জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ক্যান্সার বহির্বিভাগ চালু হয়েছে, স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমে দেখলাম। দেখে খুবই উৎসাহিত হয়েছিলাম। গত বছর পাঁচেক ধরে জলপাইগুড়িতে ক্লিনিক করার সুবাদে জানি আমার শহরের মানুষ ক্যান্সারের চিকিৎসা থেকে কতটা দূরে রয়েছেন। আগ্রহ নিয়ে দেখতে গিয়ে দেখলাম একজন স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলছেন “যাঁরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁদের যতদিন পর্যন্ত মৃত্যু না হচ্ছে আমরা সেবা দিয়ে যাবো।”
সন্দেহ হল ঠিক শুনলাম? বারবার শুনলাম। হ্যাঁ, এইটাই তিনি বললেন। এই কথাটা একজন চিকিৎসক ( সম্ভবত উনি চিকিৎসক) আজ ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে বলতে পারলেন?
এর মানে ক্যান্সার আক্রান্ত হলেই ধরে নিতে হবে তাঁর আয়ু শেষ? ক্যান্সার মানেই মৃত্যু? কি ক্যান্সার বিভাগ খুললেন মাননীয় অধিকর্তা? সেখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা বা চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হবে? না সেটা হস্পাইস মানে অন্তিম সময়ের সেবা দেওয়ার প্রতিষ্ঠান? এই যে হাজার হাজার মানুষ ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে চলেছেন তাঁদের প্রতি এ কি অসংবেদনশীল আচরণ? যে হাজার হাজার ক্যান্সারের ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, বিজ্ঞানী দিনরাত এক করে ক্যান্সার আক্রান্তকে সুস্থ করে তোলার প্রচেষ্টায় রত তাঁরা কি সব নির্বোধ? লাখ লাখ ক্যান্সার রোগী সারাবছর পৃথিবীতে, ভারতে সুস্থ হচ্ছেন , স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন তাঁরা সব তাহলে এই গ্রহের মানুষ না? তাঁদের অদম্য প্রচেষ্টা, দুরন্ত লড়াই সব মিথ্যা?
এই ঘটনা এই প্রথম নয়। কি চিকিৎসক কি সাধারণ মানুষ ক্যান্সার শুনলেই তাঁকে খরচের খাতায় ধরে নেন। এই মনোভাব কবে বদলাবে বলতে পারেন?
ক্যান্সার মানেই মৃত্যু? এই ধারণার বদল এই মুহূর্তে প্রয়োজন। যেমন হার্ট অ্যাটাক হলেই মানুষ মরেন না তাঁর চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা সম্ভব তেমনি ক্যান্সার হলেও চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অসংখ্য ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষ আজ চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ। এমনকি লাং বা ফুসফুসের ক্যান্সার যা সবচেয়ে মারাত্মক ক্যান্সার বলে পরিচিত তার লাস্ট স্টেজ বা স্টেজ ফোর রোগীকেও তিন চার পাঁচ বছর বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। এটা কি হার্ট অ্যাটাকের পেশেন্ট কে পাঁচ বছর বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে কম এচিভমেন্ট?
সমস্ত ক্যান্সার রোগী যাঁরা রোগ টাকে জয় করেছেন তাঁদের কাছে অনুরোধ প্লিজ এগিয়ে আসুন। আপনাদের ক্যান্সার জয়ের কাহিনী মানুষকে জানান। ক্যান্সার মানে মৃত্যু এই ধারণার পরিবর্তন এই মুহূর্তে প্রয়োজন। যতদিন না এই বিশ্বাস জন্মাচ্ছে যে ক্যান্সার সেরে যায়, ক্যান্সার হলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা যায় ঠিক যেমন ডায়াবেটিস হলেও বেঁচে থাকা যায়, ততদিন ক্যান্সার যুদ্ধে প্রথমেই আমরা হেরে বসে থাকবো।
আর সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ মানুষ যাঁদের কথা মানুষ শোনেন তাঁদের অনুরোধ করছি একটু দায়িত্ব নিয়ে কথা বলুন। আধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা না থাকলে দয়া করে চুপ করে থাকুন, হাতজোড় করছি যাঁরা লড়াই করছে বা ভবিষ্যতে যাঁদের লড়াই করতে হবে তাঁদের মনোবল থেঁতলে দেবার মহান ব্রতটা নেবেন না।
আর সকল ক্যান্সার জয়ী মানুষের কাছে আবেদন দয়া করে এগিয়ে আসুন। মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মানোর গুরুদায়িত্ব নিন যে ক্যান্সার চিকিৎসা করলে সেরে যাওয়া সম্ভব। একমাত্র আপানারাই এই কাজটা পারেন।
মনের জোর হারাবেন না। অনেক মানুষ এই রোগটার সাথে লড়াইয়ে আপনার সাথে আছে। এবং জয় অবশ্যই সম্ভব।
ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়। ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়।ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়।
ক্যান্সার সারিয়ে তোলা সম্ভব। ক্যান্সার সারিয়ে তোলা সম্ভব। ক্যান্সার সারিয়ে তোলা সম্ভব।
(প্রতিটি মানুষের মধ্যে এই বার্তা ছড়িয়ে দিন। ক্যান্সার সারিয়ে তোলা সম্ভব)