বিসিজি ভ্যাকসিন বেশ গোলমেলে ভ্যাকসিন। যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিনটি নিয়ে চিকিৎসক মহলে নানারকম মতান্তর আছে। ইদানীং কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে এই ভ্যাকসিন আবার সংবাদের শিরোনামে চলে এসেছে।
কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে দেখা যাচ্ছে যেখানে প্রথম বিশ্বের উন্নত দেশগুলি মহামারী ঠেকাতে নাস্তানাবুদ হচ্ছে, মৃত্যুমিছিল দেখতে দেখতে তারা দিশেহারা, সেখানে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে মহামারী অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কোন অজানা কারণে এটা ঘটছে, তা ব্যাখ্যা করার জন্য এক এক জন চিকিৎসক এক এক রকম মতবাদ দিয়েছেন। অনেকেই এর জন্য দায়ী করেছেন বিসিজি ভ্যাকসিনকে।
এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয় তৃতীয় বিশ্বের সব দেশের সব নবজাতককেই। উন্নত দেশগুলিতে এই ভ্যাকসিন শুধু হাই রিক্স গ্রুপের মধ্যেই দেওয়া হয়। আপনার জন্ম যদি ১৯৮৫ সালে বা তার পরে হয়, আপনি আপনার বাম বাহুর উপর দিকে একটি ক্ষতচিহ্ন খুঁজে পাবেন। এটি বিসিজি ভ্যাকসিনের চিহ্ন।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে বিসিজি ভ্যাকসিন কিভাবে করোনা ভাইরাসকে ঠেকিয়ে রাখবে। বিশেষত যেখানে যক্ষ্মা একটি ব্যাকটেরিয়া, আর কোভিড-১৯ একটি এনভেলপ যুক্ত আরএনএ ভাইরাস। আমাদের সাধারণ বুদ্ধি বলে একটি নির্দিষ্ট রোগের ভ্যাকসিন দিয়ে শুধু সেই রোগটিকেই ঠেকানো যায়। যেমন ডিপথেরিয়া ভ্যাকসিন ডিপথেরিয়াকে ঠেকায়, টিটেনাস টক্সয়েড ধনুষ্টঙ্কারকে ঠেকায়। কেউ কি কখনো শুনেছে জলাতঙ্কের টীকা নেওয়া ব্যক্তির চিকেন পক্স হয়না?
এখানেই বিসিজি ভ্যাকসিন সবার থেকে আলাদা। বিসিজি ভ্যাকসিনের যক্ষ্মা রোগের বিরুদ্ধে কতটা প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে তাই নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে মতভেদ আছে। কিন্তু যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধ ছাড়াও এই ভ্যাকসিন যে আরও অনেক রোগের বিরুদ্ধে, এমনকি কিছু ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সাহায্য করে সেই নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে কোন মতবিরোধ নেই। এবং এর জন্য মূলত দায়ী বিসিজি ভ্যাকসিন দ্বারা আমাদের শ্বেত রক্ত কণিকা পরিচালিত ইমিউনিটির বৃদ্ধি।
বিসিজি ভ্যাকসিন আবিস্কারের শতবর্ষঃ
বিসিজি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের গল্পও কম রোমাঞ্চকর নয়। এডয়ার্ড জেনার সেই ১৭৯৬ সালেই প্রমাণ করেছেন গরুর বসন্ত রোগ করে যেই জীবাণু, সেই জীবাণু মানুষের দেহে প্রবেশ করালে মানুষের অনেক কম ক্ষতিকারক বসন্ত রোগ হয়, এবং সেই মানুষের আর কোনদিনও গুটি বসন্ত হয় না।
তারপর ১৮৮২ সালের ২৪শে মার্চ রবার্ট কক্ বার্লিনে ঘোষণা করলেন যক্ষ্মার জীবাণু আবিষ্কারের কথা। ২৪ শে মার্চ তারিখটিকে সারা বিশ্বে ‘বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়। এরপর কক্ যক্ষ্মা জীবাণু থেকে পাওয়া প্রোটিন জাতীয় পদার্থ আলাদা করেন। তিনি ঘোষণা করেন এর দ্বারা ক্ষয়রোগ সারিয়ে ফেলা সম্ভব। ডাঃ রবার্ট কক তখন খ্যাতির মধ্য গগনে। তাঁর মতো মানুষের কথা কেউ অবিশ্বাস করলো না। ১৮৯০ সালে সেই প্রোটিন জাতীয় টিকা “টিউবারকুলিন”এর মানুষের উপর ব্যবহার শুরু হল। সাধারণ চিকিৎসকরা সরল বিশ্বাসে বেশ কয়েক হাজার মানুষকে টিউবারকুলিন ইংজেকশন দিলেন। যার ফলে বেশ কয়েক শো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ল এবং মারা গেল।
