জানো না, আজ চোদ্দ তারিখ, চোদ্দই নভেম্বর? আজ আমাদের দিন। এসো, আনন্দ করি – বাবা বলেছে, এভাবে হইহই হলে, তাকে উদযাপন করা বলতে হয়।
এই দ্যাখো, রঙীন বেলুনে সাজিয়েছি ঘর। জলপাইরঙা পোষাকে এরপর প্রভাতফেরী – বাবা বলেছে, ওকে কুচকাওয়াজ বলে – আমার প্রাউড ফিল করার কথা, বাবা-ই বলে দিয়েছে – সন্ধের আগেই কাজ শেষ করে নিতে হবে – তারপর টিভি – আমাদের জন্যে কে একটা কিছু বলবে – তার নাম জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ। আপাতত, খুশী খুশী রোদ্দুরে ভরে আছে বাগান – রান্নাঘর ছেড়ে বাগানে এখন – মা-ও জানে, রাজত্বের দৌড় ওই ব্যালকনি অব্দিই।
মন্ত্রীকাকু ফিতে কেটে গেছে – ঝলমলে ফুল আর ওরিগ্যামি দিয়ে জমে উঠবে উৎসব – ফাঁস খোলা লাল ফিতে দিয়ে বেঁধে দেব বোনের চুল – বাবা বলে দিয়েছে, শোন, ওই গল্পটাই ইতিহাস, বড় ক্লাসে উঠলে তুমিও জানতে পারবে – বলেছে, এবছর নতুন বই কিনে দেবে আমাকে – আমার তো মজা লাগছে খুব, তোমার হচ্ছে না?
জ্যেঠু এনে দিয়েছে বিল্ডিং ব্লক – আমি দেশ বানাচ্ছি – পুরোনো খেলনা ফেলে মন্দির বানাচ্ছি ওইখানে – পাশে প্লাস্টিকের গাছ আর খেলনা দুধসরোবর – দিদুন রামায়ণের গল্প বলেছে, সুর করে – আমি রামের গল্প জানি, লক্ষ্মণেরও – কাজের মাসীর নাম সীতা – ড্রাইভারকাকুর ভালো নাম দশরথ – তবু ওরা রামের কথা উঠলেই কপালে হাত ঠেকায় – কী বোকা, বলো?
সকাল থেকেই খুব ব্যস্ত হয়ে গেছি – আজ তো আমাদের দিন – বসে গেছি রঙ আর পেনসিল হাতে – ছবি আঁকছি – মা ললিপপ দেবে – আমি বায়না করি না আর, তার আগেই ললিপপ পেয়ে যাই – ওই দ্যাখো, খেলনাপাতি নিয়ে ভুলে আছে বোন – বোনুর মুখে চুষিকাঠি – তাড়াতাড়ি বসি – ইশকুলে পতাকা আঁকতে বলেছে – এটাসেটা আঁকতে আঁকতে, গেরুয়া রঙ তো ফুরিয়ে গেছে আগেই – কী আর করা, শেষে ওই লাল রঙ দিয়ে ঝলমলে পতাকা পাতায় পাতায় –
বাবা খুব বকেছে, জানো?
তুমি তো নাগরিক – নাগরিক কাকে বলে, কেউ জানো? – ওইটাকে জাতীয় পতাকা বলে। হলোই বা শিশুদিবস, এমনকি বড় হলেও, ওইখানে রক্তের লালরঙা দাগ লাগাতে নেই।
Painting : Henri Matisse (The Horse, The Rider and The Clown)