ট্রাম্প ও মোদির বিদেশ নীতির কারণে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রসঙ্গটি নতুন করে আলোচনার শীর্ষে। বেশ কিছু দেশে আলোচিত হচ্ছে যে সেই প্রাচীন ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নাকি করোনা মোকাবিলায় বেশ খানিক সক্ষম। এই তথ্যে বিশ্বে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। ভারতও দেশের স্বাস্থ্য কর্মীদের (চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়)এই ওষুধ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু বিগত কিছুদিন থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প – এর কার্যকলাপ এই ওষুধের প্রসঙ্গকে তুঙ্গে তুলে দিয়েছে। সেসব প্রসঙ্গ বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া অপ্রয়োজনীয়, কারণ সকলেই তা জানেন। হঠাৎ একটি WhatsApp মেসেজ চোখে পড়লো যেটা নিয়ে সবিস্তারে লেখা প্রয়োজনীয় মনে করলাম।
কালো জিরে ভিজিয়ে খেলে নাকি Hydroxychloroquine এর গুণ পাওয়া যায় / Hydroxychloroquine-এর বিকল্প হিসেবে কালো জিরে খান।
সর্বৈবভাবে ভ্রান্ত প্রচার। হ্যাঁ, ম্যালেরিয়ার ওষুধের জন্ম প্রাকৃতিক উপাদান থেকেই কিন্তু সেটা কালো জিরে না। আমি একটু ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করি।
সময়টা অষ্টাদশ শতক। গোটা পৃথিবী জুড়ে এক ভয়ংকর মহামারী– অজানা এক রোগ, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে, ভয়ংকর তাপমাত্রা, ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে। অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। জ্বরের কারণও অজানা। গোটা পৃথিবী তখন থরহরিকম্প, এক সাহেব ডাক্তার কলকাতায় বসে প্রাণপাত করে গবেষণা চালিয়ে গেলেন – খুঁজে বের করলেন রোগের কারণ আসলে “মশা”। মশার শরীরে থাকা এক পরজীবী ক্ষুদে প্রাণী (নাম প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স) এই জ্বর ঘটাচ্ছে। কারণ তো জানা গেল, এবার ওষুধ? জানা গেল, ১৭ শতকে পেরুতে এরকম কাঁপুনি দিয়ে আসা জ্বরে নাকি সিঙ্কোনা নামের গাছের রস খাওয়ালে জ্বর সেরে যেত। সেই গাছের রস থেকেই ওষুধকে খুঁজে বের করা হলো। ঘটল এক যুগান্তকারী ঘটনা। পৃথিবীর ইতিহাসে সেই ত্রাস সৃষ্টিকারী জ্বরকে বাগে আনা গেলো।
রোগের নাম ম্যালেরিয়া। রোগের কারণ যিনি খুঁজে বের করলেন পেলেন শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা – ১৯০২ নোবেল পুরস্কার, রোনাল্ড রস। আর সেই জীবনদায়ী ওষুধ? সে বাঙালির ঘরে ঘরে একসময় জায়গা করে নিয়েছিল – কুইনিন বা কুইনাইন। হ্যাঁ, এই কুইনিনই Hydroxychloroquine এর মা বা মাদার ওষুধ। বিজ্ঞানের ভাষায় Prototype Drug বলা চলে। যুগ যুগ ধরে চলে গবেষণা, নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা। সময়ের তাগিদেই ওষুধের বদল ঘটে… কুইনিন থেকে ক্লোরোকুইন, তা থেকে এই Hydroxychloroquine।
এই আবিষ্কারের পিছনে অনেক মানুষের লড়াই, পরিশ্রম লুকিয়ে আছে। এই ওষুধের উৎপাদনের সাথে আমাদের গর্ব আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের নাম জড়িয়ে আছে।
তাই এই ওষুধ নিয়ে এই ধরনের ভ্রান্ত খবর ছড়ানো অনুচিত।