১৯০৮ সালে ফ্রান্সের পাস্তুর ইন্সটিউটে এলবার্ট কালমেট(Albert calmette) ও ক্যামেলি গুয়েরিন(Camille Guerin) যক্ষ্মা রোগের টীকা তৈরির কাজে ব্রতী হলেন। তারা রবার্ট ককের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন। এর আগে লুই পাস্তুর প্রমাণ করেছিলেন কোনও জীবাণু একাধিক বার কালচার করলে সেই জীবাণুর “ভিরুলেন্স” অর্থাৎ ক্ষতি করার ক্ষমতা কমে। কিন্তু সেই জীবাণু শরীরে গেলে শরীর তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। যার ফলে পরিবেশের ক্ষতিকারক জীবাণুও পরে রোগ সৃষ্টি করতে পারে না।
তাঁরা মাইকোব্যাক্টেরিয়াম বোভিসে আক্রান্ত গরুর দুধ থেকে যক্ষ্মার জীবাণু আলাদা করলেন। এবং তিন সপ্তাহ অন্তর অন্তর তাঁরা সাব কালচার করা শুরু করলেন। কালচার মিডিয়াম হিসাবে তাঁরা ব্যবহার করলেন সেদ্ধ আলু, গ্লিসারিন এবং মোষের পিত্ত।
কোনও মহান আবিষ্কারই সহজে হয়না। ফলাফলের চিন্তা না করে তাঁরা সাব কালচার করে যেতে লাগলেন। এর মধ্যেই শুরু হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ফ্রান্স জার্মানীর দখলে চলে গেল। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা প্রতি তিনমাস অন্তর সাব কালচার চালিয়ে গেলেন। এইসময় কালচার মিডিয়াম জোগাড় করতে তাঁদের কালঘাম ছুটে গেল। কিন্তু তাঁরা দমে গেলেন না। দীর্ঘ তের বছর ধরে তাঁরা ২৩১ বার সাব কালচার করলেন। তাঁরা বুঝতে পারলেন তাঁরা অবশেষে মাইকো-ব্যাক্টেরিয়াম বোভিসের সেই জীবাণু তৈরি করতে পেরেছেন, যা মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টি করবে না। কিন্তু যক্ষ্মা রোগের প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি করতে পারবে।
আজ থেকে ঠিক একশ বছর আগে ১৯২১ সালের জুলাই মাসে প্রথম এই টীকা নবজাতকদের উপর ব্যবহার শুরু হল। প্রথমে এই টীকা নবজাতকদের খাওয়ানো হতো। তাদের মধ্যে ক্ষতিকারক কোনও প্রভাব দেখা গেল না।
১৯২৪ থেকে ১৯২৬ সালের মধ্যে মোট ৫১৮৩ জন নবজাতককে এই টীকা খাওয়ানো হল। একজনের মধ্যেও টীকার ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা গেল না। অন্যদিকে তাদের মধ্যে জীবনের প্রথম বছরে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ৯৩% কমে গেল।
এই টীকাটির নাম দেওয়া হল, বিসিজি অর্থাৎ ব্যাসিলাস কালমেট গুয়েরিন, এর দুই আবিষ্কারকের নামে। ডব্লিউএইচও পরবর্তীকালে টীকাটি ইংজেকশানের মাধ্যমে বাঁ বাহুতে চামড়ার মধ্যে দেওয়ার সিদ্ধাত নেয়। কারণ মুখে খাওয়ালে পাকস্থলীর অ্যাসিড অধিকাংশ জীবাণুকেই ধ্বংস করে ফেলে।
এই বিসিজি ভ্যাকসিনের জীবাণু পৃথিবীর সর্বত্র পাঠানো হয়। এবং নির্দেশিকা দিয়ে দেওয়া হয় কিভাবে সেগুলো কালচার ও ব্যবহার করতে হবে। যদিও পরবর্তী কালে বিভিন্ন জায়গায় সাবকালচার করার ফলে অন্তত এক ডজন বিভিন্ন রকমের স্ট্রেন জন্ম নিয়েছে। বর্তমানে ভারতে যেটি থেকে বিসিজি টীকা তৈরি হয় সেটি ডেনিশ ১৩৩১ স্ট্রেন।
বিতর্কঃ
