Differently abled বাচ্চাদের ক্লাস করি আমি| মজা করেই করি| বাচ্চারাও মজা পায়| দুপক্ষে মজা লোটালুটি করতে করতে কেমন এক মালার মত প্রীতি জন্মায়| ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরি যখন —তখন বিকেল হব হব| আমার কিন্তু তখনই মনে হয় –চাঁদ তো উঠে গেছে| অনেক চাঁদ আর চাঁদমালাটা দুলছে আমার বুকে| বুকে —বুকে|
বুকের সম্পর্কে ভুল হয় বোধহয় সবচেয়ে বেশি| বলুন? সেদিনও ভুল হল আমার| বেশি ভালোবাসতে গিয়ে ভালোবাসার অনর্থক এক প্রকাশ ঘটালাম| খুব খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম ভাই মেয়েটাকে| স্প্যাস্টিক — হাঁটাচলা করতে পারে না একেবারে| তবে জীবনকে খানিকটা বুঝতে পারে নিজের মতো করে| আর দেখুন আমি কী মূর্খ! এতকাল এই ধরনের বাচ্চাদের পড়িয়েও তাদের এই নিজের মতো করে বোঝাকে পাত্তাই দিলাম না| যেহেতু আমাদের মতো করে বোঝাবার ক্ষমতা নেই ওর ধরেই নিলাম –এ ব্যাটা কিছু বোঝে না| ফলে মেয়েটার সামনেই ওরই নিরাপত্তা নিয়ে ওর মায়ের সাথে আলোচনা শুরু করলাম|
খেয়াল করলাম না —ও শুনছে , ও দেখছে আমার একগাদা উদ্বেগ| কেবল নিজের ভালোবাসার ঘোরে মাথায় রইল না – এ মেয়ে ক্লাসে সবথেকে আদানপ্রদান করে আমার সাথে| মাথায় রইল না –পড়াতে পড়াতে আমি যেমন ওকে বুঝি ও বোঝে আমাকে| ম্লান হতে থাকা মুখটির দিয়ে একবারও না তাকিয়ে ওর মাকে বললাম –” আগামী দিনে আপনারা চলে গেলে কে দেখবে ওকে? এখুনি চেনাজানা একটি হোম ঠিক করুন|
এখানেই কি শেষ হল আমার over protective ভাবাবেগ? আরো পরামর্শের ঝোঁকে তৎক্ষণাৎ সাজিয়ে ফেললাম এক বিপদজনক বেদনার বাক্যবন্ধ| যা এই ধরণের অর্ধেক বোঝা শিশুর (Specially Spastic) মনে মুহূর্তে মারতে পারে রাক্ষুসে ঝাঁকুনি| মাকে বললাম –“আপনার গয়নাগুলো বিক্রি করে fixed করে ফেলুন টাকা্টা| ও তো আর গয়না পরবে না| টাকা থাকলে কাজে লাগবে| আপনার বালাগুলো বিয়ের দুটো বালা আছে বলছিলেন না? ওগুলো আগে বেচে দিন –সোনার দাম উঠেছে তো এখন| বলেই যাচ্ছি| থামছি আর না|
হঠাৎ —-কানের পাশে কে যেন গরম নিঃশ্বাস ফেলছে না?. চমকে চোখ ফেরাই| লম্বা পা বাড়িয়ে পিছন ঘষে ঘষেই কখন যেন আমার একদম কাছে চলে এসেছে সে| শুনতে শুনতে কেমন যেন শক্ত হয়ে উঠছে| কাঠ শুকনো চোখ বড় বড় দুটো গোল্লা হয়ে উঠেছে|
জোরে জোরে ঝাঁকাতে লাগল হাত| –“এতো শক্ত কেন রে তোর হাত? রোগা হাতের শিরাগুলো অব্দি ফুলে উঠেছে! যেন এখনি একগাদা ফেটে রক্ত বেরোবে! গয়নাহীন হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কী দেখছিস কী এত? কী ইইই?
চোখে তার জল নেই| বেঁকে আছে ঘাড়খানি| কী জানি ভাবতে লেগেছে সে| মনে হচ্ছিল এখন যদি দশটা ঘুষিও মারতে লাগি তাকে ঠিক অমনি করেই বেঁকে থাকবে সে| অমনি ঝুলেই থাকবে তার পুরু দুখানি ঠোঁট| অনর্গল থুতুতে ভিজবে আর ক্রমাগত নির্বাক হতে লাগবে|
ঠিক করিনি সেদিন| নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে গিয়ে নিরাপত্তার অভাবকেই ছড়িয়েছিলাম তার মধ্যে| একটু একটু করে| ঠিক যেমন মহামারীতে গজানো ক্লাব করুণা ঢালে খাদ্যহীনকে| এক পশলা ভিক্ষে —ফেসবুকে তার বেদম উল্লাস| ঘর ভেঙেছে সোন্দরবনে — নৌকায় গান গেয়ে চলেছে ত্রাণে| কে কত টাকা দিয়েছে নামসহ লিস্টি| পাশ আর ফেলের লিস্টির থেকেও গরম ভাপ দেয় খয়রাতের ফলাফল| –ঠিক ওমন| আমি শালা ওমনই ফালতু হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন| আমার করুণার ঢেউয়ে ভালোবাসা ভেসে চলে যাচ্ছিল রে| ওমা! আমি ঝপাং করে ধরি আগে|
থাক আমায় জড়িয়ে| লাল চুড়ি ছাড়া শুধু দুটো হাতে| এ যে আমার বিদ্যেধরের মালা গো| আর ছিঁড়ি কখনো?
ক্ষমা করে দিবি| ফটটাস ক্ষমা|
বড্ড স্পর্শকারতার