ছোটবেলার একটা গল্প শোনাই। যখন ছোট ছিলাম, একটা আঁকার বই ছিল, যার একদিকে রঙ করা ছবি থাকতো , অন্য পাতায় সেই ছবির আউটলাইন করা থাকতো। আর তা রঙ দিয়ে ভরিয়ে তুলতে হোত। একদিন হল কী, স্কুলে সেই বইতে রঙ করতে বসলাম, হলুদ রঙের হাঁস ছাতা মাথায় দিয়ে হাঁটছে। এদিকে আমার রঙ পেনসিলের বাক্সে হলুদ রঙের পেনসিল গেছে হারিয়ে। তাই অনেক ভেবেচিন্তে দিলুম হাঁসটাকে বেগুনি রঙে ভরিয়ে। আমার মনে হল, রঙটা বেশ ভালোই করেছি। বর্ডারের বাইরে গিয়ে কোনোরকম সার্জিকাল স্ট্রাইক করিনি। খুশি মনে দুলতে দুলতে আন্টিকে দেখাতে গেলাম। ভাবছি, দারুণ প্রশংসা পাব। কিন্তু বিধি বাম! ছবি দেখেই চিল চিৎকার… বুদ্ধু কোনোদিন বেগুনি রঙের হাঁস দেখেছিস? সাধারণ জ্ঞান নেই? আর সারা ক্লাস আমার দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসছে-বুদ্ধু, বুদ্ধু, বুদ্ধু। কিন্তু কেউ একবার প্রশ্ন করলো না, হাঁস যদি ছাতা ধরে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারে তাহলে সে বেগুনি হতে পারবে না কেন? কিন্তু প্রশ্ন করা বারণ, প্রশ্ন করা শৃঙ্খল ভঙ্গ। সেদিন বুদ্ধু জীবনের এক বড় জিনিস শিখল, যে রঙ দেখবে সেই রঙ আঁকবে, রঙ বদলাবে না।
বুদ্ধু বড় হল। আবার নতুন বিপত্তি। ছোটবেলার শিক্ষা এবার আর কাজে লাগে না।
সেদিন আঁকলাম নীল আকাশ, সাদা মেঘ ভাসছে। ব্যস… হা হা করে বন্ধুরা তেড়ে এল, বুদ্ধু করিস কী, করিস কী? মেঘকে সবুজ করে দে। জানিস না নীল-সাদার অন্য মানে। দিলাম পালটে।
আবার আঁকলাম। বাচ্চা ছেলে আইসক্রিম খেতে খেতে হাঁটছে। গেঞ্জির রঙটা সুন্দর গেরুয়া করে দিলাম। ব্যস, আর যাই কোথায়? বন্ধুরা আবার তেড়ে এল, বুদ্ধু করিস কী? বাচ্চার গেঞ্জি গেরুয়া করলে ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে। ওটা সাদা রেখে দে। যে যার মতো ওর গেঞ্জি রঙ করে ওকে ভবিষ্যতে নিজের কাজে লাগাবে। দিলাম ফের সাদা করে, তাকে তুলে দিলাম ভবিষ্যতের হাতে।
ফের হাতে নিলাম রংতুলি। আঁকলাম কলকাতার সুন্দর রাস্তা, মধ্যিখানে গাছের সারি। ট্রাফিক সিগনাল। আর তার চারপাশে লাল লাল পিকের ছোপ। আমার ভালোবাসার শহরকে নোংরা করার ছবি। বলতে চাইলাম “হোক পতিবাদ”। যা ব্বাবা বন্ধুদের সে কী রাগ! বলে, বুদ্ধু ফের সেই ভুল করছিস? পানের পিক মেরুন কর না পারলে হলুদ কর। লালের ফোঁটা মানে সন্দেহ। দিলাম লালকে মেরুন করে।
বুদ্ধু আজ জীবনের এক বড় জিনিস শিখলো। যে রঙ দেখবে সেই রঙ আঁকবে না। রঙ বদলে দাও, ভালো থাকবে। বুদ্ধু ভাবে, ছবি আজ গৌণ, রঙ মুখ্য। হয় তুমি সাদা নয় কালো। বুদ্ধু এখন ভাবে চালাক লোকেরা কি কোনোদিনই বুঝবে না সব রঙ না মেলালে রামধনু আঁকা যায় না।
অপূর্ব