বিসিজি ভ্যাকসিন নিয়ে বিতর্ক কম নয়। এই টীকা কিন্তু আদৌ যক্ষ্মা রোগের সংক্রমণ আটকাতে পারে না। এই টীকা শুধু শৈশবে এক্সট্রা পালমোনারি টিবি যেমন টিউবারকুলার মেনিনজাইটিস, মিলিয়ারি টিউবারকুলোসিস ইত্যাদি ভয়াবহ যক্ষ্মা হতে বাধা দেয়। বিসিজি টীকা যক্ষ্মা থেকে ১৫ বছরের কম বয়স্কদের মধ্যে মৃত্যুর পরিমাণ প্রায় ৭১% কমায়। তবে সম্ভবত ২০ বছর বয়সের পর যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে বিসিজি টীকার বিশেষ ভূমিকা নেই।
এই টীকার সবচেয়ে বড় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছিল দক্ষিণ ভারতে। টানা সাড়ে বারো বছর চলেছিল এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। আশ্চর্জনক ভাবে সেখানে শিশুদের মধ্যেও যক্ষ্মা প্রতিরোধে এই টীকার কোনো সুফল দেখা যায়নি।
বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে যেমন আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সেকারণেই বিসিজি টীকা আর সব নবজাতকদের দেওয়া হয় না। তবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে এখনও সব নবজাতকই জন্মের ঠিক পরেই বিনামূল্যে বিসিজি টীকা পায়।
বিসিজি টীকা আর আশ্চর্য কিছু অভিজ্ঞতাঃ
যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে বিসিজি টীকার ভূমিকা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক থাকলেও, এই টীকা যে অন্যান্য অনেক রোগের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়, তাই নিয়ে বিশেষ বিতর্ক নেই।
১. বিসিজি টীকা আরেকটি মাইকোব্যাকটিরিয়াম ঘটিত রোগ ‘কুষ্ঠ’ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এবং এই প্রতিরোধ ২০ বছরের পরে যক্ষ্মা রোগের মত পুরোপুরি কমে যায় না।
২. বিসিজি টীকাকরণ অন্যান্য রোগেও বাচ্চাদের মৃত্যুহার কমায়। এটি নবজাতকদের রক্তে শ্বেত রক্ত কণিকার T helper cell দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ইমিউনিটি বাড়ায়। বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে এটি ১ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে মৃত্যুহার প্রায় ৫০% কমাতে পারে।
৩. বিসিজি টীকা দেওয়া বাচ্চাদের মধ্যে হুক ওয়ার্মের সংক্রণ কম হয়।
৪. এদের মধ্যে অ্যালার্জীর প্রাদুর্ভাবও অপেক্ষাকৃত কম হয়। শিশুদের মধ্যে অ্যাজমা প্রায় ৫০% কম হয়।
৫. ডায়াবেটিস টাইপ ১ ও ক্রনস রোগ প্রতিরোধে বিসিজির ভূমিকা থাকতে পারে।
৬. ব্লাডার ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিসিজি টীকা নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও কোলন ক্যান্সার ও লাং ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিসজির ভূমিকা থাকার সম্ভাবনা আছে।
বিসিজি আর করোনা মহামারীঃ
বিসিজি যক্ষ্মা ছাড়াও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। করোনা মহামারীর ক্ষেত্রে যে দেশ গুলিতে বিসিজি সব নবজাতককে দেওয়া হয় না, সেখানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশী এবং মৃত্যুহারও বেশী। তাহলে কি বিসিজি ভ্যাকসিন করোনার বিরুদ্ধেও আমদের কিছুটা সুরক্ষা দিচ্ছে? অনেক চিকিৎসক এই মহামারী প্রতিরোধের জন্য সকলকে বিসিজি ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলেছেন। এই নিয়ে কয়েকটি লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি এতোটা জোর গলায় বলা যায় বিসিজি ভ্যাকসিন করোনা মহামারী প্রতিরোধ করতে পারবে?
