ক্যান্সার সার্ভিক্স বা যোনি ক্যান্সার সম্পর্কে আলোচনা দেখে অনেকেই হয়তো মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন বা গুরুত্ব নাও দিতে পারেন লজ্জা বা কুণ্ঠার কারণে। তাই প্রথমেই বলে রাখি এই ক্যান্সার মহিলাদের গাইনকলজিকাল ক্যান্সারগুলির মধ্যে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য, কারণ ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ক্যান্সার ঘটিত মৃত্যুগুলির মধ্যে ক্যান্সার সার্ভিক্সের ঘটনা পরিসংখ্যানগত ভাবে সর্বাধিক। এর সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো ৭০% রোগ ধরা পড়ে স্টেজ থ্রি বা তার ও পরে যখন আর রোগীকে বাঁচানো যায় না। তাই এই রোগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা প্রয়োজন।
এই ক্যান্সার এর মূল কারণ হলো হিউম্যান প্যাপিলমা ভাইরাস নামক একটি ভাইরাস সংক্রমণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীর বয়স চল্লিশের বা পঞ্চাশের ঘরে।
যে বিষয়গুলি এই ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ায় সেগুলিকে রিস্ক ফ্যাক্টর বলা হয়, যেমন- খুবই কম বয়সে বিবাহ ও সন্তান প্রসব, বহুসংখ্যক সন্তান প্রসব , একাধিক যৌন সঙ্গী, অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন, অপরিচ্ছন্নতা ও ধূমপান। এছাড়াও আরো কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর হল এইডস, বিভিন্ন রোগ যেগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় ইত্যাদি।
এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি জানা দরকার-
মাসিকের দ্বারে অনিয়মিত ও অতিরিক্ত রক্তপাত, মাসিকের অন্তর্বর্তী সময়ে রক্তপাত, সঙ্গমের পরে রক্তপাত।
মেনোপজ পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ যাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ও দুর্গন্ধ যুক্ত সাদাস্রাব বা রক্ত মিশ্রিত ধাত ক্ষরণ হতে পারে।
এছাড়াও তলপেটে ব্যথা, পা ফোলা, ঘনঘন প্রস্রাব, প্রস্রাবের সাথে যন্ত্রণা ও রক্তপাত, মলত্যাগের সাথে রক্তপাত– এগুলিও হতে পারে।
এবারে আসি এর প্রতিরোধের বিষয়ে-
এক, পূর্বোক্ত রিস্ক ফ্যাক্টরগুলিকে এড়িয়ে চলতে হবে।
দুই, কন্ডোম সহ বিভিন্ন গর্ভনিরোধক পদ্ধতিগুলির সঠিক ব্যবহার যাতে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন ও বহুসংখ্যক সন্তান প্রসব এড়িয়ে চলা যায়।
তিন, স্ক্রিনিং– ক্যান্সার সার্ভিক্সে স্ক্রিনিং একটি সহজ, কম ব্যয় সাপেক্ষ, যন্ত্রণাহীন ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি যা দিয়ে একদম প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ধারণ সম্ভব আর তার ফলে এই রোগের তীব্রতা বা ভয়াবহতা আটকানো যায়। তাই চিকিৎসকের সাথে জনসাধারণের মধ্যে ও pap smear এর মাধ্যমে এই স্ক্রিনিং সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন।
এই স্ক্রিনিং টেস্ট শুরু করতে হবে ২১ বছর বয়সে, প্রত্যেক তিন বছর অন্তর একবার করে টেস্ট করাতে হবে ৬৫ বছর পর্যন্ত। এটি সম্ভব না হলে অন্তত ৪০বছর বয়সে একবার এই টেস্ট করা অত্যন্ত আবশ্যক।
সরকারি ভাবে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজগুলিতে এই pap smear টেস্ট করা হয়। ডাক্তার বাবুর পরামর্শে প্রাইভেট হাসপাতালে ও ল্যাবরেটরিতেও এই টেস্ট করানো যায়।
এছাড়া ভারতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুসারে VIA নামক একটি অত্যন্ত সহজ পদ্ধতিতে ৩০-৬৫ বছর বয়সী সব মহিলাদের প্রতি ৫ বছরে একবার টেস্ট করার কথা বলা হয়েছে। এই পদ্ধতি গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রয়োগ করা হবে।
চার, ভ্যাকসিন বা টিকা- সৌভাগ্যবশত এই ক্যানসার প্রতিরোধে একাধিক ভ্যাকসিন আছে যা যথেষ্ট কার্যকরী।
এই টিকা ১১-১২ বয়সে না হলে অন্তত বিয়ের ১-২ বছর আগে শুরু করতে হবে।
যেহেতু এই ভ্যাকসিন কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ, তাই আমাদের দেশে এই ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং পদ্ধতিই অনেকবেশি উপযোগী ও নির্ভরযোগ্য।
পরিশেষে তাই বলি- সমস্ত ভয়, লজ্জাকে জয় করে আমাদের প্রত্যেককে আরো বেশি সচেতন হতে হবে আর স্ক্রিনিংকে অবলম্বন করে এর মর্মান্তিক পরিণতির বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
Thanks a lots mam.আমদের মেয়ে এই বিষয় গুলি জানা খুবই দরকারী।
Mam breast cancer সম্বন্ধে যদি কিছু লেখেন খুব ভালো হয়।
Please suggest the way to prevent brest cancer.
Thanks mam???
ভালো লেখা। আপনার ফোন নাম্বার টা যদি দেন এবং কোথায় বসেন যদি জানান। তাহলে আমাদের সামাজিক ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে সুবিধা হয়।