো আমরা লোকালে দেখিয়ে একটা ছবি করিয়েছি …ডাক্তার বললো ভয়ের কিছু নেই …ফাইব্রো অ্যাডিনোসিস না কি য্যানো …”
মেয়েটি কাজল ধ্যাবড়ানো চোখ তুলে তাকায় – তখনও সে দুটি চোখ জলে ভেজা “..আমার বড়ো ভয় করছে …গরীব মানুষ একটা ছোট্ট মুদি দোকান”
বুড়ো ডাক্তার ওনার সুন্দরী রিসেপনিস্টকে ডাক দ্যান “ ও পিসিমা – নিয়ে আয় মা তিন কাপ চা”
পিসিমা অশ্রুমুখী কিশোরী বধূটিকে দেখে চা আনতে চলে যায়। যাবার সময় বলে যায় “হুঁ এরমধ্যেই চার কাপ হয়ে গেছে কিন্তু …”
যাই হোক চোখের জলে নোনতা করে কিশোরী বধূটি চা পান করলো।
ডাক্তার আবার ডাক দিলেন “পিসিমা ও পিসিমা একবার ইদিকে আয় তো।”
পিসিমা এসে দাঁড়ালো। ডাক্তার কিশোরীর পরীক্ষা সম্পূর্ণ করলেন। “নেমে আয় মা আমার সামনে বোস – আজ তোদের কটা কথা বলি।”
নতমুখে কিশোরী বধূটি চেয়ারে গিয়ে বসে । ডাক্তার গলা খাঁকারি দিয়ে শুরু করেন “ভালো করে মন দিয়ে শোন – ও ভালো মানুষের ছেলে তুমিও শোনো। প্রথমটা ভালো লাগবে না তবুও মন দিয়ে শুনতে হবে। ব্রেস্ট বা স্তন নারী পুরুষ নির্বিশেষেই থাকে। নারীদের যেহেতু সন্তান ধারণ করতে হয় এবং শিশুর জন্মের প্রথম ছ’মাস শিশুকে কেবলমাত্র মায়ের দুধ খেয়ে বাঁচতে হয় – হ্যাঁ কেবলমাত্র মায়ের দুধ – তাই মেয়েদের স্তনগ্রন্থি পুরুষদের থেকে বড়ো হয়। আর নারীদের স্তনে যা যা রোগ হওয়া সম্ভব সবই পুরুষেরও হতে পারে। তবে সম্ভাবনা অনেকখানি কম।
এবারে বলি স্তনের গঠন নিয়ে। স্তন মূলতঃ দুধ তৈরির জন্যে তৈরি। অর্থাৎ এই অংশটি প্রচুর গ্ল্যান্ড দিয়ে তৈরি। আর এই গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থিগুলো যদি টাইট করে বেঁধে না রাখা হয় তাহলে তো ওগুলো এদিক ওদিক সরে যাবে। তাই ওদেরকে ফাইবার দিয়ে টাইট করে বেঁধে রাখা হয়।”
কিশোরী বধূ আর তার বর হাঁ করে শুনছে।
ডাক্তার হাসেন “বড্ড উল্টোপাল্টা বলছি না রে?”
কিশোর বরটি বলে “না গো তুমি বলো ভালো লাগছে।”
ডাক্তার ঠান্ডা চায়ে আরেকটা চুমুক দিয়ে বলেন “কথা আর বেশী নেই কো – এবার এই গ্ল্যান্ড আর শক্ত ফাইবারের মধ্যে দিয়ে কতগুলো দুধ নিয়ে যাওয়ার পাইপ এসে বাচ্চাকে খাওয়ানোর মতো একটা ব্যবস্থা তৈরি করে। এবার স্তনে সাধারণতঃ কম বয়সে যেটা হয় সেটা হচ্ছে ঐ ফাইবার আর গ্ল্যান্ড একটু বেড়ে শক্ত চাকার মতো হয়ে যায় – সেটাকে বলে ফাইব্রোঅ্যাডিনোসিস। এটা নির্দোষ নিরীহ ধরনের ব্যাপার এটাকে ঠিক অসুখ বলা যায় না – মানে যেটা এই মেয়েটার হয়েছে।”
বর বৌ দুজনেই ভারি খুশি হয়ে পরস্পরের দিকে চেয়ে হাসে। তবু বৌটি বলে “এটা নাহয় ভয়ের কিছু নয় কিন্তু আমি সাবধান কখন হবো?”
ডাক্তার চোখ গোল গোল করে বলেন “প্রতি মাসে পরীক্ষা করতে হবে – কেননা রোগ কবে আসবে সেটাতো নোটিশ দিয়ে আসবে না – তাই না?”
নতুন বরটার মুখ দেখে মনে হয় ভাবছে এ্যাতো ঝামেলা জানলে বিয়েই করতো না। কাঁচুমাচু হয়ে বলে “মানে প্রতি মাসে ?….গরীব মানুষ …তাহলে এ তো….” একটুখানি খাবি খেয়ে কেবল বলতে পারে “ওরে বাবা”!”
ডাক্তার নির্বাক তাকিয়ে থাকেন ।
অল্পবয়সী বৌটি ইতস্ততঃ করে প্রশ্ন করে “ কি কি পরীক্ষা?”
ডাক্তার হাসেন। “সহজ ব্যাপার রে মা – বাড়িতেই করা যাবে। তবে শোন
১) মাসে একবার পরীক্ষা করে দেখতে হবে দুপাশের দু’টো বৃন্ত একই লাইনে আছে কিনা অর্থাৎ উঁচু নিচু হয়ে গেছে কিনা।
২) কোনও বৃন্ত হঠাৎ করে বিকৃত হয়েছে কিনা বা কুঁচকে ভেতরে ঢুকে গেছে কিনা। বা কোনও রস জাতীয় কিছু বেরোচ্ছে কিনা।
৩) হাতের তালু দিয়ে দ্যাখা বুকের ভেতরে কোনও শক্ত ঢ্যালার মতো কিছু হয়ে আছে কিনা।
৪) যদি সেই ঢ্যালা মতোন জিনিসটা না নড়ানো যায় অর্থাৎ কিনা শক্ত হয়ে আটকে থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তার দ্যাখাতে হবে।
তবে যে মাসে এই গুলোর যে কোনও একটা পাওয়া যাবে তক্ষুনি বাড়ির ডাক্তার বা সার্জন যে কারো সঙ্গে দ্যাখা করা উচিত আর একটা কথা ডাক্তারবাবুর মতামত বা এই ধরনের পরীক্ষার ফলাফলে মোটামুটি ভাবে রোগটা খারাপ কিনা সেটা বোঝা যায়। সুতরাং অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। ”
বর বৌ দুজনেই বেজায় খুশি হয়ে বেরিয়ে পড়লো। ডাক্তার আবার ঘুমের তোড়জোড় করছিলেন। পিসিমা তাড়া দিলেন “উঠুন স্যর এবার বাড়ি যান” । অনেক রাত হয়েছে ”