বিরুদ্ধেও মতামত উঠে আসছে।
প্রথমঃ এখনও বলার সময় আসেনি অনুন্নত দেশগুলিতে মহামারীর প্রকোপ কম হবে। উন্নত দেশগুলিতে রোগ ছড়িয়েছে আগে। ইউরোপ আমেরিকায় যখন মহামারী চলছিল, সেই সময় ২১শে মার্চ ভারতে রোগী ছিল ১৯৫ জন। আর আজ ১৮ই এপ্রিল ভারতে করোনা রোগী বেড়ে হয়েছে ১৪৭৯২ জন।
দ্বিতীয়ঃ আমদের মতো দেশে রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষার হারও অনেক কম। ফলে অনেক করোনা রোগী এবং করোনায় মৃত্যু অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে।
তৃতীয়ঃ উন্নত দেশগুলিতে বয়স্ক লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। আর ভারতে কমবয়সীদের সংখ্যাই বেশি। কোভিড-১৯ এ বয়স্কদের মধ্যে মৃত্যু হার অনেক বেশি।
চতুর্থঃ চিন, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি দেশগুলিতেও সব নবজাতককে বিসিজি টীকা দেওয়া হয়। ইংল্যন্ডেও কদিন আগে পর্যন্ত সকলকে বিসিজি দেওয়া হত। এই দেশগুলিতে কিন্তু মহামারীর প্রকোপ কম নয়।
পঞ্চমঃ বিসিজি বাচ্চাদের যক্ষ্মার থেকে রক্ষা করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিসিজির বিশেষ প্রভাব থাকে না। সেক্ষেত্রে বয়স্কদের ক্ষেত্রে করোনা প্রতিরোধেও বিসিজির ভূমিকা থাকার কথা নয়।
ষষ্ঠঃ মহামারী শুরু হওয়ার আগেই লক ডাউনের ঘোষনা নিঃসন্দেহে ভারতে মহামারীর ছড়িয়ে পড়ার গতিবেগ অনেকটা কমিয়েছে। তার পেছনে হয়তো বিসিজি ভ্যাকসিনের আদৌ কোনো ভূমিকা নেই।
বর্তমানে আমেরিকা, নেদারল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর বিসিজির ট্রায়াল চলছে। সেই রিপোর্ট আসার আগে কোনভাবেই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিসিজি’র ভূমিকা আছে। ডব্লিউএইচও ১৩ই এপ্রিল ঘোষণা করেছে, “আরো তথ্য না আসা পর্যন্ত কোভিড-১৯ মহামারী ঠেকানোর জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বিসিজি দেওয়ার কোনো উপযোগিতা নেই”।
Janlam anek kichhu.dhonyobaad.
ঐন্দ্রিল, আমি তোমার এই লেখা ছাড়াও ‘করোনার দিনগুলি’ খুব মন দিয়ে পড়ছি। লেখাগুলো শুধু ভালো বললে কম বলা হয়। করোনার দিনগুলির সমস্ত লেখা একটু কষ্ট এবং সময় করে যদি পাঠাও খুব ভালো হয়। মাত্র মাসদুয়েক হল স্মার্টফোনের মালিক হয়েছি, জানিনা এই কমেন্ট তুমি পর্যন্ত পৌঁছবে কিনা।